সারমেয় সাজ
“কানের পাশের চুলটা হাল্কা করে ট্রিম করে দিন। মাথার ওপরের দিকটা বেশি ছোট করবেন না। স্ট্রবেরি ফ্লেভারের শ্যাম্পু একদম নয়। নখগুলো ক্লিপ করবেন, তবে বেশি ছোট না।”
যদি ভাবেন এ সব কথাবার্তা তো যে কোনও সেলুন বা স্পা-তেই হতে পারে। তবে আপনি ডাহা ফেল। কথাবার্তাগুলো সেলুনের ঠিকই, তবে এ কোনও সাধারণ সেলুন নয়। এ হল কুকুরদের সেলুন।
“অবাক হওয়ার তো কিছু নেই। আমরা সেলুনে গিয়ে চুল ট্রিম করাই। স্পাতে শ্যাম্পু-কন্ডিশনার করাই। কুকুর বলে ও বাদ যাবে কেন? টমি তো আমাদের পরিবারেরই সদস্য। তাই ওরও সপ্তাহে এক দিন স্পা-তে আসা চাই,” বলছিলেন টমির বন্ধু বর্ষা। গোল্ডেন রিট্রিভার টমিকে তাঁর পোষ্য বলা একদম বারণ।
বর্ষার মতো অনেক উদাহরণ পাবেন কলকাতার যে কোনও ডগ স্পা বা সেলুনে ঢুঁ মারলেই। নিদেন পক্ষে ‘ডগ বুটিক’ দিয়ে গুগল সার্চ করে দেখতে পারেন।

ছবি: কৌশিক সরকার
গ্রুমিং চলছে
পোষ্য বলে ভাববেন না ওদের গ্রুমিংয়ে আপনার পার্লারে কাটানো সময়ের চেয়ে কম সময় লাগবে। বরং ওদের চুলের যা আধিক্য, তাতে সময় বেশি বই কম লাগবে না। আর শুধু কী চুল কাটা! কুকুরের গ্রুমিংয়েও বিস্তর হ্যাপা শ্যাম্পু করানো, কন্ডিশনার লাগানো, তার পর নখ ছাঁটা, ফাইল করা, এমনকী চাইলে নখে পরিয়ে দেবে ক্লিয়ার নেল পলিশ। শুধু সাজগোজ? একেবারে না। হাইজিনটাও ভীষণ দরকার। তাই কান পরিষ্কার করা, দাঁত মাজানোও আছে কুকুরদের এই গ্রুমিংয়ে। এত সব পর্ব পার করলে, পছন্দের পারফিউম লাগিয়ে তবে পার্লার থেকে বাড়ির পথে যাওয়া।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই ভাবছেন, এ তো বিস্তর খরচ! ‘বেস্ট ফ্রেন্ড পেট সেলুন’-এর জয়িতা গঙ্গোপাধ্যায় কিন্তু সে কথা একেবারেই মানতে চান না। তিনি বললেন, “কলকাতায় ডগ গ্রুমিং তো বেশ সস্তা। এখানে ফুল গ্রুমিংয়ে যেখানে খরচ পড়ে ১৫০০ টাকার মতো, বেঙ্গালুরু বা দিল্লিতে সেই খরচটাই দ্বিগুণ হয়ে যায়।”

সাজগোজ
গ্রুমিং তো কুকুরদের বুটিকের শুধু একটা অংশ মাত্র। কুকুরদের কিন্তু অ্যাকসেসরিজও চাই। নিজের জন্য ডিজাইনার ইয়ার রিং বা জিজাইনার কাফ লিঙ্ক কেনার সময়ই ওর জন্য কিনে নিতে পারেন ডিজাইনার কলার বা কাস্টম মেড টুথ ব্রাশ। এমনকী আপনি যদি টেক স্যাভি হন, তবে আপনার পোষ্যের কলারে লাগিয়ে দিতে পারেন জিপিএস লোকেটর।
ব্যস্, যেখানেই আপনি থাকুন না কেন ওর লোকেশন থাকবে আপনার হাতের তালুতে।
“অ্যাকসেসরিজ তো ঠিক আছে, কিন্তু লিশের চাইতে হারনেস কিন্তু অনেক নিরাপদ,” বললেন পশুচিকিৎসক ডা. এন রাম। আরও যোগ করলেন, “কলকাতায় কুকুরদের যে সমস্যাটা সব থেকে বেশি দেখি তা হল, ফাঙ্গাল ইনফেকশন আর খুশকি। তাই হাইজিন মাস্ট। আর একটা ব্যাপার মাথায় রাখা দরকার, কুকুরদের দাঁতের মাজনে যেন ফ্লোরিন না থাকে।”

