|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ১... |
|
কে বলে, বাংলার ইতিহাস নেই |
ইন্দ্রজিৎ চৌধুরী |
বাঙালির ‘ইতিহাস’ না-থাকা নিয়ে বঙ্কিমচন্দ্রের বিখ্যাত খেদোক্তির পর ১৩৩ বছর কেটে গিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বাংলার সব জেলা, নানা অঞ্চল, অনেক গ্রাম-শহর, এমনকী শহরের পাড়া নিয়ে কত শত ইতিহাস যে লেখা হয়েছে তার পুরো হিসেব এখনও করা হয়নি। গত কয়েক দশকে স্থানিক ইতিহাস চর্চার নতুন উদ্যম নজরে পড়ছে। এক দিকে উনিশ ও বিশ শতকের প্রথমার্ধের দুর্লভ ইতিহাস গ্রন্থগুলি ব্যাপক ভাবে পুনর্মুদ্রিত হচ্ছে, পাশাপাশি নতুন সংকলন বা পূর্ণাঙ্গ বইও কম নয়। তবে এই সব আকর সূত্রের উপর নির্ভর করে নতুন বিশ্লেষণী আলোচনার সংখ্যা এখনও নগণ্য।
দে’জ পাবলিশিং থেকে বারো বছর ধরে কমল চৌধুরীর সংগ্রহ ও সম্পাদনায় প্রকাশিত হচ্ছে জেলাভিত্তিক ইতিহাসের গ্রন্থ-প্রবন্ধের সংকলন। গোটা কুড়ি খণ্ডের সাম্প্রতিকের মধ্যে আছে নদিয়ার ইতিহাস (১ম পর্ব), সিলেটের ইতিহাস। উত্তরবঙ্গের ইতিহাস ও সংস্কৃতি গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে অবিভক্ত উত্তরবঙ্গ, বরেন্দ্রদেশ, গৌড়-বঙ্গ ও জনজাতি প্রসঙ্গে প্রায় অর্ধশত রচনা। বাংলাদেশেও জেলা-উপজেলার ইতিহাস-চর্চা চলছে পুরোদমে, ঢাকার ‘গতিধারা’-র এ সব বই পরিবেশক ‘নয়া উদ্যোগ’-এ গেলেই দেখা যাবে। কলকাতায় বসেও অনেকে চর্চা করছেন ফেলে আসা ঐতিহ্য— নারায়ণ পালের বাগেরহাটের ইতিহাস ও সাহিত্য সংস্কৃতি (১-২ পর্ব, উত্তরণ প্রকাশনী, বাণীপুর, ৪০০.০০) ন’বছরে তিনটি সংস্করণ হয়েছে। শেখর ভৌমিকের সম্পাদনায় পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে বাংলার আঞ্চলিক ইতিহাসের প্রথম বই কালীকমল সার্বভৌমের সেতিহাস বগুড়ার বৃত্তান্ত (বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষত্, ১০০.০০)।
মধুপ দে-র ঝাড়গ্রাম/ ইতিহাস ও সংস্কৃতি (মনফকিরা, ৩০০.০০) অবহেলিত এক অঞ্চলের সযত্ন বিবরণ। দেবাশিস ভট্টাচার্য লিখেছেন নাড়াজোল: এক অনন্য জনপদ (পরি: দে বুক স্টোর, ৩০০.০০)। দুষ্প্রাপ্য নথি ও ছবি বইটির সম্পদ। অমলেশ মিশ্র সম্পাদিত অবিভক্ত কাঁথি মহকুমার ইতিবৃত্ত (দে পাব, ১০০০.০০) ৩৭টি অধ্যায়ে ১২৫০ পৃষ্ঠায় বিপুল তথ্যভাণ্ডার। হেরিটেজ তথ্যপঞ্জি: পূর্ব মেদিনীপুর (প্রধান সম্পা. নির্মলচন্দ্র মাইতি, দীপ, ৫০০.০০) ঐতিহ্যের সার্বিক আলোচনার সঙ্গে তমলুক, কাঁথি ও এগরা মহকুমার ব্লকভিত্তিক বিবরণী, প্রচুর ছবি। তাম্রলিপ্ত সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মিলনী পত্রিকায় তমলুকের বিখ্যাত ‘প্রদীপ’ পত্রিকা থেকে তমলুক সংক্রান্ত লেখার সংকলন মূল্যবান। শ্যামল বেরা সংকলন করেছেন নিত্যানন্দের লোককাব্য/রূপ-রূপান্তর (সহজপাঠ ও সহজিয়া, ১০০.০০), কবি দয়ারামের সারদামঙ্গল ও লক্ষ্মীমঙ্গল (সূচনা, ১০০.