|
|
|
|
যৌন নির্যাতন আইন |
বিতর্কিত দিক নিয়ে আরও বিতর্ক চায় কেন্দ্র |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বৈবাহিক সম্পর্কে ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক কি ধর্ষণ? ধর্ষণের ক্ষেত্রে কি ১৬ বছর বয়স হলেই অভিযুক্তের প্রাপ্তবয়স্ক বলে বিচার হবে? সেনা জওয়ানের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে তার কি সাধারণ আইনে বিচার হবে? সামরিক বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইনের কি সংশোধন হবে? সিনেমা-বিজ্ঞাপনে মহিলাদের অশ্লীল ভাবে দেখানো নিয়েই বা কেন্দ্র কী করতে পারে? যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত হলেই কি রাজনৈতিক নেতাদের নির্বাচনে লড়ার নিষেধাজ্ঞা জারি হবে?
‘বিতর্কিত’ এই বিষয়গুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরও বিতর্ক চাইছে মনমোহন-সরকার। দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের প্রেক্ষিতে তড়িঘড়ি যৌন নির্যাতন রোধের অর্ডিন্যান্স জারি করেছে কেন্দ্র। কিন্তু নারী-আন্দোলনের কর্মীরা অভিযোগ তুলেছেন, এই অর্ডিন্যান্স যথেষ্ট নয়। বর্মা কমিটি সামগ্রিক ভাবে নারী-নির্যাতন সমস্যার সমাধানের কথা বলেছিল। তা নিয়ে মাথা ঘামায়নি কেন্দ্র। সরকারের তরফে আজ পি চিদম্বরম অবশ্য যুক্তি দিচ্ছেন, “বর্মা কমিটির কোনও সুপারিশই খারিজ করা হয়নি। কিন্তু কঠিন বিষয়গুলি নিয়ে সিদ্ধান্তের আগে আরও আলোচনা চাইছে কেন্দ্র।” প্রশ্নের জবাবে চিদম্বরম জানিয়েছেন, দিল্লি গণধর্ষণের মামলায় এই অর্ডিন্যান্স জারির আগেই শুরু হয়েছিল। তাই তা পুরনো আইন মেনেই হবে।
অর্ডিন্যান্সের পাশাপাশি মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ রুখতে এক গুচ্ছ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে মনমোহন সরকার। ঠিক হয়েছে, যে কোনও থানায় এফআইআর করা যাবে। পরে তা সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যৌন নির্যাতনের অপরাধীদের নামধাম, ছবি-সহ পৃথক তথ্যভাণ্ডার তৈরি হবে। ‘লেডিজ স্পেশ্যাল’ ট্রেনের মতো বাসও চালু হবে। পুলিশে আরও বেশি মহিলা নিয়োগের জন্য রাজ্যগুলিকে উৎসাহ দিতে কেন্দ্রীয় নীতি তৈরি হবে। মহিলাদের জন্য দেশ জুড়ে অভিন্ন ‘হেল্পলাইন’ চালু হবে। এই সব বিষয়ে কী অগ্রগতি হচ্ছে, তা প্রতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও ক্যাবিনেট সচিবকে জানাতে সব মন্ত্রককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাঠ্যক্রমে মূল্যবোধ শেখানো, ছাত্রীদের আত্মরক্ষায় মার্শাল আর্ট শেখানোও লাভজনক হতে পারে বলে মনে করছে কেন্দ্র।
দিল্লি গণধর্ষণের পরে প্রশ্ন উঠেছিল, সিনেমা-বিজ্ঞাপন কি ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনে উস্কানির কাজ করছে? কিন্তু এ নিয়ে কোনও অবস্থান নিলেই সমালোচনার মুখে পড়তে হবে বলে কেন্দ্রের আশঙ্কা। তাই আরও আলোচনার পথ নিচ্ছে তারা।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জে এস বর্মার সুপারিশ ছিল, কোনও স্ত্রী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে জোর করে শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগ তুললে তাকে আইনত ধর্ষণের তকমা দেওয়া হোক। কিন্তু অর্ডিন্যান্সে বলা হয়েছে, বিচ্ছেদের পরে এই ধরনের অভিযোগ উঠলে তবেই তাকে ধর্ষণ বলা যাবে। বর্মা কমিটি সুপারিশ করেছিল, সেনা জওয়ানদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে সাধারণ আইনে তার বিচার হোক। সামরিক বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা) প্রত্যাহার করা হোক। কোনও সেনা অফিসারের অধস্তন জওয়ান যৌন নির্যাতনে দোষী সাব্যস্ত হলে, সেই অফিসারের বিরুদ্ধেও মামলা হোক। চিদম্বরম জানিয়েছেন, নানা মতামত রয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন। অর্ডিন্যান্সটি যখন সংসদে পাশ হবে, তখনও এই বিষয়ে বিতর্ক হবে। তার পরে অর্ডিন্যান্সে বদল করে ধর্ষণ আইনকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে। আপাতত যে সব বিষয় মোটামুটি ঐকমত্য রয়েছে, সেগুলিই অর্ডিন্যান্সে গ্রহণ করা হয়েছে।
নারী আন্দোলন কর্মীরা কিন্তু সরকারের এই যুক্তি মানছে না। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী করুণা নন্দীর প্রশ্ন, “বর্মা কমিটি তো সকলের সঙ্গে কথা বলেই সুপারিশ জানিয়েছে। সরকারই সেই কমিটি গঠন করেছে। তা হলে এখন আবার ঐকমত্যের প্রশ্ন কেন?”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের যুক্তি, বৈবাহিক সম্পর্কে জোর খাটানোকে ধর্ষণের তকমা দিলে, মিথ্যে অভিযোগ ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। করুণার পাল্টা যুক্তি, “মিথ্যে মামলা সব ক্ষেত্রেই হতে পারে। সেই আশঙ্কায় আইন থমকে থাকতে পারে না। আমাদের সমাজে কোনও মহিলাকে এই অভিযোগ করতে গেলে তাঁর যথেষ্ট সাহস প্রয়োজন।”