শেখা-পড়া
শুধু গ্রুমিংটাই কিন্তু শেষ নয় আপনার পোষ্যকে ‘কুকুরের মতো কুকুর’ করে তোলার জন্য। আর সেখানেই দরকার হয় ট্রেনিংয়ের। তবে মনে রাখবেন ট্রেনার আর হ্যান্ডলার কিন্তু এক নয়। ডগ ট্রেনার কুকুরকে আদবকায়দা শেখায়, ডগ হ্যান্ডলার কুকুরকে দেখভাল করে মাত্র।
“শুধু কুকুরকে শিখিয়ে কিচ্ছু হবে না। কুকুরের মালিককেও উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে কুকুর ট্রেনড্ হবে, তবে সে ওই ট্রেনারের কাছে। আপনার কাছে নয়। ট্রেনার চলে গেলে কুকুর যেমন আপনার ওপর ছড়ি ঘোরাত তেমনই ঘোরাবে। কোনও লাভ হবে না,” বললেন জয়িতা। আর এক ডগ ট্রেনার শ্রুতিরও তেমনই অভিজ্ঞতা। বললেন, “এক বার একটা ল্যাব্রাডর ট্রেন করাতাম। কিন্তু মেয়েটা ট্রেনিংয়ের সময় নিজের মতো টেক্স্টিং-বিবিএম করে যেত। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছিল। ট্রেনিং শেষ হওয়ার পর অভিযোগ শুনেছিলাম কুকুর কিছুই শিক্ষা পায়নি। আরে, আমি তো জানি আসল গল্পটা কী!”
কুকুরদের বুটিক হচ্ছে ভাল। তবে সবার আগে কিন্তু স্বাস্থ্য। ওটা বাদ দিয়ে বিলাসিতার কোনও জায়গা নেই। আসলে সবার আগে দরকার সচেতনতা। পোষা কুকুর থাক আর না থাক। বিদেশে গেলেই তাই খারাপ লাগে কুকুরদের জন্য আলাদা পুলিশ স্কোয়াড দেখে..
দেবশ্রী রায়
যখন বাড়িতে নেই
গ্রুমিং-ট্রেনিংয়ের পালা সাঙ্গ। কিন্তু ধরুন তার মালিককে কোথাও যেতে হল। ওদিকে পোষা কুকুরকে নিয়ে সেখানে যাওয়া যাবে না। তখন? কোনও চিন্তা নেই। সে সমস্যার সমাধানেই তো আছে ডগ ক্রেশ। বেড়াতে যান কী কোনও কাজে, নিশ্চিন্তে আপনার প্রাণের পুষ্যিকে রেখে যেতে পারেন সেখানে। আরও অনেক কুকুরের সঙ্গে বেশ মজাতেই থাকবে সে। বেড়িয়ে আপনিও যখন রিফ্রেশড্ হয়ে ফিরবেন, আপনার পোষ্যও রিফ্রেশড্ হয়ে থাকবে আপনার অপেক্ষায়।
“যদি ক্রেশে রাখতে চান, মনে রাখবেন শহরের সেরা ক্রেশগুলোর কোনওটাই অল্প সময়ের নোটিসে আপনার পোষ্যকে তাদের ক্রেশে ঠাই দেবে না। তাই বেড়াতে যাওয়ার সময় ব্যাগ গোছানোর আগেই ক্রেশের ব্যবস্থা পাকা করে নিন। সব সময় সঙ্গে রাখবেন ভ্যাকসিনেশন রিপোর্ট। ওটা ছাড়া কোনও ক্রেশেই জায়গা হবে না,” বলছিলেন ‘ঈশিতাস্ ডগ কেয়ার অ্যান্ড ডগ ক্রেশ’য়ের ঈশিতা।

আমরা-ওরা
এতটা পড়ে নিশ্চয়ই ভাবছেন, এ তো শুধু খোদ কলকাতার ব্যাপার। তবে আর একবার হোঁচট খাবেন। কলকাতা নয়, বারাসত, ব্যারাকপুরের মতো শহরতলিতেও দিব্যি রমরমিয়ে চলছে কুকুরদের সেলুন। “কেন? আমাদের এখানে সিসিডি আছে, ডগ সেলুন থাকবে না কেন?” বললেন বারাসতের সুপ্রিয়। মাসে একবার করে সেলুনে নিয়ে যান তাঁর পোষা স্পিৎজকে।
ব্রিটনি স্পিয়ার্স তো নিজের কুকুরের নামে দিব্যি টুইটার অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, তা টলিউডের সেলিব্রিটিরা নিজেদের পোষ্যদের নিয়ে কতটা উৎসাহী? “ওহ্, আমি তো অপেক্ষা করে আছি কবে চিকুর (পোষা ল্যাব্রাডর) ভ্যাকসিনেশন শেষ হবে। ওটা শেষ হলেই ওকে নিয়ে স্পা-তে। স্পা-টাও বেছে রেখেছি। আর কী কী করাব সব প্ল্যানড্। শুধু দিনটার অপেক্ষা,” জানালেন অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.