ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষার সঙ্গে কিছু শিক্ষিকার গোলমালের জেরে বেনিয়াপুকুরের মিল্লি আল আমিন কলেজ থেকে পরীক্ষা কেন্দ্র সরিয়ে নিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। সোমবার এই ব্যাপারে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এ দিনই কলেজের প্রধান ফটকে মারামারিতে অভিযুক্ত তিন শিক্ষিকা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়, জারিনা খাতুন ও প্রবীণ কৌরের সাসপেনশন নোটিস সেঁটে দেওয়া হয়েছে। হাতে না-দিয়ে ওই নোটিস কলেজের ফটকে লাগানো হল কেন, তা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি, তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদের দাবি, অতীতে বিভিন্ন সময়ে ওই শিক্ষিকারা চিঠি নিতে অস্বীকার করেছেন। তাই এই ব্যবস্থা। পরে ডাক মারফত ওই তিন জনের কাছে চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
সোমবার সকালে ওই কলেজে ফের উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বৈশাখীদেবীর কথায়, “আমাদের কিছু জিনিস কলেজে রয়েছে। কিন্তু বহিরাগতদের সাহায্যে কর্তৃপক্ষ ভিতরে ঢুকতে বাধা দিচ্ছেন।” অভিযুক্ত শিক্ষিকারা পরে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। পরিচালন সমিতির দাবি, গোলমাল এড়াতেই এই ব্যবস্থা। এ দিন ক্লাস হয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য পরীক্ষার ব্যাপারে ঝুঁকি নিচ্ছে না। কাল, বুধবার বিএ, বিএসসি পার্ট ওয়ান সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। ওই কলেজে যে-সব পড়ুয়ার আসন ছিল, তাঁদের পরীক্ষা দিতে হবে শেঠ সুরজমল জালান কলেজে।
সাসপেন্ড হওয়া তিন শিক্ষিকার পাশে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (ওয়েবকুটা)। তাদের দাবি, তিন জনের উপর থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রত্যাহার করতে হবে। পদ থেকে সরাতে হবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষাকে। তিন শিক্ষিকাকে নিয়ে এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের কাছে স্মারকলিপি দেয় ওয়েবকুটা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ বলেন, “গেটে সাসপেনশনের নোটিস সেঁটে কলেজকে কারখানায় পরিণত করা হয়েছে।” তিন শিক্ষিকাকে নিয়ে আজ, মঙ্গলবার রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে যাবেন ওয়েবকুটা-র প্রতিনিধিরা। গত বৃহস্পতিবার তিন শিক্ষিকার পাশে দাঁড়ালেও এখন মুখে কুলুপ এঁটেছে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা।
আল আমিন কলেজে যা ঘটছে, তা দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জনবাবু। তিনি এ দিন বলেন, “শিক্ষিকাদের কাছে লিখিত ভাবে বিষয়টি জানতে চেয়েছি। ওই কলেজ সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠান। সব দিক দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সুরঞ্জনবাবু জানান, পরিচালন সমিতি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতেই পারে। কিন্তু সেটা করতে হয় পদ্ধতি মেনে।
৩১ জানুয়ারি ওই কলেজে কিছু শিক্ষিকা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে হাসপাতালে যান। পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে দু’পক্ষই। তার পরে তিন শিক্ষিকা এবং এক দারোয়ানকে সাসপেন্ড করা হয়। শো-কজ না-করে ওই শিক্ষিকাদের একেবারে সাসপেন্ড করা হল কেন? পরিচালন সমিতির সভাপতি সুলতান আহমেদ বলেন, “ওঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নিলে বাকিরা কলেজে আসবেন না বলে জানান। তাই কড়া ব্যবস্থা নিতেই হয়েছে।” |