যুগলবন্দিতে ফুল ফুটুক না ফুটুক বাগানে আজ বসন্ত
মস্তিষ্ক-যুদ্ধে মাত কাশ্যপ, ‘এল মায়েস্ত্রো’ করিমই

মোহনবাগান: ৩ (টোলগে, জুয়েল, ওডাফা)
ওএনজিসি: ১ (সুরাবুদ্দিন)
মাত্র একশো দশ দিনের ব্যবধান। কিন্তু কী অদ্ভুত বৈপরীত্যের ছবি যুবভারতী আর কল্যাণী স্টেডিয়ামের ক্যানভাসে!
বারোই অক্টোবর ২০১২-র যুবভারতী। র‌্যান্টি মার্টিন্সের ইউনাইটেড স্পোর্টস বনাম মোহনবাগান ম্যাচের স্মৃতি এখনও টাটকা অনেকের কাছেই। ওডাফা ওকোলি পুরো ম্যাচে তাঁর অস্ট্রেলীয় সতীর্থর জন্য বল বাড়িয়েছিলেন সাকুল্যে গোটা চারেক। হেরে দু’জনেই গজরাতে-গজরাতে ড্রেসিংরুম ছেড়েছিলেন সে দিন।
তারপর ফের ওডাফা আর টোলগের দেখা শুক্রবার। পয়লা ফেব্রুয়ারি ২০১৩-র কল্যাণী স্টেডিয়ামে। ওডাফা বল ধরলেই খুঁজছিলেন টোলগে ওজবেকে। গোলও করালেন তাঁকে দিয়ে। আর টোলগে? ক্যাপ্টেনকে দিয়ে গোল করানোর জন্য তাঁর আকুতি দেখে মনে হচ্ছিল, গোলাপ নিয়ে প্রেমিকাকে খুঁজছেন! ওডাফা গোল করার পর টোলগে যে ভাবে তাঁর কোলে ওঠার জন্য ঝাঁপালেন তা দেখে এক মোহন কর্তা বললেন, “একেই বলে ঠেলার নাম বাবাজি।”
তা হলে কোনও কিছুই চিরস্থায়ী নয়! ওডাফা-টোলগের যুগলবন্দি বাগানে ‘বসন্ত’ আনল বটে কিন্তু বাগানে ‘ফুল’ কি ফুটবে? করিম বেঞ্চারিফা মাথা চুলকে বললেন, “জিতে যেতে হবে। একমাত্র তা হলেই অবনমন বাঁচবে। আমরা প্রতিদিন উন্নতি করছি। আমি আশাবাদী।”
দুঃসময়ে সবচেয়ে কাঙ্খিত দুটি মুহূর্ত। কল্যাণীতে শুক্রবার।
অবনমনের জটিল অঙ্কের জট ছাড়ানোর সময় এখনও আসেনি। বহু ‘যদি’, ‘কিন্তু’র পর যে সার সত্যটা চুম্বকে উঠে আসছে তা হলজিতলেও লিগ টেবলে এখনও সবার শেষে পনেরো কোটির টিম। খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মোহনবাগান বাঁচবে তখনই, যদি বাকি ১২ ম্যাচ থেকে অন্তত ২৪ পয়েন্ট পান ওডাফারা।
তা হলে ওই যে টিম বাসের চাকায় জড়িয়ে যাচ্ছে শ’য়ে শ’য়ে সবুজ-মেরুন জনতা। প্রায় আড়াই মাস পর একটা ম্যাচ জিতে ওডাফা-টোলগে-নবিদের ঘিরে কালো মাথার গিজগিজে ভিড়...এ সব কীসের তাগিদে? রহিম নবি বললেন, “আজকের ম্যাচ না জিতলে কি ৯ ডিসেম্বরের ডার্বি ম্যাচের লাইফ লাইন পেতাম? ইস্টবেঙ্গলকে কিন্তু আমাদের হারাতেই হবে। ওই ম্যাচ জিতলেই দেখবেন আমরা অবনমন বাঁচিয়ে ফেলব।”
ডার্বি ম্যাচের রিহার্সাল যদি হয় শুক্রবারের ম্যাচ, তা হলে কিন্তু লিখে দেওয়াই যায় করিম ব্রিগেড ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করে গিয়েছে। তীব্র চাপ থেকে বেরিয়ে এসে যে ভাবে ওডাফা-টোলগেরা ফুটো করে দিলেন তেল কোম্পানির টানা ছয় ম্যাচ অপরাজিত থাকার ‘ট্যাঙ্কার’, তা নম্বর পাবেই।
সন্তোষ কাশ্যপের ওএনজিসি হেলাফেলার দল নয়। দিল্লিতে কাতসুমি-হাসানদের কাছে হেরেছিল মর্গ্যানের ইস্টবেঙ্গল। হেরেছিল ডেম্পোও। সবথেকে বড় কথা, সন্তোষ কয়েক মাস আগেই ছিলেন ওডাফা-নির্মল-ইচেদের কোচ। পালতোলা নৌকাকে আটকাতে কোন ঢেউয়ে ভাসতে হবে, তা জানতেন তিনি। কিন্তু সন্তোষ যদি হন বুনো ওল তা হলে করিম বেঞ্চারিফাও তো বাঘা তেঁতুল।
করিমের মোহনবাগান শুরু করল ৪-৩-৩ এর অপ্রত্যাশিত চমক দিয়ে। ওডাফা-টোলগের পাশে রহিম নবি। মরসুমে প্রথমবার এই স্ট্র্যাটেজিতে দল নামানোর সঙ্গে সঙ্গেই ওলটপালট হয়ে গেল তেল কোম্পানির রক্ষণ। চার কোটির দুই মোহন-তারকার জন্য বরাদ্দ ছিল ডাবল কভারিং। কিন্তু আনমার্কড নবির দৌড় শুরু হতেই সব ছিন্নভিন্ন। গোলের শুরু তখনই।
