বেনিয়াপুকুরে মিল্লি আল আমিন কলেজে মারামারির ঘটনায় তদন্তের মুখে পড়লেন তিন শিক্ষিকা। তার আগে তিন জনকেই সাসপেন্ড করেছে কলেজের পরিচালন সমিতি। তিন শিক্ষিকা হলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবীণ কৌর ও জারিনা খাতুন। তাঁদের বিরুদ্ধে কলেজ-কর্তৃপক্ষ নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যবস্থা করবেন বলে রবিবার জানান পরিচালন সমিতির সভাপতি ও তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ।
এ দিন ওই তিন জনকে সাসপেন্ড করার সঙ্গে সঙ্গে ‘শো-কজ’ করা হয়েছে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা সাবিনা নিশাত ওমর, ইতিহাস বিভাগের চুক্তি-ভিত্তিক পূর্ণ সময়ের শিক্ষিকা প্রগতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আংশিক সময়ের শিক্ষিকা মনজিৎ কৌরকে। সাসপেন্ড করা হয়েছে কলেজের দারোয়ান মহম্মদ সফিকেও। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আদালতে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে অভিযুক্ত শিক্ষিকাদের তরফে। জারিনা খাতুন এ দিন বলেন, “সাসপেনশনের চিঠি হাতে পেলে পরিচালন সমিতির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা মামলা করব।”
সাসপেনশন কেন? পরিচালন সমিতির সভাপতি সুলতান জানান, অভিযুক্ত তিন শিক্ষিকার সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে কলেজের ১২ জন শিক্ষিকা পরিচালন সমিতিকে একটি চিঠি দিয়েছেন। ওই তিন শিক্ষিকার জন্য কলেজের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে চিঠি দিয়েছেন বেশ কিছু ছাত্রীও। সুলতান বলেন, “এই পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালন সমিতির বৈঠকে সর্বসম্মত ভাবেই সিদ্ধান্ত হয়, মারামারিতে অভিযুক্ত তিন শিক্ষিকাকে সাসপেন্ড করা হবে।” শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
নিরাপত্তার অভাবের কথা জানিয়ে শিক্ষিকা ও ছাত্রীরা যে-চিঠি দিয়েছেন, তার ভিত্তিতে এবং সুষ্ঠু ভাবে কলেজ চালানোর স্বার্থেই সাসপেনশন ও শো-কজের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান পরিচালন সমিতির সচিব মহম্মদ জাহাঙ্গির। তিনি বলেন, “মারামারিতে অভিযুক্ত তিন শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বাইরের কোনও অধ্যাপক অথবা আইনজীবীকে দিয়ে তদন্ত করানো হবে।” তিনি জানান, ক্লাস না-থাকা সত্ত্বেও মনজিৎ কৌর বৃহস্পতিবার কলেজে উপস্থিত ছিলেন এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষার উপরে তিনিও চড়াও হন। তাই তাঁকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। শো-কজ নোটিসের উত্তর না-দেওয়া পর্যন্ত তিনি কলেজে ঢুকতে পারবেন না।
রক্ষীকে সাসপেন্ড করা হল কেন?
সচিব বলেন, “বৃহস্পতিবার কলেজের সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ার পরেও দারোয়ান কলেজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই তিন শিক্ষিকা বৈশাখীদেবী, প্রবীণদেবী ও জারিনা খাতুনকে দুই বহিরাগতের সঙ্গে কলেজে এবং অধ্যক্ষের ঘরে ঢুকতে দেন। আর তার পর থেকেই স্থায়ী শিক্ষিকাদের হাজিরা খাতার হদিস মিলছে না। তাই দারোয়ানকেও সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার। সে-দিন কলেজে শিক্ষকদের ঘরেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষার সঙ্গে তিন স্থায়ী শিক্ষিকার মারামারি হয়। আঁচড়া-আঁচড়ির সঙ্গে সঙ্গে শাড়ি-জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। দুই শিক্ষিকা চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করান। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা ওই হাসপাতালে চিকিৎসার পরে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হন। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে। কলেজ সূত্রের খবর, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষার সঙ্গে বৈশাখীদেবী, প্রবীণদেবী ও জারিনা খাতুনের বিবাদ নতুন নয়। গত নভেম্বরেও তাঁদের মধ্যে এক দফা গোলমাল হয়েছিল।
|