দলত্যাগী চেয়ারম্যান নান্টু পালকে আজ, সোমবার-এর মধ্যে বিশেষ অধিবেশন ডাকার দিনক্ষণ ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সে ব্যাপারে চেয়ারম্যান তাঁর মতামত জানানোর আগে ওই দিন শিলিগুড়ি পুরসভায় তৃণমূলের কাউন্সিলরদের নিয়ে সভা ডাকা হয়েছে। তার পরেই চেয়ারম্যান তার সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে ঠিক হয়েছে। চেয়ারম্যান দিনক্ষণ জানালে পুর কমিশনার তা ঘোষণা করবেন।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি গৌতম দেব বলেন, ‘‘ওই বৈঠকে কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনার পরই এ ব্যাপারে কিছু বলা সম্ভব হবে। বিষয়টি নিয়ে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মুকুল রায়ের সঙ্গেও কথা হয়েছে।” কংগ্রেস এবং বামেরা যে কোনও মূল্যে চেয়ারম্যান নান্টু পালের অপসারণ চাইছেন। চেয়ারম্যান নান্টুবাবু জানান, দলের কাউন্সিলরদের সঙ্গে সোমবার বৈঠক রয়েছে। তাঁর পরেই তিনি নিজের মতামত জানাবেন।
নান্টুবাবুর সামনে দুটি রাস্তা। এক তিনি তলবি সভা ডাকবেন। অন্যথায় পদ থেকে সরে দাঁড়াবেন। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের মত, তলবি সভা ডাকাই নান্টুবাবুর পক্ষে সঠিক। কেন না তাতে কংগ্রেস-সিপিএম কাউন্সিলররা উভয়েই নান্টুবাবুর বিপক্ষে গেলে তাদের মধ্যে আঁতাত রয়েছে বলে বাসিন্দাদের কাছে তৃণমূল তুলে ধরতে পারবে। পরে ফের নান্টুবাবুকে যদি তৃণমূল চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করে সে ক্ষেত্রেও এমন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া মেয়র, ডেপুটি মেয়র, চেয়ারম্যান এবং মেয়র পারিষদ মিলিয়ে ১০ টি পদ রয়েছে। কংগ্রেস তৃণমূল জোটের বোর্ড গঠনের সময় উভয়েই ৫ টি করে পদ নেয়। কিন্তু চেয়ারম্যান তৃণমূলের যোগ দেওয়ায় বর্তমানে ৬ টি পদ রয়েছে তাদের অধীনে। সে কারণে কংগ্রেস একটি পদের দাবিও তুলেছে।
কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার বলেন, “দলত্যাগী চেয়ারম্যানের পদত্যাগ আমরা বরাবরই চেয়েছি। এখনও চাই। এ ব্যাপারে আমরাও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।”
গত সেপ্টেম্বর মাসে চেয়ারম্যান কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর নৈতিক ভাবে তাঁর ওই পদ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত বলে দাবি করে কংগ্রেস এবং বামেরা। চেয়ারম্যান পদত্যাগ না করলে বিরোধী বাম কাউন্সিলররা তাঁর প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেন। তাঁরা তলবি সভা ডাকার আর্জি জানান। সেই থেকে পুরসভার মাসিক সভাতেও অংশ নিচ্ছেন না বাম কাউন্সিলররা। সেপ্টেম্বর মাসে বোর্ড মিটিং শুরুর মুখে বাম এবং কংগ্রেস কাউন্সিলররা বিক্ষোভ দেখালে সভা ভেস্তে যায়। ১৩ অক্টোবর মুলতুবি সভা ডাকা হয়। কংগ্রেস কাউন্সিলরদের মধ্যে মেয়র এবং মেয়র পারিষদরা উপস্থিত থাকলেও অন্য কাউন্সিলররা ছিলেন না। পুর পরিষেবা যাতে বিঘ্নিত না হয় সেই কারণ দেখিয়ে এর পর কংগ্রেসের তরফে কাউন্সিলরদের পরবর্তী বোর্ড মিটিংগুলিতে উপস্থিত থাকতে বলা হলেও দলের একাংশ তা মেনে নিতে পারেননি। বামেরা অনাস্থা পেশ করলে নিয়ম মতো ১৯ অক্টোবরের মধ্যে ওই সভা ডাকার কথা ছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান সেটিও মানেননি বলে অভিযোগ। এর পরই আদালতের দ্বারস্থ হয়ে পুর আইনের ১৮ (সি) ধারা অনুযায়ী চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজের অভিযোগ তুলে তাঁর অপসারণ চেয়ে বিশেষ অধিবেশ ডাকার আর্জি জানান বামেরা। সেই রায়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি আদালত ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চেয়ারম্যানকে সেই সভা ডাকার দিনক্ষণ ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছেন। উল্লেখ্য, কংগ্রেসের তরফেও চেয়ারম্যানের অপসারণ চেয়ে ৭ ডিসেম্বরও একটি মামলা করা হয়। |