বছরের পর বছর ঘুরলেও সপ্তগ্রাম-ত্রিবেণী-কালনা-কাটোয়া (এসটিকেকে) রোডের পূর্বস্থলীর ছাতনি থেকে কাটোয়া পর্যন্ত অংশের কোনও বদল নেই। ১৯ কিলোমিটার রাস্তার বেশিরভাগ জায়গায় তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। রাস্তার পাথর উঠে গিয়ে ঝামার টুকরোও বেরিয়ে পড়েছে। অধিকাংশ দিনই মালবাহী গাড়ি খারাপ হয়ে পড়ে থাকে রাস্তার অর্ধেক জুড়ে, বাসের যন্ত্রাংশও প্রায়ই খারাপ হয়ে পড়ে। তাই শেষ নেই যাত্রীদের নিত্যদিন ধুলো মেখে যাতায়াতেরও। কারণ বর্ধমান এবং নদিয়া দুই জেলার একটা বড় অংশের যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ এই এসটিকেকে রোড। তাই বাস-ব্যবসায়ী থেকে যাত্রী, স্থানীয় বাসিন্দা থেকে মোটরবাইক আরোহী সবার একটাই প্রশ্ন, রাস্তার হাল ফিরবে কবে?
প্রশ্নের সদুত্তর নেই পূর্ত দফতরের কাছে। প্রতিবারের মতো আবারও আশ্বাস দিয়েছেন তারা। জানিয়েছেন, এপ্রিল মাস থেকে রাস্তার সংস্কার শুরু হতে পারে। পূর্ত দফতরের কাটোয়া বিভাগের সহকারী বাস্তুকার কৃষ্ণেন্দু দাশগুপ্ত বলেন, “টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।” কিন্তু পূর্ত দফতরের আশ্বাসে যে চিড়ে ভিজবে না তা পরিস্কার হয়ে গিয়েছে বাস-ব্যবসায়ীদের কথায়। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ কাটোয়ার বাস-ব্যবসায়ীরা। |
রাস্তা সংস্কারের দাবিতে এর আগে কাটোয়ার বাস মালিক সমিতি তিন বার বাস ধর্মঘটও ডেকেছিল। পরে অবশ্য এসডিও (কাটোয়া)-র আশ্বাসে এবং কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে বাস ধর্মঘট উঠে যায়। আইএনটিইউসি প্রভাবিত কাটোয়া বাস মালিক সমিতির নেতা নারায়ণচন্দ্র সেন বলেন, “মহকুমাশাসককে রাস্তা সংস্কারের ব্যাপারে জানিয়েছি। রাস্তা বাস চলাচলের উপযুক্ত না হলে ফের বাস বন্ধ রাখতে বাধ্য হব, কারণ প্রায়ই বাসের যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।” এসটিকেকে রোডের উপর দিয়ে কৃষ্ণনগর, নবদ্বীপ, মেমারি, রানাঘাট, মন্তেশ্বর রুটের বাস ছাড়াও বীরভূমের বালি, পাথর, কলকাতা পর্যন্ত যাতায়াত করে। পূর্ত দফতরের (রাস্তা) হিসেব, ওই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ছোট-বড় মিলিয়ে হাজারের উপর গাড়ি যাতায়াত করে।
কাটোয়ার টিকরখাঁজি গ্রামের সাইনা বিবি অথবা দাঁইহাট মোড়ের রতন দাসরা বলেন, “ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাওয়া মানেই আমাদের ধুলো খাওয়া।” নিয়মিত মোটরবাইক নিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন কাটোয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা গৌতম ঘোষাল। তিনি বলেন, “একে রাস্তার অবস্থা খারাপ। তার উপর সারাটা রাস্তা ধুলো মাখতে হয়। তাই বেশিরভাগ মোটরবাইক আরোহী এখন দাঁইহাট শহরের ভিতর দিয়ে কাটোয়া যাতায়াত করেন।” বাসের নিত্যযাত্রী অমিত দাস, বুলবুল সাহাদের কথায়, “রাস্তার অনেক জায়গার পিচ উঠে গিয়েছে। ভয়ে এখন আর কেউ বাসে ওঠেনা। কিন্তু আমাদের একপ্রকার বাধ্য হয়ে যাতায়াত করতে হয়। এ এক নিত্যদিনের নরক যন্ত্রণা।”
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিগত বাম সরকারের আমলে ১৬ কোটি টাকা খরচ করে ওই রাস্তা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিল পূর্ত দফতর (রাস্তা)। রাজ্যে সরকারের পরিবর্তনের পর ফের এসটিকেকে রোড সংস্কারের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়। এ বার খরচ ধরা হয় ৩১ কোটি টাকা। পূর্ত দফতরের (রাস্তা) বর্ধমান ৩ ডিভিশনের এক আধিকারিকের কথায়, “জলাশয় বুজিয়ে ওই রাস্তা তৈরি হয়েছিল।এলাকার মাটি শক্ত নয় বলে রাস্তা বসে গিয়ে চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।” তবে এসটিকেকে রোডের রামদাসপুর গ্রামের কাছে ৫ কিলোমিটার, গড়াগাছা মোড় থেকে বড়ডাঙা পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এবং দাঁইহাট মোড় থেকে টিকরখাঁজি পর্যন্ত ২ কিলোমিটার, মোট ৯ কিলোমিটার রাস্তা খুঁড়ে মাটি তুলে দিয়ে বালি দিয়ে বোজানো হবে তারপরে রাস্তা তৈরি হবে বলে পূর্ত দফতর জানিয়েছে। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “আশা করি, খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে। টাকার অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে। এ বার সমস্যা মিটে যাবে।” |