চায়ের দোকান থেকে পাড়ার আড্ডায় দলের কথা প্রচার ও বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দিতে ছাত্র-যুবদের নিয়ে বিশেষ ব্রিগেড বা বাহিনী তৈরি করছে তৃণমূল।
ওই ধরনের চায়ের দোকান বা আড্ডায় অথবা যে কোনও জমায়েতে ব্রিগেডের ছাত্র-যুবরা কী বলবেন, তা স্থির করতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ‘টকিং পয়েন্টস’-র খসড়া তৈরি করেছেন। আজ, সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের ছাত্র-যুবদের এক কর্মশালায় সেই খসড়া চূড়ান্ত করবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূলের অন্দরের খবর, দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দলের যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী, ছাত্র সংগঠনের সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা এবং মমতার ভাইপো ‘সর্বভারতীয় তৃণমূল যুবা’র সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মিলে ওই খসড়া তৈরি করেছেন। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “খসড়ায় স্বামী বিবেকানন্দের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। যেখানে বিবেকানন্দ বলছেন, আমার চাই নির্ভীক সাহসী লোক, আমি চাই রক্ত তাজা হউক, স্নায়ু সতেজ হউক। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট আমাদের দলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের নেত্রী ছাত্র, যুবদের বেশি করে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে নামাতে চান। কারণ, নেত্রীর মতে, ছাত্র-যুবরা দলের জীবনীশক্তি। আমাদের সরকারের ১৯ মাসের কাজ এবং বিরোধীদের অপপ্রচার নিয়ে মানুষের মধ্যে নিবিড় প্রচার করতে ছাত্র-যুবরাই উপযুক্ত।” |
বিরোধীদের ক্রমাগত সমালোচনা এবং সংবাদমাধ্যমের একাংশের তরফে সরকারের ত্রুটি জনসমক্ষে তুলে ধরা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব যে বিব্রত, তার ইঙ্গিত রয়েছে ওই খসড়ায়। ছাত্র-যুবদের কী করতে হবে, তা জানাতে গিয়ে খসড়ায় স্পষ্ট বলা হয়েছে এক শ্রেণির প্রচারমাধ্যম আমাদের ত্রুটি খুঁজে বার করার জন্য সদা সক্রিয়। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে এই সমস্ত মতলববাজ মাধ্যমগুলি আমাদের ছোট দেখানোর জন্য কোনও অস্ত্র হাতে না পায়। কেন দল কেন্দ্রের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট সরকার থেকে বেরিয়ে এসেছে, তার কারণও সবিস্তারে লেখা হয়েছে ৯ পাতার ওই খসড়ায়। কেন্দ্রীয় সরকার ছাড়ার মূল তিনটি কারণ বলা হয়েছে। সেগুলি হলখুচরো পণ্যের বাজারে ঢালাও বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), ক্রমাগত ডিজেল ও পেট্রোপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং এলপিজি-র উপর থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার, সারের দাম বৃদ্ধি-সহ পরের পর জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা। ওই সব বিষয়ে কংগ্রেসের বক্তব্য উল্লেখ করে পাল্টা যুক্তি দিয়ে তা খণ্ডন করা হয়েছে খসড়ায়।
ছাত্র-যুবদের নিয়ে কর্মশালা প্রসঙ্গে পার্থবাবু অবশ্য বলেন, “আমাদের লক্ষ্য নতুন প্রজন্ম, তরুণ, ছাত্র যুবকদের উজ্জীবিত করা। সে জন্য আমরা নেতাজি ইন্ডোরের কর্মসূচিকে সম্মেলন বলছি না। বলছি কর্মশালা। কারণ, এখন আমরা বিরোধী দলে নেই। আমাদের কাজ এখন ৩৪ বছরের ভেঙে পড়া সমাজ, প্রশাসনকে নতুন করে গড়ে তুলে উন্নততর ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়া। ফলে সমাজ থেকে দেশ গড়ার কাজই এখন করতে হবে।” সেই কাজে ছাত্র-যুবাদেরই ‘সৈনিক’ করতে চায় তৃণমূল। পার্থবাবুর কথায়, “মানুষের স্বার্থে যে আমরা কাজ করছি, তা মানুষের কাছে নিয়ে যাবেন ছাত্র-যুবা সৈনিকরা।”
পার্থবাবুর বক্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূলেরই এক রসিক নেতার মন্তব্য, “যুব সংগঠন থাকা সত্ত্বেও নেত্রীর নির্দেশে তাঁর ভাইপোকে দিয়ে যুবা বলে সংগঠন করা হল। যে উদ্দেশ্যে ওই সংগঠন গড়া হল, তা কার্যত পূরণ হয়নি। দেখা যাক, এ বার আমাদের সৈনিকরা চায়ের ভাঁড়কে অস্ত্র করে পঞ্চায়েত ভোটে কেমন লড়াই করে!” |