|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিয়ো না |
পুরনো প্রেম সামনে এলে
প্রেমিকা নিয়ে বসে আছেন রেস্তোরাঁয়। এমন সময় পুরোনো প্রেমিকা হাজির।
কী ভাবে অস্বস্তি কাটাবেন? উত্তর খুঁজছেন রেশমি বাগচি |
আজ অনেক দিন পর তিতলি আর সায়ন ডিনারে যাচ্ছে।
ওদের সম্পর্কের বয়স এখন আট মাস। একে অপরকে খুব ভালবাসে। মাঝে অনেকদিন দেখাও হয়নি ওদের। দু’জনেই কাজে ব্যস্ত থাকে। বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত। বুঝতেই পারছেন, এটা ওদের বহু প্রতীক্ষিত রোম্যান্টিক ডিনার। তিতলি আজ সেজেছে মনের মতো করে। সায়ন তো চোখই ফেরাতে পারছে না। প্রেমে হাবুডুবু দু’জন নানা কথায় মশগুল। ঠিক এমন সময়ই পাশের টেবিলে কয়েক জন এসে বসল। তাদের কথাবার্তায় একজনের গলার আওয়াজ খুব চেনা মনে হল তিতলির। মেনু কার্ডটা দেখতে দেখতে তিতলি তাকাল সে দিকে। তাকিয়েই বুকের ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। এ যে ওর প্রাক্তন প্রেমিক! এর সঙ্গে ব্রেক-আপের পরেই তো সায়ন ওর জীবনে আসে। উফ...কী অস্বস্তিকর! তিতলির ইচ্ছে করছে তক্ষুনি উঠে যেতে। হঠাৎ তেতো হয়ে উঠল আবহাওয়া। ওর মনে হল কেন এলাম এই রেস্তোরাঁয়? এলামও যদি, এখানে কেন বসলাম? যদি এগিয়ে এসে কথা বলে কী উত্তর দেবে তিতলি? উথাল পাথাল হয়ে যায় তিতলির মন। এমন সময় সায়ন বলে উঠল, “কী হয়েছে তিতলি? আর ইউ ওকে?” সায়ন কি তবে কিছু বুঝতে পেরেছে?
এই পরিস্থিতিতে আপনারা অনেকেই হয়তো কখনও না কখনও পড়েছেন। প্রাক্তন প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে দেখা, যখন বর্তমান সঙ্গী আপনার পাশে। নিঃসন্দেহে জটিল পরিস্থিতি। সামলানো খুবই কঠিন। তবে পুরোটাই নির্ভর করছে আপনার উপর। হয় শূন্য রানে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান, অথবা ভাল ভাবে বলটা খেলুন। রান না হলেও ক্ষতি নেই। কী করবেন আপনি এই পরিস্থিতিতে? প্রাক্তনকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবেন? দেখেও না দেখার ভান করবেন? না আড়চোখে তাকাবেন? খবরদার না। এই সব করলে আরও গুবলেট হয়ে যাবে ব্যাপারটা। বরং দেখা হলে হাই-হ্যালো করুন। হেসে কথা বলুন। বর্তমানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন প্রাক্তনের।
অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের মতে বর্তমানকে প্রাক্তনের সম্পর্কে বলে রাখলে অনভিপ্রেত ঘটনার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। “আমি মনে করি বলে রাখা উচিত। পৃথিবী খুব ছোট। কলকাতা শহরেই থাকি। কোনও না কোনও দিন দেখা হয়ে যেতেই পারে।” কিন্তু আপনার প্রেমিকা তো বিদেশিনী? ‘‘তাতে কী হয়েছে? ও সব জানে। সৎ প্রেমিক হওয়াই ভাল।” সৎ হতে গিয়ে যদি সম্পর্কে চিড় ধরে? “হতে পারে হয়তো। সবাই তো সমান নয়। ধৈর্য নিয়ে কথা বলুন। দেখবেন বর্তমান প্রেমিকা ঠিকই বুঝবে। আমার এক প্রাক্তন প্রেমিকা আমার খুব ভাল বন্ধু এখন। ইকার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর দু’জনে চুটিয়ে গল্প করেছিল।” |
|
