|
|
|
|
ফারহানের গান-ব্যায়াম
গোয়াতে হয়ে গেল ‘ইন্ডিয়া-ফেস্ট’। কলকাতার বহু কলেজ পড়ুয়াও উপস্থিত
ছিলেন সেখানে। কী নিয়ে ফিরলেন তাঁরা? জানাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
ফারহান আখতার কি মিলখা সিংহের চরিত্রটা একটু বেশিই গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছেন?
হয়তো হ্যাঁ। হয়তো বা না।
তা না হলে চ্যানেল ভি-র ইন্ডিয়াফেস্ট অনুষ্ঠানের মাঝে গান গাইতে গাইতে হঠাৎ কেন ব্যায়াম করতে যাবেন?
এনার্জি সঞ্চয়? না কি এন্টারটেনমেন্টের শেষ কথা?
সারা ভারতের আঠেরোশো কলেজ থেকে একঝাঁক পড়ুয়া উপস্থিত এই শো-তে। সমস্বরে মেয়েরা চিল-চিৎকার করে বলে, “ফারহান, উই লাভ ইউ”। অভিনেতা-পরিচালক-গায়ক ফারহানের ঠোঁটে মৃদু হাসি। তার পর কয়েকটা পুশ-আপ। আবার শুরু,‘মেরি লন্ড্রি কা এক বিল...’
স্টেজের উষ্ণতা ততক্ষণে ছড়িয়ে গিয়েছে গোয়ার বাতাসেও। কিছু টুরিস্ট বাগা বিচে বসে বিয়ার মাগে সুখ-চুমুক দিচ্ছেন। আর বাকিরা ফারহানের শো-তে। তার জন্য প্রায় দুই কিলোমিটার লাইন। ফারহান যে দেশের শ্রেষ্ঠ গায়ক এ রকম দাবি করা যাবে না। কিন্তু তাঁর ‘শো-ম্যানশিপ’-এর তুলনা মেলা ভার। মনিকা ডোগরার ‘শরির অ্যান্ড ফাঙ্ক’ ব্যান্ডের পর ফারহানের পারফরম্যান্স। ‘ধোবি ঘাট’ আর ‘ডেভিড’ ছবির মোহময়ী অভিনেত্রী মণিকার শো-র পর হলেও ফারহানের অনুষ্ঠান দেখার জন্য উৎসাহী সকলে। |
সাউন্ড চেকিং-এ এহসান নুরানি এবং ফারহান আখতার |
কলকাতা থেকেও প্রচুর ছেলে-মেয়ের ঢল নেমেছে সেখানে। হর্ষবর্ধন ভান। আশুতোষ কলেজের কমিউনিকেটিভ ইংরাজির তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। এখানে ‘ফুটলুস’ নাচের প্রতিযোগিতায় জিতেছে সে। “আমি এর আগে ভারতে হওয়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দু’টো হিপ-হপ প্রতিযোগিতা জিতেছি। এর পরের ধাপটাই ছিল গোয়ার এই ফেস্টটা।” প্রতিযোগিতায় জিতেই হর্ষ অবশ্য সোজা চলে যায় ফারহানের শো দেখতে। “শো চলাকালীন ও যে ভাবে দর্শকের সঙ্গে একটা কানেকশন তৈরি করে ফেলে, জাস্ট অসাধারণ! তা ছাড়া ইবস ল্যারকও অসাধারণ। পৃথিবী বিখ্যাত এক জন ডিজেকে সামনে থেকে দেখাও ভাগ্যের ব্যাপার!”
কাব্যা দাগা ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটির ইংরাজির স্নাতক স্তরের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। ‘ইন্ডিয়া-ফেস্ট’-এর পপ-স্টার প্রতিযোগিতায় জয়ীদের এক জন। পেয়েছেন দশ হাজার টাকা মূল্যের পুরষ্কার। “দারুণ লাগছে! কলকাতার থেকে এসে এই রকম একটা বড় মাপের ফেস্টে অংশ নিলে বোঝা যায় আমরা সত্যিই কতটা ভাল বা খারাপ।” পারফরমেন্সের ব্যাপারে বললেন, “শঙ্কর-এহসান-লয়ের শো-টা ভুলতে পারব না কোনও দিন। আমি নিজে গান করি তাই বুঝতে পারছি যে ‘ব্রেথলেস’-এর
|
মণিকা ডোগরা |
মতো একটা গান পরপর দু’বার গাওয়াটা কত কঠিন। প্রথম বারের পর সবাই মিলে আবার গানটা গাইতে অনুরোধ করলাম। শঙ্কর বললেন, ‘শেষে এই গানটাতেই আপনাদের ‘ওয়ানস মোর’ বলতে হল!’ দ্বিতীয় বার গানটা শুনে পুরো পাগল হয়ে গিয়েছি! আর ফারহানের রসবোধ অসাধারণ! শো-এর সময় শ্রোতাদের ব্যারিকেড ভাঙতে দেখে বললেন, “আমি তো ভেবেছিলাম আপনারা আমাকে দেখে মূর্ছাই যাচ্ছেন বলে ব্যারিকেডটা প্রায় ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু এ তো দেখছি ঠেলাঠেলির জোরেই সবাই একে অন্যের উপরে পড়ছে!”
সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের মাস কমিউনিকেশনের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সুজন সেনগুপ্তও ছিলেন তার ব্যান্ড, ‘দ্য পারাডিজমে শিফ্ট’ নিয়ে। কোনও পুরস্কার জিততে না পারলেও শো থেকে অনেক কিছু শিখেছেন। “স্টেজে মাত্র ছয় মিনিট সময়ের মধ্যে একটা ব্যান্ডের প্রতিভা দেখানো সহজ না,” বললেন সুজন।
ফারহান আখতার আর এহসান নুরানির সাউন্ড চেক দেখাটা ছিল সবচেয়ে উত্তেজক অভিজ্ঞতা। “তখন মাঝদুপুর। গরমও খুব। তবু তা উপেক্ষা করেও ফারহান স্টেজে। সারাক্ষণ এহসান নুরানির সঙ্গে সাউন্ড চেক করে চলেছেন। শো-তে আমরা যে সহজাত পারফরমেন্স দেখতে পাই তার পিছনে এই সাউন্ড চেক-এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কলকাতাতে অনেকগুলো শো দেখেছি, তবে এই রকম সাউন্ড চেক দেখার সুযোগ হয়নি কখনও,” বললেন দুর্বার দে, সুজনের ব্যান্ডের এক সদস্য। সুজনের আরও ভাল লাগে রঘু দীক্ষিতের শো। “ওঁর মিউজিক এথনিক হলেও ওয়েস্টার্ন। মালয়ালম ভাষা যারা বোঝেন না তারাও ওঁর গানের বিষয়বস্তু বুঝতে পারবেন। ওঁকে দেখে বুঝেছি যে আমাদের কোথায় থাকার কথা আর আমরা এখন কোথায় রয়েছি!”
এটাই বোধহয় কলকাতার কলেজ পড়ুয়াদের সবথেকে বড় পাওনা। ট্রেনের কামরা ভর্তি করে গোয়ায় তিন দিনের জন্য পাড়ি দেওয়ার রোমাঞ্চ আলাদা। গান-নাচ-নাটক-ফ্যাশন শো আর সেলিব্রিটিদের এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ। ফেরার ট্রেনে সবার চোখে একটাই স্বপ্ন। হয়তো কোনও দিন ওই স্টেজটায় তাঁরাও সেলিব্রিটিদের মতো রাজত্ব করবেন। |
|
|
|
|
|