গুলতি ছুড়ে চিতাবাঘ তাড়াল কিশোর
গুলি নয়। গুলতি। তার সঙ্গে যোগ হল সাহস এবং বন্ধুপ্রীতি। আর তাতেই মুখের গ্রাস ফেলে পালিয়ে গেল আস্ত একটি চিতাবাঘ। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেল এক কিশোর। গুলতির জোর অবশ্য বিলক্ষণ জানত রাজু এক্কা (নাম পরিবর্তিত)। তার টিপ অব্যর্থ, জোরও সাংঘাতিক। গাছের মগডালে বসে থাকা পাখিও গুলতির এক ঘায়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু চিতাবাঘও যে তাতে ঘায়েল হয়ে যেতে পারে, তা তার জানা ছিল না। রাজুর কথায় অবশ্য, “কোনও উপায় নাখ্খে।” অর্থাৎ আর কোনও উপায় ছিল না যে।রবিবার বিকেলে পড়ন্ত আলোয় তার বন্ধু শ্যাম ওঁরাও যে তখন চিতাবাঘের কবলে। ডুয়ার্সের মালবাজারের কাঠামবাড়ি জঙ্গল লাগোয়া কৈলাসপুর চা বাগানে কাঠকুটো কুড়োতে রোজকার মতো ঢুকেছিল তারা কয়েকজন বন্ধু।

আহত কিশোর।
—নিজস্ব চিত্র

এর মধ্যেই বছর চোদ্দর শ্যাম চলে যায় আর একটু ভিতরে। কিছু ক্ষণ পরে চিতাবাঘের চাপা গর্জন শুনতে পায় তারা। ছোট থেকে চা বাগানে, শব্দ শুনেই বুঝতে পেরেছিল, বাঘটি খুব দূরে নেই। প্রথমে তারা ছুট লাগায়। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যেই খেয়াল পড়ে, শ্যাম নেই। তাকে খুঁজতেই রাজু, বিশাল ওঁরাও ফের ফেরে। অস্ত্র বলতে ওই গুলতিই। তাই তাক করে এগোতে এগোতে শুনতে পায় শ্যামের পরিত্রাহী চিৎকার। দৌড়ে গিয়ে তারা দেখে চিতাবাঘটা শ্যামকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। তার থাবার আঘাতে শ্যামের শরীর রক্তাক্ত। তবে সে-ও সাহস হারায়নি। প্রাণপণে চিৎকার করছে আর চিতা বাঘটার মুখে ক্রমাগত ঘুসি মারছে। রাজু সঙ্গে সঙ্গে নিজের গুলতি থেকে ঝড়ের মতো চিতাবাঘটার দিকে পাথর ছুড়তে শুরু করে। প্রথমে একবার মেজাজ দেখালেও, অল্প ক্ষণের মধ্যেই চিতাবাঘটা শ্যামকে ছেড়ে দিয়ে আরও গভীর ঝোপের দিকে সরে যায়। রাজু আর বিশাল শ্যামকে চ্যাংদোলা করে ধরে ছুটে বেরিয়ে আসে বাগান থেকে। শ্যাম বলে, “হঠাৎই চিতাবাঘটার একেবারে মুখে পড়ে গিয়েছিলাম। চিতাবাঘটা তেড়ে এসে থাবা চালিয়ে দেয়। আমি এলোপাথাড়ি ঘুসি চালিয়েছি। তারপরেই রাজুরা গুলতি দিয়ে পাথর ছোড়ায় বাঘটা পালায়।” শ্যামকে মালবাজার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। তার গলা, মুখ ও পেটে জখম রয়েছে। মোট ৮টি সেলাই পড়েছে। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে চোখ দু’টি। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) বৃজরাজ শর্মা বলেন, “চিতাবাঘটি সম্ভবত অন্তঃসত্ত্বা ছিল। এই সময়ে চিতাবাঘেরা চা বাগানে এসে প্রসব করে। তবে ছেলেগুলি অসমসাহসী। চিতাবাঘটি যে তাদের কোনও বড় ক্ষতি করেনি, এটা খুবই সৌভাগ্যের কথা।” রাজু, বিশালরা অবশ্য এত দিন গুলতির জন্য বকুনি কম খায়নি। গুলতি ছুড়ে নানা পাখি মারে তারা। তাই নিয়ে বন দফতরের উদ্বেগও কম নয়। গুলতি দিয়ে পশুপাখি মারার প্রবণতা রোখার জন্য বন দফতর ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি নিয়মিত প্রচারও করে। তবু গুলতি রাজুদের নিত্যসঙ্গী। শ্যামের বাবা সুখা ওঁরাও বলেন, “গুলতি হাতে ঘোরে বলে অনেক বকেছি ওদের। কিন্তু এ দিন সেই গুলতিই বাঁচাল।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.