সলমন রুশদির কলকাতা সফর বাতিলের ঘটনা ঘিরে তৃণমূল সরকারের মধ্যেই মতভেদের ছায়া। বিষয়টি নিয়ে সোমবার একেবারে ভিন্ন দু’টি মত প্রকাশ করেছেন রাজ্যের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও মদন মিত্র। কলকাতা বইমেলার এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত সুব্রতবাবুর বক্তব্যের সারার্থ, রুশদিকে কলকাতায় আসতে বারণ করে রাজ্য সরকার ঠিকই করেছে। আর মদনবাবুর দাবি, এ নিয়ে রাজ্য এখনও অবস্থান স্পষ্ট করেনি।
রুশদিকে কলকাতায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এক অনুষ্ঠানে। গত বুধবার তাঁর আসার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মূহূর্তে তাঁর সফর বাতিল হয়।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর: রুশদি কলকাতায় এলে ‘আইন-শৃঙ্খলা’ নিয়ে সমস্যা হবে বলে তাঁকে রাজ্যের তরফেই আসতে বারণ করা হয়। যদিও সরকার তা সরাসরি স্বীকার করেনি। শুরু হয় চাপান-উতোর। বিরোধী দল, বিদ্বজ্জন ও শিল্পী-মহল প্রকাশ্যে সমালোচনায় সরব হয়। রুশদিকে সত্যিই আসতে বারণ করা হয়েছে কি না, গত শুক্রবার পর্যন্ত এ নিয়ে রাজ্যের অবস্থান জানা যায়নি। শেষে স্বয়ং রুশদি শুক্রবার অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই তাঁকে কলকাতায় আসতে দেওয়া হয়নি। শনিবার তৃণমূল সাংসদ তথা রাজ্য সরকারের সংখ্যালঘু দফতরের উপদেষ্টা সুলতান আহমেদ আরও পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন, রুশদিকে কলকাতায় আসতে না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের তরফেই নেওয়া হয়েছে। “আমরা পুলিশকে বলেছিলাম, রুশদিকে শহরে আসতে দেবেন না। উনি শহরে এলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হবে। যেমনটা হয়েছিল তসলিমা নাসরিনকে ঘিরে।” সে দিন বলেছিলেন সুলতান। সিদ্ধান্তের জন্য রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদও জানান তিনি।
এতে সরকার স্পষ্টতই অস্বস্তিতে পড়ে যায়। সম্ভবত তা কাটাতেই এ দিন বইমেলায় এক অনুষ্ঠানের পরে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “সুলতান কী বলেছেন, জানি না। তিনি সাংসদ। কিন্তু সরকারি স্তরে এ নিয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করেননি। রাজ্য সরকারের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।” অর্থাৎ সুলতানের বক্তব্যকে রাজ্য সরকার যে অনুমোদন দিচ্ছে না, মদনবাবু এ দিন ঠারেঠোরে তা-ই বোঝাতে চেয়েছেন বলে প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের ধারণা।
রুশদি প্রসঙ্গে রাজ্যের ‘অবস্থান’ অবশ্য চাঁচাছোলা ভাষায় জানিয়েছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রতবাবু। বইমেলায় অনুষ্ঠানটিতে তিনিও উপস্থিত ছিলেন। রুশদিকে আসতে না-দেওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হল কি না, সুব্রতবাবুর কাছে তা জানতে চাওয়া হলে প্রবীণ ওই রাজনীতিক বলেন, “ভাব ও মূর্তি দু’টিই ঠিক আছে। সুলতান তো আমাদের কথাই বলেছে।” অর্থাৎ, সুলতান আহমেদ রাজ্যের বক্তব্যই পেশ করেছেন বলে সুব্রতবাবুর দাবি। রাজ্যের দুই মন্ত্রীর এ হেন দুই ভিন্ন মন্তব্যে সরকার ফের অস্বস্তিতে পড়তে পারে বলে প্রশাসনের একটি মহল মনে করছে। মদনবাবু যেখানে সুলতানের বক্তব্যকে সমর্থন করেননি, সেখানে সুব্রতবাবু উল্টো সুর কেন গাইলেন, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। |