সরলো রক্ষী, আশঙ্কা জেসপ নিয়ে
দেনায় জর্জরিত দুর্গাপুরে জেসপ কারখানা থেকে নিরাপত্তারক্ষীরা সরে গিয়েছেন। পুলিশ কিছুটা পাহারা দিলেও অনিশ্চিত কারখানার সুরক্ষা। রুইয়া গোষ্ঠীর হাতে থাকা এই কারখানায় জল ও বিদ্যুতের বিল বাকি থাকায় সংযোগ ছিন্ন করে দিয়েছে দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড (ডিপিএল)। যে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল তাদেরও পাওনা রয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা। শুক্রবার থেকেই তারা রক্ষী সরিয়ে নিতে শুরু করে। শনিবারের মধ্যে সব নিরাপত্তারক্ষী চলে গিয়েছেন। কার্যত অরক্ষিত কারখানায় সম্পত্তি লুঠপাটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে রুগ্ণ কারখানা থেকে রক্ষী সরে যাওয়া এবং তার জেরে যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যাওয়ার ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। সম্প্রতি এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ এমএএমসি কারখানা। কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফ সরে যাওয়ার পরে সেখানে ব্যাপক চুরিচামারি হয়। এ বার জেসপ থেকে রক্ষী সরে যাওয়ায় শুধু নিরাপত্তাই নয়, কারখানা আর কখনও খুলবে কি না তা নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। দুর্গাপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের (এডিডিএ) চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আজ, মঙ্গলবারই তিনি শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টির সুরাহা চাইবেন।
অনিশ্চিত ভবিষ্যত।—নিজস্ব চিত্র।
দুর্গাপুরে জেসপ কারখানা চালু হয়েছিল ১৯৫৮ সালে। ফাউন্ড্রি, ক্রেন, রেলের বগি, রোলার তৈরি হত। প্রায় সাড়ে চার হাজার কর্মী ছিলেন। ১৯৭১ সালে কারখানাটি অধিগ্রহণ করে ভারী শিল্প মন্ত্রক। কিন্তু বিভিন্ন কারণে নয়ের দশকের গোড়া থেকে সেটি রুগ্ণ হতে শুরু করে এবং ১৯৯৯ সালে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। চার বছর বন্ধ থাকার পরে ২০০৩ সালে প্ল্যান্ট সমেত কারখানার ১১৭ একর জমি ১৮ কোটি টাকায় কিনে নেয় রুইয়া গোষ্ঠী। প্রতিশ্রুতি ছিল, সেখানে রেলের বগি এবং কাপলিং তৈরি করা হবে। কিন্তু আজও তা হয়নি।এর মধ্যে অবশ্য কারখানা নতুন করে চালু হওয়ার খবরে ভবিষ্যৎ কর্মী নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যে মারামারি হয়েছে। ২০০৮ সালে রুইয়া গোষ্ঠী এডিডিএ-র কাছে কারখানার জমির চরিত্র বদলের আর্জি জানায়। তাদের বক্তব্য ছিল, জমির একাংশে আবাসন প্রকল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক গড়া হবে। কিন্তু পত্রপাঠ সে আর্জি বোর্ড সভায় খারিজ করে দেয় এডিডিএ। প্রথম থেকেই কারখানার গাছ ও যন্ত্রাংশ চুরির অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে তা আটকাতে সদর্থক ভূমিকা না নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। যদিও কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছেন। কয়েক মাসের মধ্যে উৎপাদন শুরুর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন বেশ কয়েক বার। এই ভাবে কেটে গিয়েছে ন’বছর। ইতিমধ্যে দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ ও জলের বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ ছিন্ন করে দিয়েছে ডিপিএল।
সিটু নেতা তথা দুর্গাপুরের প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী বলেন, “অনেক আশা নিয়ে রুইয়া গোষ্ঠীর হাতে কারখানা তুলে দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় প্রশাসন থেকে তৎকালীন রাজ্য সরকার, সবাই তাঁদের পাশে ছিলেন। কিন্তু কারখানা খোলার ব্যাপারে কোনও সদর্থক চিহ্ন নজরে আসেনি।” তাঁর দাবি, বিধায়ক থাকাকালীন একাধিক বার তিনি সংস্থার কর্ণধার পবন রুইয়াকে চিঠি দিয়েছিলেন। পবনবাবু করে কারখানা খোলার আশ্বাসও দেন।বিপ্রেন্দুবাবুর দাবি, “২০০৮ সালের নভেম্বরে কারখানায় উৎপাদন শুরু হবে বলে চিঠি দিয়েছিলেন পবনবাবু। কিন্তু কোথায় কি!” তৃণমূল কাউন্সিলর তথা আইএনটিটিইউসি নেতা বিশ্বনাথ পাড়িয়াল বলেন, “খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা পায়। তারা আর ঝুঁকি নিতে চাইছে না।”
সোমবার কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, রক্ষীদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা ফাঁকা। জনমানুষের চিহ্ন নেই। কোক ওভেন থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, এমনিতে কারখানা চত্বরে পুলিশ টহল দেয়। তবে নিরাপত্তারক্ষীরা চলে যাওয়ার পরে পাহারা বাড়ানোর জন্য এখনও কোনও নির্দেশ আসেনি। রুইয়া গোষ্ঠীর কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.