আই লিগের সাপ-লুডো
• শুক্রবার লিগ টেবলের শীর্ষে থাকা চার্চিল ব্রাদার্সকে হারিয়ে দিল স্পোর্টিং ক্লুব (১৮ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট)। ফলে খেতাব জয়ের প্রশ্নে আশা বাড়ল ইস্টবেঙ্গলের। পাশাপাশি, জিতেও জটিল মোহনবাগানের অবনমন বাঁচানোর সমীকরণ।
• আই লিগে এই মুহূর্তে অবনমনের আওতায় থাকা চার দল মোহনবাগান (১৪ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট), ইউনাইটেড সিকিম (১৮ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট), সালগাওকর (১৭ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট) এবং লাজং এফসি (১৮ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট)।
• মোহনবাগানের খেলা বাকি ১২। করিমের অঙ্ক অনুযায়ী, অবনমন বাঁচাতে জয় দরকার আরও আট ম্যাচে। ওডাফাদের খেলতে হবে ইস্টবেঙ্গল, ডেম্পো, পুণে, চার্চিল (দু’বার)-এর মতো জোরদার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এ দিন জিতে কিছুটা স্বস্তিদায়ক জায়গায় স্পোর্টিং।
টোলগের গোলটার সঙ্গে সঙ্গেই বদলে গেল মরোক্কান কোচের ফর্মেশন। নবি চলে এলেন মাঝমাঠে। মোহনবাগান ৪-৪-২ হওয়ার পর শুরু হল ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’। নবি-স্নেহাশিস, জুয়েলরা পজিসন বদলাতে শুরু করলেন নিজেদের মধ্যে। আর সেই গোলকধাঁধাঁ তৈরি করে ২-০ করে ফেলল বাগান। করিম বুঝিয়ে দিলেন মস্তিস্ক যুদ্ধে তিনি কাশ্যপের চেয়ে কয়েকশো মাইল আগে। কোচেদের কোচ। স্প্যানিশে যাঁকে বলে ‘এল মায়েস্ত্রো’।
শিল্টন পাল ম্যাচের সেরা হলেন দু’টো ভাল সেভ করে। সেটা অবশ্য ম্যাচের সঙ্গে একেবারেই মানানসই নয়। ওডাফা একটা গোল করলেন। কিন্তু পেতেই পারতেন হ্যাটট্রিক। নাইজিরিয়ান গোলমেশিনের একটা হেড পোস্টে লেগে ফিরল। হ্যাটট্রিক না হোক, শাস্তি এবং জরিমানা দিয়ে মাঠে ফেরার পর মোহন-অধিনায়ক যেন হয়ে উঠেছেন শান দেওয়া ছুরি। হোসে ব্যারেটো বলছিলেন, “আমি জানতাম ওডাফা ফিরলেই, মোহনবাগান জিতবে।”
সবুজ তোতা ভুল বলেননি। ওডাফার ছোট ছোট ড্রিবল আর বল পায়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই দৌড়ে বিপক্ষ গোলে ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি এ দিন ‘যুদ্ধং দেহী’ মেজাজ এনে দিয়েছিল পুরো করিমের টিমে। টোলগে তাতে সঙ্গত করলেন। শিল্টনও। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের আগে মোহনবাগানকে লেটার মার্কস দেওয়া যাচ্ছে না তিনটে কারণে।
এক) মাঝমাঠের এবং রক্ষণের মাঝখানে বড় ফাঁক তৈরি হচ্ছে মাঝেমধ্যে। লাল-হলুদের পেন ওরজি যে ওখানেই খেলেন।
দুই) মিস পাসের ছড়াছড়ি। যা থেকে এ দিন গোল করে গেলেন সুরাবুদ্দিন। গোল পেতে পারতেন এরিক, কাতসুমিও।
তিন) সেট পিস কার্যকর করতে না পারার দৈন্য।
ম্যাচের পর ওএনজিসির জাপানি ফুটবলার কাতসুমি চিৎকার করছিলেন। কাঁদছিলেন। পেনাল্টি না দেওয়ার জন্য রেফারির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলছিলেন।
কে তাঁকে বোঝাবে, ওডাফা-টোলগে যুগলবন্দি যে দিন জ্বলবে, সে দিন বাগানে আলো জ্বালানোর জন্য আর কিছু লাগে না!

মোহনবাগান: শিল্টন, নির্মল, ইচে, আইবর, স্নেহাশিস, জুয়েল (মনীশ), মণীশ মৈথানি, ডেনসন, নবি, টোলগে (কুইনটন), ওডাফা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.