বহু দিন অপেক্ষার পর সুদবৃক্ষে ফুল ফুটছে। অবশ্য তেমন সুগন্ধ ছড়ায়নি। রেপো রেট কমেছে ২৫ বেসিস পয়েন্ট। কিন্তু সেই ঘোষণার পাশাপাশি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও এও বলেছেন যে, ভবিষ্যৎ খুব মধুর নয়। পণ্যমূল্য আবার উপরের দিকে গেলে সুদ ফের বাড়তে পারে।
সুদ কমার খবরে শেয়ার বাজার তাৎক্ষণিক ভাবে উৎফুল্ল হয়ে উঠলেও, সুব্বারাওয়ের মুখে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশঙ্কার কথা শুনে পরে তা স্তিমিত হয়ে আসে। এবং ওই দিন বাজার বন্ধের সময় সেনসেক্স ১১২ পয়েন্ট খুইয়ে বন্ধ হয় ১৯,৯৯১ অঙ্কে।
২৫ বেসিস পয়েন্ট কমার পর এখন রেপো রেট ৭.৭৫%। যে হারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয়, তা-ই হল রেপো রেট। এই হার যে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমতে পারে, সে আশা অনেকেরই ছিল। কিন্তু নগদ জমার অনুপাত (সিআরআর) নিয়ে কেউ তেমনটা আশা করেননি। তাই বাজার কিছুটা আশ্চর্যই হয়, যখন সিআরআর-ও ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর কথা ঘোষণা করে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। উল্লেখ্য, সিআরআর হল বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে আমানতের যে-অংশ বাধ্যতামূলক ভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে জমা রাখতে হয়। সিআরআর কমার ফলে ১৮,০০০ কোটি টাকার জোগান বাড়বে বাজারে। সামান্য হলেও এক দিকে সুদ হ্রাস এবং অন্য দিকে নগদের জোগান বৃদ্ধি বাজারকে কিছুটা প্রাণচঞ্চল করে তুলবে বলে কেন্দ্রীয় সরকারের আশা।
রেপো রেট কমায় কোনও কোনও ব্যাঙ্ক এরই মধ্যে ঋণের উপর সুদ কমানোর কথা ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি, জমার উপরেও সুদ কমার সম্ভাবনা আছে। তবে কয়েকটি ব্যাঙ্ক ইঙ্গিত দিয়েছে, আমানতের উপর তারা এখনই সুদ কমাচ্ছে না। |
গৃহঋণ এবং গাড়িঋণের উপর সুদ কমলে প্রত্যক্ষ ভাবে উপকৃত হবে ওই দুই শিল্প এবং পরোক্ষ ভাবে আরও অনেকে। নগদের জোগান বাড়লে অবশ্য মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চিন্তা থেকেই যাবে। আর এই চিন্তাতেই ঋণনীতি ঘোষণার পর বাজার দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সপ্তাহের শেষে সেনসেক্স ২০ হাজার থেকে বেশ খানিকটা নেমে এসে বন্ধ হয় ১৯,৭৮১ অঙ্কে। নিফটি-ও নেমে আসে ছ’হাজারের ঘর থেকে।
ডিজেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। আগামী দিনে আরও বাড়বে। ফলে মূল্যবৃদ্ধিকে নিম্নমুখী রাখা শক্ত হবে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বিশেষ ভাবে ভাবাচ্ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে। এই পরিস্থিতিতে নীচু সুদের জমানা শুরু হয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
অনেক সংস্থারই তৃতীয় ত্রৈমাসিকের ফল প্রকাশিত হয়েছে। যেমন, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের লাভ ৩০ শতাংশ বেড়েছে। তেমনই আবার মুনাফা কমেছে ভারতী এয়ারটেলের। নালকো-র মুনাফা ৫১ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ১১৯ কোটি টাকা। ঊষা মার্টিনের বেড়েছে ১৮%। আবার ইআইএইচ-এর লাভ ৪৫ কোটি থেকে নেমে এসেছে ৩৩ কোটি টাকায়।
ভারতীয় বাজার গত সপ্তাহে বেশ দুর্বল জায়গায় বন্ধ হলেও, সপ্তাহ শেষে চমকে দিয়েছে মার্কিন বাজার। মার্কিন সূচক ডাও বন্ধ হয়েছে ১৪,০০০ পেরিয়ে। ১,৫০০ অঙ্ক অতিক্রম করেছে এসঅ্যান্ডপি। ন্যাসডাক-ও ৩৬ পয়েন্ট উঠে বন্ধ হয়েছে ৩,১৮০ অঙ্কে। আশা করা যায়, শক্তিশালী মার্কিন বাজার সোমবার ভাল প্রভাব ফেলবে ভারত তথা এশিয়ার বাজারে।
ইতিমধ্যেই বাজেট নিয়ে ‘বাজার গরম’। নানা ধরনের দাবিদাওয়া আসতে শুরু করেছে সরকারের কাছে। বিপুল ঘাটতি মাথায় নিয়ে বাজেটের ব্যাপারে সরকারও খুব একটা ভাল জায়গায় নেই। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ছোটখাটো কর ছাড়ের পাশাপাশি রাজস্ব বৃদ্ধির খাতিরে নতুন কিছু কর বসতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে। অতি ধনীদের উপর চড়া হারে কর বসানোর ইঙ্গিত মিলেছে খোদ সরকারি মহল থেকে। ‘সুপার রিচ’ বলতে কাদের বোঝাবে তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। পশ্চিমের কিছু উন্নত দেশের অনুকরণে ভারতও এই পথে হাঁটতে চায়।
সাধারণ মানুষ বাজেট থেকে যা আশা করছে, তা মোটামুটি এই রকম:
• করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লক্ষ টাকা থেকে বাড়ানো হোক। চড়া মূল্যবৃদ্ধির জমানায় তা অন্তত ১০% বাড়া উচিত বলে মত অনেকের।
• ৮০সি ধারায় কর সাশ্রয়কারী লগ্নি-সীমা ১ লক্ষ থেকে বাড়ানো হোক।
• রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি প্রকল্পে সব ধরনের লগ্নিকারীর অন্তর্ভুক্তি।
• আলাদা ছাড় দেওয়া হোক কর সাশ্রয়কারী ব্যাঙ্ক-জমা এবং পেনশন প্রকল্পে লগ্নিতে। পরিকাঠামো বন্ডে লগ্নির উপর কর ছাড় প্রত্যাহৃত হওয়ায় নতুন ক্ষেত্রে কর ছাড়ের সুপারিশ আসছে নানা মহল থেকে।
বাজেট কী দেবে এবং কী ফিরিয়ে নেবে, তা ২৮ তারিখের আগে জানা যাবে না। তত দিন পর্যন্ত চলবে আলাপ-আলোচনা। আসবে নানা দাবি এবং সুপারিশ। সব ব্যাপারে শেষ কথা বলবেন পি চিদম্বরম। মাসের শেষ বৃহস্পতিবার। কাদের ভাগ্যে বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকে তা-ই এখন দেখার! |