পরমব্রতর মতে আগে থেকে বলে রাখলে চাপ কম। সম্পূর্ণ অন্য মত এমবিএ ছাত্র শৌর্যর। শৌর্য আবার তার প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রক্ষায় বিশ্বাসী নন। পড়ার চাপ, কোথায় প্লেসমেন্ট হবে তা নিয়ে ভাবনার মাঝে আবার গার্লফ্রেন্ডকে ব্যাখ্যা দেওয়া পোষাবে না। গায়ক রূপমের মতে, “এখন নেটওয়ার্কিং সাইটের জমানায় সম্পর্ক খুব তাড়াতাড়ি তৈরি হয়। শেষ হওয়ার বীজও তার মধ্যেই নিহিত থাকে। কিন্তু সম্পর্ক শেষ হলেই যে তার সঙ্গে বন্ধুত্বও শেষ তা তো নয়। তবে বন্ধুত্বের মধ্যে যেন ফেলে আসা সম্পর্কের প্রভাব না পড়ে।” কিন্তু বন্ধুত্ব রাখতে গিয়ে যদি প্রেমিক মনটা আবার বেরিয়ে পড়ে? রূপমের সোজা উত্তর, “না, বেরোবে না। এইটুকু কন্ট্রোল থাকতে হবে নিজের ওপর।” আপনার স্ত্রী রূপসাকে আপনার প্রাক্তন প্রেম সম্পর্কে জানিয়েছেন? “জানিয়েছি। রূপসা সব জানে বলেই তো কখনও কোনও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। হবেও না।”
তবে এমবিএ ছাত্র শৌর্যর অত সাহস নেই। তাই এমনও অনেক বার হয়েছে যে, আগের ও এখনকার প্রেমিকার দেখা হওয়ায় কার্যত পলায়ন করতে হয়েছে। তার পর অন্তত কয়েক মাস নো প্রেম। শৌর্যর প্রশ্ন, বলে রাখলে হয়তো ভাল, কিন্তু না বুঝলে কী করব? সত্যিই তো! প্রেমিকা পজেসিভ হলে মুশকিল। কিন্তু ঐন্দ্রিলার কাছে এটা কোনও সমস্যাই নয়। সদ্য চাকরিতে ঢুকেছে। বছর ২৩-এর ঝকঝকে মেয়েটির মতে বয়ফ্রেন্ড পজেসিভ হলে বরং ভালই লাগে ওর। ইচ্ছে মতো রাগানো যায়। তাই তো পুরোনো প্রেমিকদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ বজায় রাখে। আর অবশ্যই প্রাক্তনের সঙ্গে বর্তমানের পরিচয়ও করিয়ে দেয়। হাসতে হাসতে বলল ঐন্দ্রিলা, বর্তমান বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ঝগড়া হলেই পুরোনো প্রেমিকদের ওর সামনে থেকেই ফোন করি। সিনেমায় যেতে বলি।
পরমব্রতর প্রেমিকারাও কি খুব পজেসিভ ছিলেন? “আমি এইটুকু বলতে পারি ইকা খুব যুক্তিবাদী, খুব বুঝদার। আমার প্রাক্তনীরা অনেকেই এ রকম ছিলেন না।” বিশেষ কারও কথা বলতে চাইলেন কি পরম? ইকার সঙ্গে স্বস্তিকার সম্পর্ক কেমন? “খুব ভাল। আপনি তো মাঝে মাঝেই দেখেছেন পার্টিতে দেখা হয় ওদের।”
এখনকার প্রেমিকা সামনে থাকাকালীন প্রাক্তনের সঙ্গে কী ভাবে কথা বলা উচিত? “আসলে প্রাক্তনের সঙ্গে সম্পর্ক কী ভাবে শেষ হয়েছে তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। খুব কন্ট্রোলড এক্সপ্রেশন থাকা উচিত।” রূপম মনে করেন, “যদি সম্পর্কের শেষটা তিক্ত হয়ে থাকে, তখন সেই প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে দেখা হলে তাকে এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। সে কী ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে আপনি তো জানেন না। অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি না হওয়াই ভাল।”
প্রাক্তন-বর্তমানের সমীকরণ নিয়ে লিখতে গিয়ে মনে পড়ে গেল এই কয়েক বছর আগের কথা। এবিপি আনন্দের স্টুডিওতে পরমব্রত-স্বস্তিকার ইন্টারভিউ করছি। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ফিল্মের প্রচারে। একে অপরের প্রেমে, খুব হাসিখুশি, সব প্রশ্নের দারুণ জবাব দিলেন পরম-স্বস্তিকা। পরমব্রত মণিকা বেলুচির গুণমুগ্ধ বলে স্বস্তিকা একটু লেগ-পুলও করলেন। পরম বললেন স্বস্তিকা কমার্শিয়াল ফিল্মের নায়িকা, কী জানি জ্যামিং কেমন হবে! এই ভাবনা মনে ছিল। তার পর প্রথম ছবিতেই দু’জনের ভাব জমে গেল, বন্ধু হল ওরা। |
টিপস |
• বর্তমান সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে পুরোনো সম্পর্কের একটা ধারণা অবশ্যই দিয়ে রাখুন।
• দেখা হলে কথার বিষয় হোক বর্তমান বা ভবিষ্যৎ।
• পুরোনো প্রেমিক বা প্রেমিকার দিকে এগিয়ে গিয়ে হাসুন বা সামান্য কথা বলুন।
• বর্তমান সঙ্গীকে পরিচয় করিয়ে দিন অতীতের সঙ্গীর সঙ্গে।
• আগের সম্পর্ক তিক্ত ভাবে শেষ হয়ে থাকলে পরিস্থিতি বুঝে প্রথমেই এড়িয়ে যান। |
|
