নার্সিংহোমে ভর্তি জখম যুবক
ছিনতাই করে ছেলেধরা অপবাদ দিয়ে গণপিটুনি
ছেলেধরা সন্দেহে মারধর এখন আর বেনজির ঘটনা নয়। কিন্তু কাউকে মারধর করে জিনিসপত্র ছিনতাইয়ের পরে তাঁকেই ‘ছেলেধরা’ অপবাদে ফের মারধরের এক নতুন প্রবণতা দেখল শহর। ঘটনাটি ধাপা এলাকার।
ছিনতাইবাজদের পাল্লায় পড়ে বেধড়ক মার খেয়ে খোয়া গিয়েছিল সোনার চেন, আংটি, মোবাইল এবং টাকাপয়সা। গুরুতর জখম সেই যুবক ব্রজেশ সিংহের কপালে জোটে ছেলেধরার অপবাদও। তার জেরে শুর হয় গণপিটুনি। যদিও সেই ‘ছেলেধরা’র পক্ষেই এখন এলাকাবাসীরা এককাট্টা। পাড়ার ‘নিরীহ’ ছেলে এ ভাবে অভিযুক্ত হওয়ায় তাঁরা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। দোষীদের শাস্তির দাবিতে থানায় অভিযোগ দায়ের করে ডেপুটেশন দিয়েছেন তাঁরা। আর গুরুতর জখম অবস্থায় ব্রজেশ ভর্তি আছেন পদ্মপুকুরের একটি নার্সিংহোমে।
গত ২৬ জানুয়ারি ভোরের ওই ঘটনার পরে বেশ কয়েক দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু নার্সিংহোমের শয্যায় আধশোয়া অবস্থায় সে দিনের ঘটনার কথা বলতে গিয়ে এখনও ব্রজেশের চোখে-মুখে আতঙ্ক। এখনও তাঁর মাথায় ব্যান্ডেজ বাধা। বাঁ হাতে ইঞ্জেকশনের চ্যানেল।
কী ঘটেছিল সে দিন?
ব্রজেশ জানান, বাইপাসেরই একটি পাঁচতারা হোটেলে তিনি নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। রাতের ডিউটি সেরে ভোরবেলা ধাপার উৎকলপাড়ায় বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। ব্রজেশ বলেন, “ধাপার কাছে এক নম্বর হাটগাছি মোড়ে একটি চায়ের দোকানের কাছে কয়েক জন যুবক দাঁড়িয়ে ছিল। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে হঠাৎ আমাকে ঘিরে ধরে আমার সোনার চেন, আংটি ও টাকাপয়সা চাইল ওরা। আমি দিতে অস্বীকার করতেই বেধড়ক মারধর শুরু করল।
ব্রজেশ সিংহ। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র
আমি চেঁচিয়ে উঠতেই ওরা ‘ছেলেধরা ছেলেধরা’ বলে চেঁচামেচি শুরু করে আরও মারধর করতে থাকে।”
চিৎকার-চেঁচামেচিতে ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে যান এলাকার লোকজন। স্থানীয় প্রগতি ময়দান থানার পুলিশ জানিয়েছে, কে ছেলেধরার দায়ে ধরা পড়েছে, সে সব না দেখেই এলাকার কয়েক জন ব্রজেশকে পেটাতে থাকেন। ঘটনাস্থলে এসে কোনও রকমে ওই যুবককে উদ্ধার করে প্রগতি ময়দান থানার পুলিশ। ততক্ষণে অবশ্য ওই অপরিচিত যুবকেরা গা-ঢাকা দিয়েছে। পুলিশ গুরুতর জখম অবস্থায় প্রথমে ব্রজেশকে নীলরতন সরকার হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার পরে তাঁকে সেখান থেকে পদ্মপুকুরের ওই নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে বেশ কিছু দিন আইসিসিইউ-তে থাকতে হয়। পরে পাড়ার লোকজন জানতে পারেন, ওই ‘ছেলেধরা’ আসলে পাড়ারই ছেলে ব্রজেশ।
ব্রজেশ যে ধাপার উৎকলপাড়ার এক জন সাধারণ নিরীহ যুবক, তা প্রাথমিক তদন্তের পরেই জানতে পারে পুলিশ। পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, নিরীহ যুবক বলে পরিচিত ব্রজেশ ছেলেধরা সন্দেহে মার খাওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সাত বছর ধরে ওই এলাকায় শোভাদেবী নামে এক বাসিন্দার বাড়িতে ভাড়া আছেন ব্রজেশ। তাঁর এক আত্মীয় শশিভূষণ ওঝা বলেন, “মাস কয়েক আগে ব্রজেশ বিয়ে করেছে। ওর পরিবার থাকে বিহারের ছাপরায়। হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পরে ও জানায় টাকাপয়সা, সোনার চেন, আংটি, মোবাইল সব খোয়া গিয়েছে।” ব্রজেশের বাড়িওয়ালা শোভাদেবী বলেন, “এই এলাকায় আসার পর থেকেই ব্রজেশ আমার বাড়িতে ভাড়া থাকে। ও কারও সাতে-পাঁচে থাকে না। নিরীহ একটা ছেলেকে এ ভাবে ছেলেধরা অপবাদ দিয়ে যারা মারধর করল, তাদের শাস্তি চাই।” এলাকার আর এক যুবক দীনেশ প্রসাদ বলেন, “ব্রজেশ ছেলেধরা অপবাদে মার খেয়েছে শুনে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় ও রাস্তায় পড়ে রয়েছে।” এলাকার বাসিন্দারা জানালেন, তাঁরা এ নিয়ে প্রগতি ময়দান থানায় গণ-ডেপুটেশনও দিয়ে এসেছেন। ওই থানার অফিসারেরা জানিয়েছেন, ব্রজেশকে গণপিটুনি ও সেই সঙ্গে তাঁর জিনিসপত্র ছিনতাইয়ের অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ব্রজেশের ছিনতাই হওয়া টাকা-পয়সা, চেন ও আংটি এখনও উদ্ধার হয়নি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.