দার্জিলিংয়ে গিয়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবি শুনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেকে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ বলেছিলেন। তারপরে সপ্তাহও ঘুরল না, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা জানিয়ে দিল, গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে তারা এ বার খাস কলকাতাতেই অবস্থান আন্দোলন করবে। প্রয়োজনে অনশনও করা হবে। একই সঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্যের উপরে চাপ বাড়াচে চাইছে মোর্চা। দিল্লিতে যন্তরমন্তরের ইতিমধ্যেই এই দাবিতে মোর্চার অবস্থান চলছে। ১০ ফেব্রুয়ারি তেলেঙ্গানা নিয়ে মতামত জানানোর কথা কেন্দ্রীয় সরকারের। দিল্লিতে মোর্চার অবস্থানও তত দিনই চলবে বলে ঠিক ছিল। এই দিন মোর্চা জানিয়ে দিয়েছে, রাজধানীতেও গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান চলবে। একই সঙ্গে চাপ বাড়ানো হবে রাজ্য সরকারের উপরেও। মোর্চার সহকারী সাধারণ সম্পাদক তথা গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) সদস্য বিনয় তামাং রবিবার মিরিকে একটি জনসভায় বলেন, “এ বার কলকাতামুখী আন্দোলন হবে। কলকাতায় অবস্থান করা হবে। দরকারে অনশন হবে।” তবে কবে বা কোথায় সেই আন্দোলন হবে, তা জানানো হয়নি। বিনয় বলেন, “কবে থেকে ওই আন্দোলন শুরু হবে, তার দিন ক্ষণ শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে। সে জন্য আপনারা প্রস্তুত হন।” |
মিরিকের জনসভায় বিনয় তামাং। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক |
গত মঙ্গলবার ২৯ জানুয়ারি দার্জিলিংয়ের ম্যালে উত্তরবঙ্গ উৎসবের সভা থেকেই মোর্চার সঙ্গে মমতার সম্পর্কের ছন্দপতন শুরু হয়। সেখানে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে স্লোগান ও পোস্টার দেখে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাতেই ক্ষোভ বাড়তে থাকে পাহাড়ে। পরের দিনই মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে আবার গোর্খাল্যান্ডের দাবি তোলেন বিজনবাড়িতে। মোর্চার সেই আক্রমণাত্মক মেজাজ এই দিনও প্রতিধ্বনিত হয়েছে পাহাড়ে। মিরিকের সভায় বিনয় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিং ম্যালে দাঁড়িয়ে যে আচরণ পাহাড়বাসীর সঙ্গে করেছেন, তা কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না।
রাজ্য সরকার আমাদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করবে, আমরাও তার পাল্টা করব।” অনেকটা সেই দিন গুরুঙ্গ যে ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, সেই ভাবেই বিনয়ও এই দিন বলেন, “গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আমরা অস্ত্র ধরিনি। অস্ত্র ধরতেও চাই না। এর আগে প্রশাসনকে ব্যবহার করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দেওয়া হয়েছে। এ বারে তা করা হলে কিছুতেই মানা হবে না। গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে প্রয়োজনে আমরা মৃত্যুবরণ করব।” তিনি অভিযোগ করেন, জিটিএ হওয়ার পরে যে সব আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তার কোনওটাই পূরণ করা হয়নি। রাজনৈতিক মামলাগুলি তুলে নেওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি বলে দাবি করেন মোর্চা নেতা। তিনি বলেন, “প্রয়োজনে যে কোনও সময় জিটিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসব।” এ দিনের সভায় গুরুঙ্গ ছিলেন না। পাহাড়ের তিন বিধায়ককে নিয়ে রোশন গিরি দিল্লিতে। এর মধ্যেই ম্যালের জনসভায় এই দিন ভালই ভিড় হয়েছিল। মিরিক বাদেও পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার মোর্চা সমর্থক সভায় যোগ দেন। সভার শুরু থেকেই মোর্চা নেতৃত্বের মূল আক্রমণের লক্ষ্য ছিল রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী।
গত ২৭ জানুয়ারি থেকে দিল্লির যন্তরমন্তরে অবস্থান করছে মোর্চা। সেখানে মোর্চা সভাপতি তথা জিটিএ প্রধান বিমল গুরঙ্গ যোগ দেবেন বলেও ঠিক হয়েছে। তিনি সহ মোর্চার একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করবেন। দার্জিলিংয়ের সাংসদ তথা বিজেপি নেতা যশোবন্ত সিংহকে নিয়ে রবিবার মোর্চা নেতৃত্ব লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজের দেখা করেন। বিনয় দাবি করেন, “বিজেপি বরাবর ছোট রাজ্যের পক্ষে। তারা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করার চেষ্টা হচ্ছে।” |