একই ভাবে ধর্ষণের অপরাধে নাবালকত্বের বয়সসীমা ১৮ থেকে ১৬ বছরে কমিয়ে আনার প্রস্তাব থাকলেও মন্ত্রিসভা অর্ডিন্যান্সে গ্রহণ করেনি। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, শিশু-অধিকার আন্দোলনকারীদের আপত্তি রয়েছে। বর্মা কমিটিও এর বিরুদ্ধে। ভারত রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদে সই করেছে। চিদম্বরম বলেন, “যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে বয়সসীমা কমিয়ে আনলে অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে কী হবে, সেই প্রশ্ন উঠবে। দু’দিকেই বিপদ রয়েছে। আমাদের তাই সংবেদনশীল হয়ে ভাবতে হবে।”
সামরিক আইনের সংশোধনের বিষয়ে সেনাবাহিনীর ঘোর আপত্তি রয়েছে। সেনা-সূত্রের বক্তব্য, জম্মু-কাশ্মীর বা উত্তর-পূর্বে আফস্পা প্রত্যাহার করা হলে, তাঁদের পক্ষে সেখানে কাজ করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে ওই এলাকাগুলি থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেবেন সেনা কর্তারা। অধস্তন জওয়ান যৌন নির্যাতনে জড়িয়ে পড়লে অফিসারের কেন শাস্তি হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এক সেনা-কর্তা বলছেন, “একজন কম্যান্ডারের পক্ষে কি তাঁর বাহিনীর কে কোথায় কী করছে, সেদিকে নজর রাখা সম্ভব?”
চিদম্বরম জানিয়েছেন, শুধু এ সব ক্ষেত্রে নয়, ফাঁসির বিধান নিয়েও দু’ রকমের মতামত রয়েছে। অর্ডিন্যান্সে তাই শুধু ধর্ষণের ফলে মৃত্যু বা স্থায়ী ভাবে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার অপরাধে ও দ্বিতীয় বার যৌন নির্যাতনে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ফাঁসির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “বিরলতম ক্ষেত্রেই মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির যে নীতি সুপ্রিম কোর্ট নিয়েছে, তা এ ক্ষেত্রেও কাজ করবে।” |
নাবালকের সংজ্ঞা কী, খতিয়ে দেখতে চায় আদালত
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি |
নাবালক বিচার আইনে নাবালকের সংজ্ঞা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিল সুপ্রিম কোর্ট। ওই আইনে নাবালকের বয়সসীমা কমাতে শীর্ষ আদালতে আর্জি জানিয়েছেন দুই আইনজীবী।
দিল্লি গণধর্ষণের মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে এক জন নাবালক। কিন্তু গণধর্ষণের শিকার তরুণীর উপরে অত্যাচারে তার ভূমিকায় বিস্মিত হয়েছিলেন পুলিশ-কর্তারা। ওই ঘটনার পরে নাবালকের সংজ্ঞা নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়।
সোমবার শীর্ষ আদালতে পেশ হওয়া আর্জিতে আইনজীবী কমলকুমার পাণ্ডে ও সুকুমার জানিয়েছেন, নাবালক বিচার আইনের যে সব ধারায় নাবালকের সংজ্ঞা রয়েছে সেগুলি গ্রহণযোগ্য নয়। ওই ধারাগুলির সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। আবেদনকারীদের মতে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৮২ ও ৮৩ ধারায় নাবালকত্বের সংজ্ঞা অনেক স্পষ্ট। ৮২ ধারা অনুযায়ী, ৭ বছরের কম বয়সী কোনও শিশুর কোনও কাজই অপরাধ নয়। ৮৩ ধারা অনুযায়ী, ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী এবং কাজের গুরুত্ব বোঝার মতো পরিণত হয়নি এরকম ব্যক্তির কাজও অপরাধ নয়।
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাজি হয়েছে বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণন ও বিচারপতি দীপক মিশ্রের বেঞ্চ। নৃশংস অপরাধের ক্ষেত্রে নাবালককের বিচারও সাবালকের মতোই করা উচিত কি না তা ভেবে দেখা দরকার বলে মন্তব্য করেছে বেঞ্চ।
বয়সের প্রশ্নে কেন্দ্রের মত জানতে অ্যাটর্নি-জেনারেল জি ই বাহনবতীকে নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট। বাহনবতী বলেন, “জে এস বর্মা কমিটি এই বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে। কেন্দ্র এই মামলায় কোর্টকে সাহায্য করবে।” বিভিন্ন রাজ্য ও কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মতও শোনা উচিত বলে মন্তব্য করেন বাহনবতী। বেঞ্চ সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। ৩ এপ্রিল ফের শুনানি হবে। |
|
|
|
|
|