০০), কবি নিত্যানন্দের লক্ষ্মীর জাগরণ পালা (সহজপাঠ ও সহজিয়া, ১০০.০০)। স্থানীয় অনুসন্ধিত্সুদের দীর্ঘ পরিশ্রমের ফল বর্ধমান ইতিহাস সন্ধান (সম্পা. জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য ও গিরিধারী সরকার, দে’জ, ৬৫০.০০)। বহু দুর্লভ ছবি সহ এই সংকলন বর্ধমানের ইতিহাস ও জনজীবন, কৃষি, শিল্প ও শিল্পকলা, বর্ধমান রাজ, বর্ধমান: অতীত থেকে বর্তমান ২৮টি নিবন্ধ ও বিস্তৃত গ্রন্থ ও প্রবন্ধপঞ্জিতে সমৃদ্ধ। পুরুলিয়ার মন্দির স্থাপত্য (১ম খণ্ড) লিখেছেন সুভাষ রায় (রাঢ়, ১৫০.০০), অবহেলিত জেলার এই স্থাপত্য-আলোচনা জরুরি ছিল। মাধব ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় প্রকাশিত হল বারাকপুরের ইতিহাস (সাহিত্য সৈকত, ২৫০.০০)। হাওড়া জেলা নিয়ে দুটি সাম্প্রতিক বই শিবেন্দু মান্নার হাওড়া/ইতিহাস-ঐতিহ্য (সহজপাঠ, ২৪০.০০) এবং সুকান্ত মুখোপাধ্যায়ের পুরনো হাওড়ার কথা (এন বি এ, ৭৫.০০)। প্রথমটি হাওড়ার ইতিহাসের সামগ্রিক তথ্য সংকলন, বিশেষত প্রত্নতত্ত্বের বিভিন্ন দিক সু-আলোচিত। দ্বিতীয়টি হাওড়া সংক্রান্ত নানা কৌতূহলদ্দীপক বিষয়ে আলোকপাত।
‘সোপান’ প্রকাশ করেছে সতীশচন্দ্র রায়চৌধুরীর বঙ্গীয় সমাজ (৪০০.০০), ‘সোপান পাবলিশার’ ছেপেছে রামপ্রাণ গুপ্ত অনূদিত ও সম্পাদিত গোলাম হুসেন সলীম-এর বাংলার ইতিহাস (রিয়াজ-উস-সালাতিন) (৩০০.০০), খালেকদাদ চৌধুরী অনূদিত মির্জা নাথান-এর বাহারীস্তান-ই-গায়বী (৫৫০.০০), চৌধুরী শামসুর রহমান অনূদিত ও সম্পাদিত আবিদ আলি খান-এর গৌড় ও পাণ্ডুয়ার স্মৃতি (২০০.০০)। মধ্য ও অন্ত্য-মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসের অমূল্য সূত্র এ তিনটি বই। নতুন সংস্করণে এল সুধীরকুমার করণের সুপরিচিত সীমান্ত বাঙলার লোকযান (আশাদীপ, ৩৫০.০০) এবং পুনর্মুদ্রণে এফ ডি অ্যাসকলি-র আর্লি রেভিনিউ হিস্টরি অব বেঙ্গল অ্যান্ড দি ফিফ্থ রিপোর্ট, ১৮১২ (অরুণা, ৫৯৫.০০)। চন্দ্রকান্ত ভৌমিক রচনাসংগ্রহ-এ (ভৌমিক এণ্ড সন্স, ৬৫.০০) আছে ত্রিপুরার ভূগোল, মেহারকালী মাহাত্ম্য, সীতাকুণ্ড ও চন্দ্রনাথ মাহাত্ম্য-র মতো অপ্রাপ্য বই। সূর্য্যকুমার ভূঞা সম্পাদিত ত্রিপুরা দেশের কথা অনুবাদ করেছেন মুক্তি চৌধুরী (অসম সাহিত্য সভা, ১২০.০০) ত্রিপুরা বুরঞ্জি এই প্রথম বাংলায় সুলভ হল। মোঃ শহীদুর রহমান দুই খণ্ডে প্রায় ১১০০ পাতায় ধরে রাখতে চেয়েছেন আদি বাংলার ইতিহাস (পরি: নয়া উদ্যোগ, ৭০০.০০)। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলার ইতিহাসের তথ্যাদি সাম্প্রতিক গবেষণা সহ এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পাওয়া যাচ্ছে আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার বাঙলাদেশের প্রত্নসম্পদ (দিব্যপ্রকাশ, ৮০০.০০)। এলিয়ট ও ডসন-এর ইংরেজি থেকে চাচ-নামা-র বঙ্গানুবাদ করলেন আরতি সেন (পরি: সেতু প্রকাশনী, ৭০.০০)। |
|
|
|
|
|