কুলটির জলপ্রকল্পের কাজ ঠিক মতো এগোচ্ছে না, এলাকা ঘুরে দেখে এমনটাই জানিয়ে গেলেন রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের সচিব দেবাশিস সেন।
জেএনএনইউআরএম-এর প্রকল্পগুলি কী অবস্থায় রয়েছে, তা ঘুরে দেখতে শনিবার আসানসোলে আসেন তিনি। মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে দেখেন। সঙ্গে ছিলেন আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক অন্তরা আচার্য। সব শেষে দেবাশিসবাবু বলেন, “কুলটির জলপ্রকল্পের কাজ আশানুরূপ নয়। আমরা এ সপ্তাহেই কলকাতায় একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করে এই কাজের অগ্রগতি নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করব।”
কুলটির জলপ্রকল্পটি ২০০৭ সালে অনুমোদন পায়। খরচ ধরা হয় ১৩৯ কোটি টাকা। এর অধীনে ১১টি জলাধার তৈরি করে ৩৫টি ওয়ার্ডে পাইপলাইনে জল সরবরাহ করার কথা। বর্তমানে কুলটির নানা এলাকায় পানীয় জল সরবরাহ করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। পুর এলাকায় তাঁদের ৬টি জলাধার আছে। কথা ছিল, জনপ্রকল্পটি তৈরি হয়ে গেলে শুধু পুরসভাই গোটা কুলটিতে জল করবে। সেক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের যে পরিকাঠামো আছে, সেটিও ব্যবহার করবেন পুর কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ, পুরসভাকে নতুন করে আরও পাঁচটি জলাধার গড়তে হবে। বরাকর নদ থেকে সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে জল তুলে সরবরাহ করা হবে। ২০০৯-১০ আর্থিক বর্ষে প্রকল্পটি শেষ করে ফেলার কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত দু’টি জলাধার নির্মাণ ছাড়া আর কিছুই হয়নি।
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রের নগরোন্নয়ন মন্ত্রক প্রকল্পটি অনুমোদনের সময়ে আসানসোল-দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এডিডিএ)-কে ‘নোডাল এজেন্ট’ নিয়োগ করে। অর্থাৎ, কাজ শুরু থেকে শেষ করা ও সেই সময়ে যাবতীয় দেখভালের দায়িত্ব এডিডিএ-র। প্রকল্প শেষ হয়ে গেলে তা চালানোর জন্য পুরসভার হাতে তুলে দেওয়া হবে। তাতে আপত্তি জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কুলটি পুর কর্তৃপক্ষ। তাঁরা দাবি করেন, প্রকল্পটি যেহেতু পুরসভার তাই শুরু থেকেই তাঁদের দায়িত্বে দিতে হবে। এডিডিএ শুধু দেখভালের দায়িত্ব নিতে পারে। এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে হেরে সুপ্রিম কোর্টে যান পুর কর্তৃপক্ষ। সেখানে তাঁরা জেতেন। ফলে প্রায় পাঁচ বছর ধরে প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। অবশেষে কাজে হাত পড়েছে। পুরসভা সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় সরকার এখনও পর্যন্ত ২৯ কোটি টাকা দিয়েছে।
দেবাশিসবাবু শনিবার জানান, জেএনএনইউআরএম প্রকল্পগুলির কাজ আর দেড় বছরের মধ্যে শেষ করে ফেলতে হবে। কিন্তু কুলটির এই বিশাল জলপ্রকল্পটি আদৌও এই সময়সীমার মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে কি না, সে উত্তর অবশ্য দেবাশিসবাবুর কাছে মেলেনি। কুলটির পুরপ্রধান তথা এলাকার তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় অবশ্য নিরাশ হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি বলে দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “বরাকরে একটি জলাধার তৈরি হয়েছে। বরাকর নদ থেকে পাইপলাইনে সেখানে জল উঠবে। পরে পাশ্ববর্তী এলাকায় সরবরাহ হবে।” উজ্জ্বলবাবু জানান, রবিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে এই জলাধারটিতে জলও তোলা হয়েছে।
পুরপ্রধান আশ্বাস দিলেও কবে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে, সে নিয়ে সংশয় কাটছে না কুলটির মানুষের। |