এত দিন লোকের একটা ধারণা ছিল যে, ইতালিতেই ফুটবল ঘিরে সবচেয়ে বেশি গড়াপেটা হয়। কিন্তু সোমবারের ঘটনায় সব চিন্তাভাবনা ওলটপালট হয়ে গেল। ওয়েবসাইটে খবরটা পড়তে পড়তে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। সিঙ্গাপুর থেকে ইংল্যান্ড, জার্মানি থেকে হাঙ্গেরিগোটা ফুটবলবিশ্বে এ ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে গড়াপেটার জাল! ভাবাই যায় না। প্রায় চারশোটা ম্যাচ, প্লেয়ার-অফিশিয়াল মিলিয়ে খেলাটার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা চারশোর উপর মানুষ তদন্তের আওতায় সংখ্যাগুলো দেখে মনে হচ্ছিল ভুল পড়ছি না তো!
ফুটবলার এবং পরে কোচ হিসেবে ইউরোপীয় ফুটবলের সঙ্গে আমার প্রায় কুড়ি বছরের সম্পর্ক। বিশ্বাস করুন, এতগুলো বছরে কোনও দিন গড়াপেটা নিয়ে কোনও অভিজ্ঞতা হয়নি আমার। তবে যে কোনও খেলার সঙ্গেই গড়াপেটা কমবেশি জড়িয়ে থাকে। ফুটবলও ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু সেটা যে এই পর্যায়ে চলে গিয়েছে, ভাবতেই পারছি না।
একটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। নিজে ম্যাচটার সঙ্গে জড়িয়ে না থাকলেও ব্যাপারটা আমি জানি। ইংল্যান্ডের কোনও একটা ক্লাব ম্যাচে (ক্লাবগুলোর নাম আর বলছি না) বারবার ফ্লাডলাইট নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। এক বার জ্বলছে তো এক বার নিভছে। কিছুতেই ঠিক করা যাচ্ছে না। শেষমেশ কর্তৃপক্ষদের তরফ থেকে ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে দেওয়া হল। তখন ম্যাচের স্কোর লেভেল। পরে জানা গিয়েছিল, ওই ম্যাচটা ড্র হবে এই ফলাফলের উপর এশিয়ায় বিশাল অঙ্ক বেটিং করা হয়েছিল। আর বেটিং সিন্ডিকেটের লোকেরাই ফ্লাডলাইটটা বিগড়ে দিয়েছিল। এশিয়ার ওই বুকিরা সে দিন প্রচুর টাকা লাভ করেছিল। |
আসলে ফুটবল খেলায় গড়াপেটা হওয়া খুব স্বাভাবিক। কারণ ফুটবল বিশাল একটা ব্যবসা। কোটি কোটি টাকা জড়িয়ে থাকে এই খেলাটার সঙ্গে। ম্যাচের স্কোরলাইন কী হবেতা নিয়ে গড়াপেটা খুব একটা হয় না। কারণ ওটা করতে গেলে সেই দলের অন্তত পাঁচ-ছ’জন ফুটবলারকে রাজি থাকতে হবে। আর আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে একসঙ্গে এত জন এই কাজটা করতে পারে। যে জিনিসগুলো এক জন ফুটবলার দিয়েই হয়ে যায়, যেমন কর্নার বা পেনাল্টি, সেগুলো নিয়ে গড়াপেটা হয়।
তা হলে এটা কী ভাবে আটকানো যায়? আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমার উত্তর হবে ফুটবলে গড়াপেটা রোখা অসম্ভব। এটা এমন একটা রোগ যার কোনও ওষুধ নেই। কয়েকটা দেশে তো ফুটবলে বেটিংকে আইনসম্মত ভাবেই দেখা হয়। সেটা নিয়ে আমার কিছু বলারও নেই।
সমস্যাটা হয়, যখন অর্থের বিনিময়ে ফুটবলার বা রেফারি ম্যাচকে প্রভাবিত করতে শুরু করে। আসলে কী হয় জানেন, কোনও কোনও ক্ষেত্রে টাকার অঙ্কটা এত লোভনীয় হয় যে সেটা উপেক্ষা করা সম্ভব হয় না। সব ফুটবলার তো আর মেসি-রোনাল্ডোর মতো টাকা পায় না। সেকেন্ড, থার্ড ডিভিশনের ক্লাবের প্লেয়ারদের তাই গড়াপেটার জালে জড়িয়ে নেওয়া খুব কঠিন নয়।
ওয়েবসাইটে অবশ্য দেখছিলাম গত তিন-চার বছরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচেও নাকি গড়াপেটা হয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মানে ক্লাব বিশ্বের সেরা টুর্নামেন্ট। বিশ্বের সেরা ক্লাবগুলো যেখানে খেলে। ভাবতে প্রচণ্ড খারাপ লাগছে যে ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তরেও গড়াপেটা নামক সংক্রমণ ঢুকে গিয়েছে। কিন্তু ওই যে বললাম, এর কোনও ওষুধ নেই। আমরা শুধু একটা জিনিসের আশা করে যেতে পারি। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর খেলার সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলোর কাছ থেকে একটু সততা! |