মোহনবাগান- ৪ (ওডাফা, মণীশ, টোলগে, মেহরাজ)
এরিয়ান- ১ (মইদুল) |
বিন্দু বিন্দু হেঁটেই কি ডার্বির সিন্ধুতে পা রাখতে চাইছেন করিম বেঞ্চারিফা? উত্তর যাই হোক না কেন, সোমবার কলকাতা লিগের ম্যাচেই ৯ ফেব্রুয়ারির ‘ব্লু প্রিন্ট’ তৈরি করে ফেললেন মোহনবাগানের মরক্কান কোচ।
অবনমনের ‘ঘাট’ থেকে টোলগেদের পথ চলা শুরু সালগাওকরের কাছে ০-২ হার দিয়ে। আই লিগে পরপর দু’টো ড্র। আর তার পরেই সোজা জয়ের হাইওয়েতে। ঘরের মাঠে সন্তোষ কাশ্যপের দলকে চুরমার করার পর ময়দানের ‘জায়েন্ট কিলার’ রঘু নন্দীর এরিয়ানকেও উড়িয়ে দিল করিমচাচার দল। ফের যেন পুরনো বাগানের স্মৃতি ভেসে উঠছে। ‘মরার আগে মরব না’-র অসীম আত্মবিশ্বাসে ভরা। রাতারাতি মোহনবাগানে এমন কী ঘটল যে গোটা টিমের ‘বডি ল্যাঙ্গোয়েজ’ বদলে গেল? কিছুই না, একটা নাম-ই সব বদলে দিচ্ছে! ও-ডা-ফা। নাইজিরিয়ান গোলমেশিন যেন আরও পরিণত! আরও ভয়ঙ্কর!
প্রত্যাবর্তনের পরে মাত্র দু’টো ম্যাচ খেললেন। তাতেই ফুল ফুটতে শুরু করে দিয়েছে বাগানে। টোলগে ওজবে কিংবা রহিম নবির মতো বিদ্যুৎ-গতি না থাকলে কী হবে, ওডাফার চমকপ্রদ টার্নিংয়েই ছন্নছাড়া বিপক্ষ। চৌত্রিশ মিনিটে একক দক্ষতায় তিন জন ফুটবলারকে বোকা বানিয়ে নিখুঁত নিশানায় প্রথম গোল ওডাফার। বিরতির ঠিক আগে মণীশ ভার্গবকে দিয়ে করালেন আরও একটি। এরিয়ান কোচ রঘু বলছিলেন, “মোহনবাগানে তো একটাই ফুটবলার আছে। ওডাফা ওকোলি। ওকে তুলে নিলে আর কিছু নেই দলে।” |
শুরুর পঁয়তাল্লিশ মিনিট দেখলে রঘুর কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যেতে বাধ্য। মাঝমাঠে মণীশ আর কুইনটনের মধ্যে অটুট ‘বন্ধুত্ব’ এখনও গড়ে ওঠেনি। নিটফল, ওডাফা-টোলগেকে নীচে নেমে এসে বল তৈরি করতে হল। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা রক্ষণের। বাগানের দুই স্টপার মেহরাজ এবং খেলেম্বার মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব এতটাই যে এরিয়ানের ফুটবলাররা অবলীলায় তাণ্ডব চালালেন মোহনবাগানের ছয় গজের বক্সে। ম্যাচের শেষ দিকে মেহরাজ একটি গোল করলে কী হবে, বাগান রক্ষণে তিনি চূড়ান্ত ব্যর্থ। ম্যাচ শুরুর কুড়ি মিনিটের মধ্যেই ২-০ গোলে এগিয়ে যেতে পারত এরিয়ান। হয়নি দুই বঙ্গ সন্তান বিশ্বরূপ দেব এবং পঙ্কজ মৌলার ‘সৌজন্যে’। দু’জনেই শুরুতে দু’টো সিটার নষ্ট করেন। ইনজুরি টাইমে অবশ্য ভুল করেননি মইদুল।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য অন্য ছবি। ‘আসল’ মোহনবাগানকে খুঁজে পাওয়া গেল বিরতির পরেই। কুইনটন বাড়তি দায়িত্ব নিতেই মাঝমাঠের এলোমেলো ভাব ধুয়ে-মুছে সাফ। মণীশ ভার্গবের বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবল ও পাসিং দক্ষতা বেশ চোখে পড়ার মতো। ডার্বির মহাযুদ্ধে করিমের প্রথম দলে তাঁকে না দেখতে পেলেই বোধহয় অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার হবে। আর ওডাফাকে পাশে পেয়ে টোলগেও যেন ফুটছেন! টানা তিনটে ম্যাচে গোল করলেন। করিম বলছিলেন, “ডার্বির আগে এই জয় ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করবেই। এই ম্যাচে বেঞ্চের শক্তি দেখে নিতে চাইছিলাম। যাতে বড় ম্যাচে কম্বিনেশন তৈরি হয়।”
ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে বাগানের বড় পাওনা টোলগে-ওডাফা ‘বিস্ফোরক’ জুটি এবং অবশ্যই মণীশ ভার্গব। কিন্তু এরিয়ানের কী হল? কিছু দিন আগেই ট্রেভর মর্গ্যানের ‘হাইভোল্টেজ’ দলকে হারিয়ে যে কোচ ময়দানে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন, সেই রঘু নন্দীর টিম বাগানের সামনে পড়তেই কঙ্কাল বেরিয়ে গেল কেন? খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, এরিয়ানের দুই বিদেশি মাইকেল টায়ো এবং রিচার্ড শুরুতে খেলবেন বলেও শেষ মুহূর্তে ওয়াকআউট করে যান। রঘু বললেন, “দু’জনেই এয়ার ইন্ডিয়ায় চলে যাচ্ছে বলে ড্রেসিংরুমে পাওনা টাকা চাইতে এসেছিল। আমরা এই ম্যাচটা অন্তত খেলে যেতে বলেছিলাম। শোনেনি।”
মোহনবাগান: শিল্টন, আইবর (স্নেহাশিস), মেহরাজ, খেলেম্বা, রাজীব, রাকেশ, কুইনটন, মৈথানি, ভার্গব, টোলগে (সাবিথ), ওডাফা (ডেনসন)।
|
মঙ্গলবার কলকাতা লিগে
ইস্টবেঙ্গল-ইস্টার্ন রেল (কল্যাণী, ২-০০) |