শাসকপক্ষ তথা তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব দেখা গিয়েছিল আগেই। রবিবার দুবরাজপুরের লোবায় দেখা গেল, বিরোধী বামপন্থীদের থেকেও দূরেই রয়েছে স্থানীয় কৃষিজমি রক্ষা কমিটি। এ দিন লোবা গ্রামে গুলি চালনার প্রতিবাদে বামপন্থী আদিবাসী লোকশিল্পী সংগঠনের সভাতে ডাক পাননি কমিটির কেউ।
খোলামুখ কয়লাখনির জন্য নেওয়া জমির ‘ন্যায্য’ ক্ষতিপূরণের দাবিতে ২০০৬ সাল থেকে কৃষিজমি রক্ষা কমিটির নেতৃত্বে আন্দোলন চলছে লোবায়। কমিটির নেতৃত্বে খনির জন্য মাটি কাটার একটি যন্ত্র দীর্ঘ দিন ধরে আটকে রেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গত ৬ নভেম্বর পুলিশ সেই যন্ত্র সরাতে গেলে খণ্ডযুদ্ধ বাধে। পুলিশের গুলিতে কয়েকজন গ্রামবাসীর আহত হওয়ার অভিযোগ ওঠে। বস্তুত, এই নিয়েই শাসকপক্ষের সঙ্গে কমিটির মন কষাকষির শুরু। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে গুলি চালনার কথা মানতে চাননি।
তবে তৎকালীন পুলিশ সুপারকে বদলি করে দেন। ক্ষতিপূরণের চেক নিয়ে গত ডিসেম্বরে লোবা গ্রামে দলীয় মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী যখন জানতে চান, আহতদের পরিবারের কেউ আছেন কি না, তখন তিনি সাড়া পাননি। পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আহতদের কাছে গিয়ে তাঁদের প্রত্যেকের হাতে ২৫ হাজার টাকা করে চেক তুলে দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু লোবায় পুলিশ গুলি চালায়নি বলে জানুয়ারি মাসে বীরভূমের নতুন পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা দেওয়ায় পুলিশ তথা শাসকপক্ষের সঙ্গে নতুন করে দূরত্ব বেড়েছে কমিটির। |
সেই গুলি চালনার ঘটনার প্রতিবাদেই এ দিন লোবায় সভা করে বাম লোকশিল্পী সংগঠন। উপস্থিত ছিলেন ওই সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মুজাফ্ফর হোসেন ও সভাপতি নকুল মাহাতো, সিপিএমের বীরভূম জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সম্পাদক জয়দীপ মজুমদার ও কমিটির সভাপতি ফেলারাম মণ্ডলেরা বলেন, “ওই সভায় আমরা আমন্ত্রণ পাইনি। তাই যাওয়ার প্রশ্নই নেই।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাধন ঘোষের বক্তব্য, “এটা সবার অনুষ্ঠান যে কেউ আসতে পারেন।”
কমিটির নেতাদের বক্তব্য, “পঞ্চায়েত ভোটের দিকে তাকিয়ে সব রাজনৈতিক দলই চাইছে, এখানে তাদের জমি শক্ত করতে। আমাদের দীর্ঘ দিনের আন্দোলনে যারা পাশে ছিল না, তারা এখন আমাদের চাষ করা জমির ফসল ঘরে তুলবে, সেটা হতে দেব না।”
তবে লোকশিল্পী সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মুজাফ্ফর হোসেন বলেন, “রাজ্য জুড়ে যে অশান্তি ও অস্থিরতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে লোবার ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। মানুষের গণতান্ত্রিক আধিকার রক্ষাথের্র্ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ সভা হচ্ছে। এর সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারের প্রশ্নই নেই।” কিন্তু কমিটিকে এ দিন ডাকা হল না কেন, সে প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি। |