বেনাচিতিতে লুঠপাট হওয়া বেসরকারি আর্থিক সংস্থায় সোনা ফেরতের দাবিতে সোমবার দিনভর বিক্ষোভ দেখালেন গ্রাহকেরা। অবিলম্বে তাঁদের জমা রাখা সোনা ফেরত অথবা বাজারদর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের দাবি জানান তাঁরা। সংস্থা কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য জানানো হয়, পদ্ধতিগত প্রক্রিয়ার কারণে কিছু সময় লাগবে। কর্তৃপক্ষ খাদ হিসেবে কিছু ওজন বাদি দিয়ে সোনার দাম ফেরত দেওয়ার কথা জানালে গ্রাহকেরা প্রতিবাদ জানান। এ দিনই কলকাতা থেকে লুঠের ঘটনার তদন্তে আসে সিআইডি-র পাঁচ সদস্যের একটি দল।
শুক্রবার দিনের আলোয় ওই বেসরকারি আর্থিক সংস্থার অফিস থেকে সোনার গয়না ও টাকা লুঠ হয়। সোমবার অফিস খুলতেই ভিড় জমান গ্রাহকেরা। নিরাপত্তাকর্মী অবশ্য এক সঙ্গে দশ জনের বেশি লোককে ঢুকতে দেননি। ভিতরে ছিল আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন ও পুলিশ। অফিসের লোকজনের সঙ্গে গ্রাহকদের তর্ক-বিতর্ক বাধে। বাইরে অপেক্ষায় থাকা গ্রাহকেরাও ভিতরে ঢোকার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। |
এ দিন অফিসের সামনে জড়ো হওয়া গ্রাহকদের অনেকে অভিযোগ করেন, লুঠের ঘটনার পিছনে সংস্থারই এক বা একাধিক লোকের হাত থাকতে পারে। ভারী গয়না নিয়ে গেলেও দুষ্কৃতীরা হাল্কা গয়না না নিয়ে যাওয়ায় এমন সন্দেহ করছেন বলে তাঁদের দাবি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহকের প্রশ্ন, “ডাকাতির সময়ে দুষ্কৃতীরা কী বেছে বেছে জিনিস নিয়ে যেতে পারে?” ইন্দ্রনীল সুর নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি সাড়ে ৭৪ গ্রাম সোনায় গয়না জমা রেখে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, “আমি টাকা ফেরত দিতে চাই। আমাকে গয়না ফেরত দেওয়া হোক।” এ কথা বলতে গেলে সংস্থার কর্মী ও আধিকারিকেরা দুর্বব্যহার করেছেন বলেও তাঁর অভিযোগ। তাঁর মতোই গয়না ফেরানোর দাবি নিয়ে এ দিন জড়ো হয়েছিলেন লিপি বসু, সুরেশ ঘোষেরা।
সংস্থার রিজিওন্যাল ম্যানেজার সুরেশ কুমার অবশ্য জানান, লুঠ হওয়া গয়নার বাজারদর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ গ্রাহকদের অবশ্যই দিয়ে দেওয়া হবে। তবে এখনই তা সম্ভব নয়। পদ্ধতি মেনে প্রক্রিয়া সারতে সময় লাগবে। তবে তিনি খাদ হিসেবে সোনার কিছু পরিমাণ বাদ যাবে জানানোয় ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রাহকেরা। গ্রাহকদের বিক্ষোভের মধ্যেই গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন তদন্তের কাজ করেন। পরে সিআইডি-র এক আধিকারিক জানান, এই অফিসে বিপদঘণ্টির ৭টি স্যুইচ রয়েছে। তবু কোনও কর্মী তা বাজাননি। চন্দননগরে জানুয়ারিতে এই সংস্থার অফিসেও দুষ্কৃতীরা হানা দিয়েছিল। কিন্তু এক কর্মী বিপদঘণ্টি বাজালে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। তিনি বলেন, “কেন এখানে কর্মীরা তা করলেন না, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।” তা ছাড়া প্রায় ৭৫ কিলোগ্রাম সোনার গয়না ও মুদ্রা পাহারা দিতে মাত্র এক জন বন্ধুকধারী প্রহরী ছিলেন কেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। সংস্থারই কাউকে সন্দেহ করা হচ্ছে কি না, সে প্রশ্নে সিআইডি-র ওই আধিকারিক বলেন, “সব দিক খোলা রেখেই তদন্ত চলছে।” সংস্থার কর্মীদের কাছে দুষ্কৃতীদের বর্ণনা শুনে ছবি আঁকার কাজ চলছে বলে জানান সিআইডি-র আর এক আধিকারিক। |