শহর-বন মিশে একাকার! কিন্তু কেন?
বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনের ব্যাখ্যা, “উত্তরবঙ্গে বসতি বাড়ছে। এ দিকে বন্যপ্রাণের সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু জঙ্গলের পরিধি তো একই রয়েছে। তাই লোকালয়ে হরিণ, চিতাবাঘ, গন্ডার, হাতি ঢুকে পড়ার সমস্যা দেখা দিয়েছে। জন্তুগুলিকে উদ্ধার করে জঙ্গলে ফিরিয়ে দেওয়ার বাইরে এই মুহুর্তে কিছু করার নেই।” উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) ব্রিজরাজ শর্মার গা বাঁচানো যুক্তি: “উত্তরবঙ্গের জঙ্গল আর চা বাগানের মাঝেই অজস্র বসতি। অনেক জায়গায় বন্য জন্তুর করিডর তাই কিছুটা লোকালয় ঘেঁষেই গিয়েছে। তা থেকেই ছিটকে কেউ কেউ লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।”
কিন্তু প্রশ্ন, এমন অনর্গল ও অনায়াস যাতায়াত তো বছর দুয়েক আগেও ছিল না?
বন দফতর সূত্রেই এর ব্যাখ্যা মিলেছে। বন দফতরের এক কর্তা স্পষ্ট বলেন, “কারণ খুঁজতে গেলে সেই রাজকোষে টানাটানির কথাই তুলে ধরতে হবে। এ ছাড়া আর উপায় কী!” তিনি জানান, একে অর্থাভাব, তায় নব্য ট্রেজারি বিধির আওতায় পড়ে জঙ্গলের ডিএও কিংবা রেঞ্জ অফিসারদের হাতে এখন আর টাকাই নেই। ফলে বনাঞ্চলে প্রহরা, বনে ফায়ার লাইন তৈরি পশু খাদ্য লাগানো সবই বন্ধ গত এক বছরে। বনের প্রহরার দায়িত্ব অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত স্থানীয় ফরেস্ট প্রোটেকশন কমিটির সদস্যরা। টাকা না পাওয়ায় তাঁদের আর প্রহরায় কাজে নিযুক্ত করা যাচ্ছে না। একই কারণে তৈরি করা যায়নি বনে নিরোধক ফায়ার লাইন তৈরির কাজ। শীত শেষে প্রায় জতুগৃহ হয়ে থাকা জঙ্গলে প্রায়ই আগুন লাগছে। আর হরিণ, চিতাবাঘের বাসস্থান, ঝোপঝাড় পুড়ে ছারখার হচ্ছে। বনের পশু আর সেখানে থাকবে কোথায়?এ দিন যেমন, দিনভর তিস্তা চর সংলগ্ন পশ্চিম প্রেমগঞ্জ এলাকায় একটি গন্ডার দাপিয়ে বেড়াল। সকালে মঙ্গলু মহম্মদ নামে প্রেমগঞ্জের এক চাষি তিস্তার চরে গরু চরাতে যান। ওই সময় গন্ডারটি তাঁকে পেছন দিক থেকে গুঁতো দিয়ে ফেলে দেয়। মঙ্গলু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। চিৎকার শুনে লোকজন ছুটে এলে বুনোটি দৌড়ে চর সংলগ্ন বসতি এলাকায় ঢুকে পড়ে। সেখানে বিশু মন্ডল নামে এক ব্যক্তির বাড়ির পাশে জলাশয়ে নেমে পড়ে। মঙ্গলুকে উদ্ধার করে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তিনি হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে বলেন, “হঠাৎ চরের ঘাস জঙ্গল থেকে একটি জন্তু আমার কোমরে পায়ে গুঁতো দেয়। মুখ ফেরাতে চরে দাঁড় করানো খড়ের বোঝা আমার উপরে পড়ে যায়। জন্তুটিও ঘাস জঙ্গলে চলে যায়।
এডিএফও শ্যামল চক্রবর্তী বুনোটিকে দেখার চেষ্টা করেন। কিন্তু ঘাস জঙ্গলের গভীরে শুয়ে থাকায় বিকেল পর্যন্ত পিঠ দেখা গেলেও পুরো চেহারা নজরে পড়েনি। পরে ফুলমতি, সূর্য ও শীলাবতী নামে বন বিভাগের তিনটি কুনকি এনে চিহ্নিত করার পাশাপাশি জঙ্গলে ফেরানোর চেষ্টা করা হয়। বনমন্ত্রী বলেন, “গন্ডারটিকে গরুমারায় ফেরানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি।” |