প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে সাক্ষাতের পর যদি বর্তমান অনেক প্রশ্ন করে? রূপম মনে করেন,“এই রকম হলে বুঝতে হবে, যার সঙ্গে প্রেম করছেন তিনি ঠিক আধুনিক মনস্ক নন। এটুকু সততা থাকা বাঞ্ছনীয়। তাই বর্তমান প্রেমিক বা প্রেমিকা খুব বেশি প্রশ্ন করলে, বুঝে নিন বর্তমানকে অতীত করার সময় এসেছে।” পরমব্রত জানালেন,“এই পরিস্থিতিতে পড়েছি। ঠেকে শিখেছি। নিশ্চয়ই আমি সব প্রশ্নের উত্তর দেব, যতটা সম্ভব। কিন্তু সব কিছুরই একটা সীমা আছে। তাই কখন ব্যাখ্যা দেওয়া বন্ধ করা উচিত, সেটা জানা দরকার।”
সৃজিত আর স্বস্তিকাকে দেখে খারাপ লাগে? উত্তরে পরম বললেন, “প্রথম দেখে অবাক হয়েছিলাম। সৃজিত আমাদের প্রেম চলাকালীন খুব ক্লোজ ছিল দুজনেরই। কিন্তু পরে ভেবে দেখেছি, এবং মনে মনে যুক্তিও এসেছে কেন অবাক হব?” ওঁদের দেখে কোনও পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে? পরমের সংক্ষিপ্ত উত্তর “না।”
সদ্য চাকরিতে ঢোকা ঐন্দ্রিলা একটা বিষয়ে খুব সমস্যায় পড়ে। ওর মাইনাস পয়েন্ট হল প্রাক্তন বয়ফ্রন্ডের সঙ্গে তার বান্ধবী থাকলে, খুব নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। কী ভাবে পরিস্থিতি সামলাবে ঐন্দ্রিলা? পরমব্রতর সাফ জবাব,“খুব স্বাভাবিক ব্যবহার করবেন। ভাল ভাবে কথা বলবেন। গ্রিট করবেন। আর নিজেকে সামলাতে না পারলে, অল্প কথা বলে জায়গা পরিত্যাগ করুন।” ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই জানেন, সৃজিতের সঙ্গে পরমব্রতর সম্পর্ক বেশ ভাল। আহা, কারণটা এটা আপনাকে কে বলল? দু’জন সৃষ্টিশীল মানুষের মধ্যে ভাল র্যাপো থাকতে পারে না?
রূপম মনে করেন,“প্রাক্তনের সঙ্গে দেখা হলে অতীত নিয়ে কোনও কথা না বলাই ভাল। সেটা বোকামি হবে।” প্রয়োজনীয় পরামর্শ রূপমের। বরং ভবিষ্যৎ নিয়েই কথা বলা ভাল। “মানে, কী করছিস? কোথায় আছিস টাইপের কথাবার্তা। স্কুলের বন্ধু হলে আলাদা কথা। না হলে সেই চক্করে না পড়াই ভাল।”
সমাজবিজ্ঞানী অভিজিৎ মিত্র বললেন,“আগে প্রাথমিক অবস্থায় ছাড়াছাড়ির পর ছেলেমেয়েরা পরস্পরকে না দেখার ভান করত। এখন সম্পর্ক ভাঙলে দেখি ছেলে মেয়েরা বন্ধু হয়ে যায়। এই মুহূর্তে সমাজে সবাই খুব একা। নিঃসঙ্গতাও বাড়ছে। সেখানে পুরনো প্রেমিক প্রেমিকারা সম্পর্ক ভাঙলেও যে বন্ধু হয়ে উঠছে, এবং সেই বন্ধুত্ব যে সারা জীবন ধরে রাখছে সেটা আমার চোখে খুব পজিটিভ মনে হয়।”
কী বুঝলেন?
আরে বাবা, একটু বুদ্ধি করে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে স্বচ্ছতা আর সমতা রাখতে পারবেন না? প্রেম করেছেন, বেশ করেছেন। তাতে লুকোনোর কী আছে? কেরিয়ার নিয়ে ভাবার সময় বা একটা গাড়ি-বাড়ি কেনার আগে বা জীবন বিমা করার আগে কতই না সাবধানতা অবলম্বন করেন। অথচ প্রেমের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কেন যে আর একটু সাবধান হন না, কে জানে? আর একটা বিষয় মাথায় রাখুন, প্রাক্তনের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর, বর্তমান প্রেমিক বা প্রেমিকা হয়ত কিছু প্রশ্ন করবে। একটুও না ঘাবড়ে, প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারলে, আখেরে আপনারই লাভ। দেখবেন, এর পর হয়তো আপনাদের সম্পর্ক আরও কত গভীর ও মজবুত হয়েছে। পরস্পরের কত কাছে চলে এসেছেন আপনারা।
এক বার হাতটা শক্ত করে ধরে চোখে চোখ রেখে বুঝিয়ে দিন আপনি কতটা ভালবাসেন ওকে। দেখবেন এক লহমায় বরফ গলে জল হয়ে যাবে।
সেই উষ্ণতা, সেই স্পর্শ, সেই কাছে টানার রেশ হয়ত সারা জীবন আপনার সঙ্গী হয়ে থাকবে।
তার পর আর কী? কেল্লা ফতে... |
|
|
|
|
|