|
|
|
|
প্রাথমিক স্কুলে ‘নিয়োগ’, জানা নেই সংসদেরই |
কেদারনাথ ভট্টাচার্য • কালনা |
কর্মসংস্থান কেন্দ্র বলছে, ১৭ বছর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের নিয়োগপত্র পেয়ে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ বলছে, তারা এমন কোনও নিয়োগপত্রই পাঠায়নি। দুই দফতরের এমন টানাপোড়েনে ধন্দে পড়েছেন পূর্বস্থলীর নাদনঘাটের মোর্তেজ আলি মণ্ডল।
পঁচিশ বছর আগে নাম নথিভুক্ত করালেও চাকরির ডাক পাননি বছর সাতচল্লিশের মোর্তেজ। গত নভেম্বরে ফের কার্ড নবীকরণের জন্য কর্মসংস্থান কেন্দ্রে গিয়ে জানতে পারেন, তিনি প্রাথমিক স্কুলে নিযুক্ত হয়েছেন বলে তথ্য রয়েছে। তার পরেই তথ্য জানার অধিকার আইনে বিষয়টি জানতে চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দ্বারস্থ হন তিনি। সেখান থেকে চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়, জেলায় ওই নামে কাউকে নিয়োগপত্রই দেওয়া হয়নি। মোর্তেজ বলেন, “দুই দফতর বিপরীত তথ্য জানাচ্ছে। তাই আদালতে যাওয়ার
মোর্তেজ আলি।
—নিজস্ব চিত্র।
|
কথা ভাবছি।” কালনা কর্মসংস্থান কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে মোর্তেজ নাম নথিভুক্ত করান। কার্ড নম্বর কেএল ৩২৮৯/৮৭/৮৫। গত ২১ নভেম্বর কার্ড নবীকরণ ও ওবিসি শংসাপত্র নথিভুক্ত করতে যান তিনি। মোর্তেজ জানান, কেন্দ্রের এক আধিকারিক শংসাপত্র নথিভুক্ত করতে গিয়ে দেখেন, ১৯৯৬ সালেই তাঁর নামে চাকরির নিয়োগপত্র চলে গিয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। মোর্তেজ বলেন, “ওই আধিকারিক আমার কাছে জানতে চান, কেন তার পরেও আমি সময়ে সময়ে কার্ড নবীকরণ করাচ্ছি। প্রথমে মনে হয়েছিল, তিনি বোধহয় আমার সঙ্গে রসিকতা করছেন। পরে গোলমালটা বুঝতে পারি।” মোর্তেজ জানান, ঠিক কী ঘটেছে তা জানতে এর পরে তিনি ওই কেন্দ্রের মুখ্য আধিকারিক সুজয় দেবের কাছে লিখিত আবেদন করেন। তাঁর দাবি, সঞ্জয়বাবু তাঁকে জানান, আগে সরকারি দফতরে শূন্যপদ পূরণের জন্য তাঁদের কেন্দ্রের কার্ড থাকা তরুণ-তরুণীদের সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হত। যাঁরা চাকরির নিয়োগপত্র পেতেন, তাঁদের নাম সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে কর্মসংস্থান কেন্দ্রকে জানিয়ে দেওয়া হত। মোর্তেজের অভিযোগ, “আমাকে জানানো হয়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ ১৯৯৬-এর ৮ ফেব্রুয়ারি কালনার ওই কেন্দ্রকে জানিয়েছে, তারা না কি নিয়োগপত্র পাঠিয়েছে। সেই পত্রের সিরিয়াল নম্বর ৪০। ফর্ম নম্বর ৪৮০।” কিন্তু ১৯৯৬ সালের পরেও যখন মোর্তেজ কার্ড পুনর্নবীকরণ করান তখন কেন বিষয়টি ধরা পড়ল না, তার কোনও সদুত্তর কর্মসংসস্থান কেন্দ্র থেকে মেলেনি। সুজয়বাবু বলেন, “বিষয়টি আমাদেরও অস্বাভাবিক লেগেছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে চিঠি পাঠিয়েছি।” তথ্য জানার অধিকার আইনে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে চিঠি পাঠিয়েছিলেন মোর্তেজও। তার উত্তরে গত ৯ জানুয়ারি সংসদ সভাপতি দেবাশিস নাগ তাঁকে জানান, বিষয়টি তাদের এক্তিয়ারভুক্ত নয়। এ ব্যাপারে যা জানানোর কর্মসংস্থান কেন্দ্রই জানাবে।
এর পরে ৩০ জানুয়ারি সংসদ থেকে ফের চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়, মোর্তেজের নামে কোনও নিয়োগপত্র তারা পাঠায়নি। এ ব্যাপারে মোর্তেজের কাছে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকলে তা সংসদে পাঠাতে বলা হয়। প্রাথমিক সংসদের সভাপতি দেবাশিসবাবুর দাবি বলেন, “ওই নামে কেউ জেলায় প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করছেন, এমন তথ্য সংসদে নেই। কী ভাবে কর্মসংস্থান কেন্দ্রে এ রকম তথ্য গেল, তা জানি না। হয়তো ভুলবশত কিছু হয়েছে।” মোর্তেজের ক্ষোভ, “দুই দফতর পরস্পরের দিকে আঙুল তুলছে। বোঝা যাচ্ছে না, চাকরিটা সত্যিই আমি পেয়েছিলাম কি না। যদি পেয়ে থাকি, তবে এত দিনেও নিয়োগপত্র পেলাম না কেন? আমার নাম ভাঁড়িয়ে অন্য কেউ চাকরি করছে কি না, সে প্রশ্নও মাথায় আসছে। এ সবের উত্তর পেতে হয়তো শেষ পর্যন্ত আদালতেরই দ্বারস্থ হতে হবে।” |
|
|
|
|
|