জিটি রোড
রাতের জট
রাত ৮টা। পাল্টে যায় ছবি।
শুরু হয় নিয়ম ভাঙার খেলা। ফল, সাধারণ মানুষের ভোগান্তি।
রাতে লরির জটে এমনই অবস্থা হয় জিটি রোডের। বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, রাত ৮টার পরেই দুর্ভোগ শুরু হয়। আধ ঘণ্টার পথ পেরোতে দেড় ঘণ্টা লেগে যায়। সমস্যা মেটাতে দেখা মেলে না ট্রাফিক পুলিশেরও। এলাকাবাসীর দাবি, রাতে পুলিশ সুষ্ঠু ভাবে লরি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করুক।
হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট তৈরির পরেই পুলিশকর্তারা শহরকে যানজট মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। হাওড়ার লাইফলাইন জিটি রোডকে যানজট মুক্ত করাই ছিল মূল লক্ষ্য। পুলিশকর্তারা ঠিক করেন, সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কোনও লরি কিংবা মালবাহী যান শহরে ঢুকবে না। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ শুরু হয়। জিটি রোড দিয়ে শহরে ঢোকার সব রাস্তায় পুলিশি পাহারা বসানো হয়। জিটি রোডে একমুখী যান চলাচল ব্যবস্থা কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
বাসিন্দারা জানান, এর ফলে জিটি রোডে যান চলাচল ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। বাসে বালি থেকে দেড় ঘণ্টার জায়গায় আধ ঘণ্টায় হাওড়া পৌঁছনো যাচ্ছে। কিন্তু রাত ৮টার পরেই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। রাত ৯টা থেকে পুরোমাত্রায় যানজট শুরু হয়। সব থেকে বেশি সমস্যা হচ্ছে উত্তর হাওড়ার জয়সোয়াল হাসপাতাল মোড় থেকে বালিখাল পর্যন্ত। এই ৬ কিলোমিটার অংশ দিনে পেরোতে ১০-১৫ মিনিট লাগে। রাতে লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। ফলে বাসে, গাড়িতে আটকে হয়রান হন যাত্রীরা।
কেন এই দুর্ভোগ?
নিয়মানুযায়ী, রাত ৮টার পরেই জিটি রোডে একমুখী যান চলাচল ব্যবস্থা উঠে যায়। শুরু হয়ে যায় লরি চলাচলও। জিটি রোড দিয়ে ঘুসুড়ি, লিলুয়া, বেলুড় এলাকার শিল্পাঞ্চলে আসা-যাওয়া করে মালবাহী লরি। লরি পার্কিংও হয়। ফলে রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ে। চলে মর্জিমাফিক ওভারটেকও। দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। জয়সোয়াল মোড় থেকে ডনবসকো মোড় পর্যন্ত কোনও ভাবে পৌঁছনো গেলেও তার পরে দীর্ঘ গাড়ির লাইন দাঁড়িয়ে যায়। অভিযোগ, লিলুয়া বড় গেটের কাছে একটি পেট্রোল পাম্পে মর্জিমাফিক লরিগুলি তেল নিতে ঢোকে-বেরোয়। তাই এই জট। এই জায়গা পেরোতেই এক ঘণ্টা লেগে যায়।
নিত্যযাত্রীদের অভিজ্ঞতা, রাত ১০টার পরে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বেলুড় বাজারের তিন রাস্তার মোড়ের, তিন দিকেই লরির লম্বা লাইন লেগে যায়। বেলুড় মঠ, লিলুয়া, গিরিশ ঘোষ রোড, কোনও দিকেই যাওয়া যায় না। এ রাস্তার নিত্যযাত্রী স্বপন তালুকদার বললেন, “দেড় ঘণ্টার মতো বাসে বসে থাকতে হয়। হেঁটে ফেরার উপায়ও নেই।” এই জট চলে বালিখাল পর্যন্ত।
তা হলে কি জিটি রোডে রাতে লরি চলবে না?
বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীদের দাবি, রাতে সুষ্ঠু ভাবে লরি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। তাই রাতে ট্রাফিক পুলিশের প্রয়োজন। কিন্তু রাত ৮টার পরেই কার্যত ট্রাফিক পুলিশের দেখা মেলে না। তাঁদের প্রশ্ন, হাওড়া স্টেশন চত্বর, সালকিয়া চৌরাস্তায় রাতে পুলিশ থাকতে পারলে এখানে পুলিশ থাকবে না কেন? যদিও এক ট্রাফিক পুলিশকর্মীর বক্তব্য: “সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ডিউটি থাকে। বিশেষ ক্ষেত্রে ৮টার পরেও রাস্তায় থাকতে হয়। যানজট বেশি হলেও তা ছাড়াতে যেতে হয়।”
হাওড়ার ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) অখিলেশ চতুর্বেদী অবশ্য এই অবস্থার জন্য কম কর্মীসংখ্যাকেই দায়ী করেছেন। তাঁর কথায়: “অনেক সময়েই গাড়ি খারাপ হয়ে যানজট হয়। মোবাইল ভ্যানগুলিকে যানজট হলেই ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে রাতে জিটি রোডে লরি চলাচলের সময় যানজট মোকাবিলার জন্য নতুন পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.