লিয়েন্ডার পেজ তাঁর সম্পর্কে বলেন, টিমে তিনি বাবার মতো। আবার মহেশ-সোমদেবরা তাঁকে দল থেকে হটাতে বদ্ধপরিকর। ভারতীয় ডেভিস কাপ দলের নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন শিবপ্রকাশ মিশ্র কোরিয়ার কাছে বিশ্রী হারের পর সেই রাতেই টিম হোটেল থেকে ফোনে সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজারকে।
প্রশ্ন: ক্যাপ্টেন হিসেবে বিদায়ী ম্যাচে বিশ্রী হার। এই বয়সে আরও বেশি কষ্ট দিচ্ছে নিশ্চয়ই আপনাকে?
এসপি: বিদায়ী ম্যাচ মানে? আমি তো জানি না! আমি এআইটিএ-র কাছে পদত্যাগপত্রও পাঠাইনি। ওরাও আমাকে সরিয়ে দেয়নি। তা হলে হঠাৎ বিদায়ের প্রশ্ন আসছে কোত্থেকে।
প্র: কিন্তু এই যে ভারতীয় দলেরই বেশির ভাগ প্লেয়ার আপনাকে নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেনের চেয়ার থেকে সরাতে চাইছে। এর পর ভাল কিছু করার মতো মানসিকতা থাকে কি?
এসপি: একশো ভাগ থাকে। দলটা ভারতের। আমিও ভারতীয়। নিজের কি খারাপ চাইব? নাকি, খারাপ কিছু করব? তা ছাড়া, এখন যারা দলে আছে তারা প্রত্যেকে আমাকে পছন্দ করে। আমার ক্যাপ্টেন্সিতে খেলতে ভালবাসে।
প্র: এঁদের মধ্যে একমাত্র লিয়েন্ডার পেজ বাদে ক’জন পুরো শক্তির ভারতীয় দলে সুযোগ পাবেন? সোমদেবরা দলে ফিরলেই তো রঞ্জিতরা ছিটকে যাবেন। তখনকার পরিস্থিতি নিয়ে ভেবেছেন কি?
এসপি: সে রকম কিছু পরিস্থিতি এলে তখন ভাবা যাবে। নিশ্চয়ই সম্মান নিয়েই কাজ করব। অপমান ঘাড়ে নিয়ে নয়। |
প্র: যাঁরা দেশের ডাকে সাড়া দিয়ে টেনিস বিশ্বের চোখে ভারতের মুখরক্ষা করলেন, তাঁদের পরের ম্যাচেই সরে যেতে হবে, তথাকথিত বড় প্লেয়াররা সব পেয়ে-টেয়ে গিয়ে খেলতে রাজি হলে। ব্যাপারটা দুঃখজনক নয় কি?
এসপি: স্কিল কম বলেই শেষ পর্যন্ত ওদের সরে দাঁড়াতে হবে, স্কিলে এগিয়ে থাকা প্লেয়ারদের জায়গা ছেড়ে দিয়ে। জিততে গেলে হাতে সেরা দল থাকতেই হবে। এখানে কোনও সেন্টিমেন্টের জায়গা নেই।
প্র: কিন্তু যখন সেই বেশি ভালরা আপনাকে যোগ্য সম্মান দেন না, অথচ তাঁদের চেয়ে কম ভালরা আপনাকে প্রাপ্য সম্মান দেন, তখনও কি জীবন দর্শন সেটাই ?
এসপি: জানেন, বিজয়ন্তকে এখানে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ভারতীয় দলে সমস্যা চলছে বলেই আপনি ডেভিস কাপে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তা হলে কি চান, সমস্যাটা থেকেই যাক? বিজয়ন্ত কী জবাব দেবে বুঝতেই পারছিল না। আমি ওকে মজা করে বললাম, কী রে, দে উত্তর! কিন্তু এখন আমিও বুঝে উঠতে পারছি না এই প্রশ্নের জবাবে কী বলব?
এটুকু তবে বলতে পারি যে, যত দিন নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন রয়েছি, আমার সঙ্গে একজন প্লেয়ারেরও কখনও কোনও সমস্যা তৈরি হয়নি। টিভি আর কাগজেই যত দেখি যে, বেশ কিছু প্লেয়ার আমাকে ক্যাপ্টেন হিসেবে চায় না। কিন্তু কোনও প্লেয়ার সামনাসামনি আজ পর্যন্ত বলেনি যে, আমাকে চায় না। আমার ক্যাপ্টেন্সি কোনও প্লেয়ারের অপছন্দ, বিশ্বাস করি না। কথাটা নিজের হৃদয় থেকে বলছি।
প্র: ডেভিস কাপ বিপর্যয়ের পরে ভারতীয় দলের জন্য টিম ক্যাপ্টেনের প্রেসক্রিপশন কী?
এসপি: পরের টাইতেই পুরো শক্তি নিয়ে নামো। দলের প্লেয়ারদের খেলার স্টাইলের পক্ষে সবচেয়ে মানানসই যে সারফেস, সেটাই বেছে সেই শহরে খেলো। দলে যার সঙ্গে যার যা-ই মতানৈক্য থাক না কেন, সব মাথা থেকে বার করে দিয়ে এককাট্টা হয়ে ওঠো। লকাররুম টু কোর্ট টু লকাররুম আমি বলে কিচ্ছু থাকবে না। শুধুই আমরা।
প্র: ভারতীয় টেনিসের বর্তমান সঙ্কট কি কোনও দিন দূর হওয়ার?
এসপি: সঙ্কট দূর তো হবেই এবং খুব তাড়াতাড়ি হবে। পরের ডেভিস কাপেই ভারতের প্রথম দল খেলবে। ঘটনা সে দিকেই এগোচ্ছে। মিলিয়ে নেবেন আমার কথা। |