এক মুহূর্তের স্তব্ধতা, তবে রুশদি নিয়ে
‘বিশদে’ গেলেন না অমর্ত্য
ইমেলায় লিট মিটের শেষ দিন। বক্তার আসনে ‘তর্কশীল ভারতীয়ে’র লেখক। এ বারের লিট মিট ঘিরে সবচেয়ে তর্ক তোলা বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই এক মুহূর্তের নীরবতা।
সলমন রুশদিকে লিট মিটে আসতে না দেওয়া নিয়ে লিট মিটেরই মঞ্চে দাঁড়িয়ে কী বলবেন অমর্ত্য সেন?
রবিবারের ভরদুপুর হলে কী হবে, সভাগৃহে উপছে পড়া ভিড়। অর্মত্য সেনের সঙ্গে আলাপচারিতায় শর্মিলা ঠাকুর! জানতে চাইছেন, হোয়াট মুভস ইন্ডিয়া, হোয়াট স্টপস ইট!
মুহূর্তটাও মোক্ষম। রুশদি-বিতর্ক তো আছেই। তা বাদে দিল্লি গণধর্ষণ এবং নাগরিক বিক্ষোভ গোটা দেশকেই আন্দোলিত করেছে, করছে। অমর্ত্য সেন এবং শর্মিলা ঠাকুর, দু’জনেই একাধিক বার মুখ খুলেছেন এই সময়-পর্বে। দু’দিন আগে লিট মিট-এর আসরেই ধর্ষণে প্রাণদণ্ডের বিরোধিতা করেছেন শর্মিলা। সুতরাং এ দিনের আলোচনায় বিষয়গুলো যে আসবে, সেটা এক প্রকার প্রত্যাশিতই ছিল।
শর্মিলা শুরু করলেন যুবসমাজের ভূমিকার কথা তুলে। ভারতের গড় বয়স এখন কুড়ি, যুবসমাজ সংখ্যাগুরু। অণ্ণা হজারে থেকে দিল্লি ধর্ষণ, নাগরিক বিদ্রোহে তাদের উপস্থিতি এখন সরব। “তারা রাস্তায় নামছে, এটা ঠিক। কিন্তু কী বলছে? কী চাইছে? অনেক সময়ই একটা ভাসা-ভাসা দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করছে না কি?” এই সূত্রেই শর্মিলার জিজ্ঞাসা, সমাজের বাকি স্তরের মানুষের ভালমন্দ নিয়ে তারা কতটা ভাবে? অমর্ত্যদের প্রজন্মের তুলনায় আজকের যুবসমাজ কি বেশি আত্মকেন্দ্রিক?
অমর্ত্য অবশ্য এর জন্য আলাদা করে যুবসমাজকে দোষ দিলেন না। বললেন, গত দু’দশকে উদারীকরণের ফলে একটা বড় অংশের কাছে অর্থনৈতিক সুযোগসুবিধার ক্ষেত্রটা অনেকটা বিস্তৃত হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের উচ্চাকাঙ্খাও বেড়েছে। “উচ্চাকাঙ্খী হওয়ার মধ্যে আমি দোষের কিছু দেখি না। আসল কথাটা হচ্ছে, সুযোগসুবিধার জায়গাটা কত জনের কাছে বিস্তৃত করে দেওয়া গেল।” কিন্তু এই প্রশ্নটাই কি আদৌ মধ্যবিত্তকে ভাবায়? শর্মিলা প্রশ্ন করলেন, “তারা তো সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও গ্যাসের ভর্তুকি ছাঁটাই আর বিদ্যুৎ মাসুল বাড়া নিয়ে প্রতিবাদে গলা ফাটায়!”
