ভারি বই-বই হয়েছে শহর।
রবিবারের কলকাতা ছিল বইমেলামুখী। বইমেলায় মেতেছে পুলিশও। ট্রাফিক সিগন্যালে রবীন্দ্রনাথের গান থামিয়ে এখন বইমেলার থিমসঙ্গীত ‘ওই ডাকছে বই’। সেই ডাক এ দিন যত মানুষকে বইমেলায় নিয়ে গিয়ে ফেলেছে, অত মানুষের মিলনমেলায় আঁটার কথা নয়। আঁটছেও না। হাঁসফাঁস ভিড় শামুকের গতিতে আক্ষরিক অর্থেই পায়ে পায়ে এগিয়ে স্টল থেকে স্টলে লাইন দিচ্ছে। ওই ঠেলাঠেলির মধ্যে লাইন সোজা রেখে দাঁড়িয়ে থাকা দুঃসাধ্য। |
জনসমুদ্র। রবিবার, বইমেলায়। ছবি: শৌভিক দে |
তাতে কী! বইয়ের জন্য এইটুকু কষ্ট তো করতেই হবে। এমনই একটা কথা বলার চেষ্টা করলেন হাওড়া থেকে আসা অয়ন সেন। নামী একটি প্রকাশন সংস্থার স্টলের সামনে পাক্কা সাঁইত্রিশ মিনিট দাঁড়ানোর পরে তিনি গেটের সামনে পৌঁছতেই নাকের সামনে কোল্যাপসিব্ল গেট বন্ধ হয়ে গেল। অর্থাৎ তাঁকে অপেক্ষা করতে হবে আরও অন্তত পাঁচ মিনিট। ভিড় একটু ফাঁকা হলে তবে আবার গেট খুলবে। এই করে তিনি হয়তো ঘণ্টা তিন চারের চেষ্টায় গোটা পাঁচেক স্টলে ঢুকতে পারবেন। এর পরে তাঁকে বইমেলার স্পেশাল বিরিয়ানি খেতেই হবে। সে জন্যও লাইন।
লাইন মেলার বাইরেও। বাইরে বেরিয়ে জ্যাম-রুদ্ধ পথে না আছে বাস, না আছে ট্যাক্সি। ফি-বছরের মতো এ বারও পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বইমেলা থেকে নিশ্চিন্তে বাড়ি ফেরানোর। গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানান, ৩৫টি বাস চালানো হবে বিনা ভাড়ায়। এ দিন সন্ধ্যায় মাঠপুকুর বা সায়েন্স সিটির দিকে ঘরমুখো মানুষের ভিড় সামলাতে একটিও বাস ছিল না। ফলে অজস্র মানুষকে পার্ক সার্কাস, কসবা বা উল্টোডাঙার দিকে অনেক দূর পর্যন্ত হাঁটতে হয়েছে। |
ব্রাত্য বসুর উপরে লেখা একটি সঙ্কলন গ্রন্থ প্রকাশ করছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।
সঙ্গে ব্রাত্য বসু। রবিবার, বইমেলায়। —নিজস্ব চিত্র |
ওই বিপুল ভিড় দেখে রাজনীতির লোকেরাও হাজির বইমেলায়। ছিলেন তৃণমূলের পূর্ণেন্দু বসু, ব্রাত্য বসু, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়েরা। মহাশ্বেতা দেবীকে সংবর্ধনা দিতে সঙ্গত কারণেই বইমেলাকেই এ দিন বেছে নেয় কংগ্রেস।
মেলায় নতুন বইপ্রকাশও চলছে। বেরিয়েছে দেশভাগের এক অন্য আখ্যান আয়েশা খাতুনের ‘ভাঙন চরিত কথা’, চিত্রশিল্পী সাদেকের কবিতার বই ‘জানালাটা খোলা থাক’, দীপান্বিতা রায়ের ছোটদের বই ‘সোনালি রুপোলি রূপকথা’, অরূপ গুছাইতের ‘অবিস্মরণীয় জগদীশচন্দ্র’, সৌমেন্দ্রকুমার গুপ্তের ‘পরিবর্তনের সন্ধানে মুর্শিদাবাদের বাঙালি মুসলমান’। |