লিট মিট-এর শেষ দিনে এ দেশের নোবেলজয়ীদের নিয়ে এমটা সংস্থার তৈরি একটি ক্যালেন্ডার
উদ্বোধন করলেন অমর্ত্য সেন। ছিলেন শর্মিলা ঠাকুরও। কর্ণধার উজ্জ্বল উপাধ্যায় চাইছিলেন, নিজের
ছবিওয়ালা পাতাটি ধরে দাঁড়িয়ে একটা ছবি তুলুন অমর্ত্য। বিড়ম্বিত মুখে, লাজুক হেসে “না না!” বলে
কোনও মতে এড়িয়ে গেলেন। পাশে একটি স্ট্যান্ডে খুলে রাখা ছিল ওই পাতাটি। “ওখানে একটা
সই করে দিন!” এই অনুরোধটা কিন্তু রাখতেই হল তাঁকে। —নিজস্ব চিত্র
উত্তরে পুরোপুরি সহমত পোষণ করলেন অমর্ত্য। “ভর্তুকি টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে মধ্যবিত্ত কেন যে এত মরিয়া! মাসে পাঁচশো টাকা বেশি খরচ করার সামর্থ্য তো তাদের আছে!” কিন্তু দেশের বৃহত্তর জনতা এর চেয়ে অনেক খারাপ অবস্থায় আছে, তাদের গ্যাসও নেই। বহু ক্ষেত্রে বিদ্যুৎও নেই। সেই অংশের উন্নয়ন নিয়ে মধ্যবিত্তের মাথাব্যথাও নেই। বামপন্থীরাও এ ক্ষেত্রে প্রার্থিত ভূমিকা নেননি বলেই মনে করেন অমর্ত্য। পরমাণু চুক্তি বা গ্যাসের দাম নিয়ে বিরোধিতা
করতে তাঁরা যতটা তৎপরতা দেখিয়েছেন, শৌচাগারের অভাবের ব্যাপারে দেখাননি। অমর্ত্য এ ব্যাপারে সরকারের ভূমিকা নিয়েও কড়া কথাই বললেন। খাদ্য সুরক্ষা বিল আনার ব্যাপারে সরকার রাজকোষে অনটনের দোহাই দেয়, কিন্তু সম্পন্ন অংশের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ে যা করণীয়, তা করে না।
শর্মিলার প্রশ্ন, কথায় কথায় বেসরকারিকরণের পক্ষে সওয়াল করা হয় আজকাল। সেটাই কি সব সমস্যার সমাধান? অমর্ত্যের জবাব, “বেসরকারিকরণে এমনিতে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু কোন ক্ষেত্রে, কী ভাবে বেসরকারিকরণ?” একটা অংশে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বেসরকারি পরিষেবার রমরমা হচ্ছে। অন্য দিকে সামগ্রিক ভাবে দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। খোলা জায়গায় শৌচকার্য সারার নিরিখে ভারত এখনও এক নম্বর! অমর্ত্যের মতে, “অর্থনৈতিক বৃদ্ধি নিয়ে এখানে একটা চূড়ান্ত অস্বচ্ছ ধারণা কাজ করছে।” চিনের অর্থনৈতিক বাড়বৃদ্ধির কথা বলা হয়। চিন কিন্তু স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ বরাদ্দ করে থাকে। সামাজিক জীবনযাত্রার মানের সূচকে শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশও ভারতকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণের হার অনেক বেশি। সেটা দেশের সার্বিক উন্নয়নে একটা বড় ভূমিকা নিয়েছে।
শর্মিলা রাজনীতিকদের মধ্যে বৃহত্তর চিন্তনের অভাবের কথা তুলছিলেন, নাগরিক জীবনে নৈতিক দায়বদ্ধতার অনুপস্থিতির কথা বলছিলেন। মানসিকতার বদল হবে কীসে? অমর্ত্য সেন বললেন, নৈতিকতা রোজকার জীবনযাপনের অঙ্গ। নৈতিকতা যুক্তিবোধেরও অঙ্গ। সেটা উপলব্ধি করলে অনেকটা কাজ হয়। অজ্ঞানতাই গোড়ায় গলদ। সেটা কাটাতেই হবে।
এ বার দর্শকাসন থেকে প্রথম প্রশ্নটাই এল, “আপনি তর্কশীল ভারতীয়ের কথা বলেছেন। সলমন রুশদি-কমলহাসনকে নিয়ে যা হচ্ছে, তা নিয়ে কী বলবেন?”
আসর এক মিনিটের জন্য স্তব্ধ। হোয়াট মুভস ইট-এর পরে হোয়াট স্টপস ইট-এর পালা যেন! উদ্যোক্তারা মুখে অস্বস্তির রেখা চাপছেন। অমর্ত্য সেন বললেন, আমি তিনটে কথা বলব—
, এই নিয়ে বিশদ কিছু বলতে চাইছি না, কারণ তা হলে আর অন্য কিছুই ছাপা হবে না।
, ধর্ম বিষয়ে কাউকে আঘাত না দেওয়াটা ভারতের গঠনমূলক তর্ক-পরম্পরার মধ্যে রয়েছে।... পশ্চিমবঙ্গেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অনেকটা বঞ্চিত অবস্থায় রয়েছেন। তাঁদের খারাপ থাকার সত্যিকার কারণগুলো থেকে নজর ঘোরাতে ভাবাবেগে আঘাত আনার প্রসঙ্গগুলো বড় করে দেখানো হয়।
, আমি কিন্তু শুধু এই কথাগুলোই বলিনি আজ। আরও অনেক কিছু বলেছি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.