সম্পাদকীয় ১...
সুলক্ষণ
গোর্খাল্যান্ড প্রসঙ্গ লইয়া গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতৃত্বের সহিত রাজ্য সরকারের দ্বন্দ্বের আঁচ কিছুটা প্রশমিত। দার্জিলিঙে জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং গোর্খা আঞ্চলিক প্রশাসনের সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ উভয়েই যে চড়া সুরে নিজ নিজ রাজনৈতিক অবস্থানে অনমনীয় থাকেন, তাহাতে বিরোধের পারদও চড়িয়া যায়। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টা কাটিতে না কাটিতেই যে উভয় তরফেই বরফ গলানোর সচেতন প্রচেষ্টা লক্ষিত হইয়াছে, ইহা স্বাগত। বিশেষত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে সমগ্র বিরোধটিকে নিছক ‘মান-অভিমানের সমস্যা’ রূপে শনাক্ত করিয়া অচিরে তাহা মিটিয়া যাওয়ার আশ্বাস দিয়াছেন, ইহাতে তাঁহার রাজনৈতিক বাস্তববোধেরই পরিচয় মিলিয়াছে। অভিমান সরাইয়া রাখিয়া মাস খানেকের মধ্যেই আবার পাহাড়ে যাওয়ার ইচ্ছা জ্ঞাপন করার মধ্যেও পরিপক্বতারই ইঙ্গিত। এই নমনীয় আচরণের কতটা বাস্তবিকই মানসিক সহনীয়তার পরিচায়ক, আর কতটা নিতান্ত ব্যবহারিক কৌশল, অথবা চাপে পড়িয়া পিছু হটিবার রণনীতি মাত্র, তাহা লইয়া জল্পনা চলিতে পারে। কিন্তু রাজনীতিতে কৌশল বা রণনীতিও নগণ্য নয়। রাজনীতিকের, বিশেষত প্রশাসকের আচরণ, আচরণ হিসাবেই, গুরুত্বপূর্ণ।
বস্তুত, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগই প্রধানত তাঁহার আচরণকে কেন্দ্র করিয়া। সচরাচর সকল বিষয়েই তাঁহাকে বড় বেশি চড়া সুরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাইতে দেখা ও শুনা গিয়াছে। তিনি যে মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসনিক আধিকারিক, তাঁহার যাবতীয় বক্তব্যই যে জনসাধারণের কাছে সরকারি নীতির বৈধতা লইয়া হাজির হয়, প্রায়শ সে কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খেয়াল থাকে না। বরাবর রাজ্য-রাজনীতিতে বিরোধী নেত্রীর ভূমিকা পালনে অভ্যস্ত মমতা শাসক পদে নিজের রূপান্তরের সহিত বোধ করি এখনও সামঞ্জস্য বিধান করিয়া উঠিতে পারেন নাই। মুখ্যমন্ত্রিত্বের পদমর্যাদা সম্পর্কে তিনি হয়তো অতিমাত্রায় সচেতন এবং স্পর্শকাতর, কিন্তু ওই পদের দায়িত্ববোধ বিষয়ে সম্যক ধারণা ও বোধ এখনও তাঁহার অনায়ত্ত বলিয়াই বোধ হয়। বিরোধী নেত্রীর অগ্নিবর্ষী, জঙ্গি হাবভাব একদা বামবিরোধী আন্দোলনের সমাবেশবিন্দু রূপে তাঁহার বিশ্বাসযোগ্যতা তুঙ্গে তুলিয়া থাকিলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতার কাছে রাজ্যবাসী দায়িত্বপূর্ণ, সংযত আচরণই প্রত্যাশা করেন। পার্বত্য দার্জিলিঙের জনজাতীয় গোর্খারাও পশ্চিমবঙ্গেরই রাজ্যবাসী। তাঁহাদের ধমকধামক দিয়া নিজের ক্ষোভ ও ক্ষমতা বুঝাইতে গেলে হিতে বিপরীত হওয়ারই আশঙ্কা। বিলম্বে হইলেও মুখ্যমন্ত্রী যে বিষয়টি উপলব্ধি করিয়াছেন, ইহা তাঁহার পক্ষে মঙ্গলকারক।
রাজ্যবাসী দেখিতে চাহিবেন, সকল বিষয়েই মুখ্যমন্ত্রী অতঃপর বাস্তববোধসম্পন্ন ও প্রয়োজনে নমনীয় মনের পরিচয় দিবেন। দলবাজি রুখিবার প্রতিশ্রুতি দিয়া ভোটে লড়িলেও তাঁহার সরকার যে-ভাবে প্রশাসন ও পুলিশের সর্বস্তরে দলদাস তৈয়ারির কারখানা হইয়া উঠিবার অভিযোগে অভিযুক্ত, হাসপাতালে, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে বৈষম্য সৃষ্টির সমালোচনা যে ভাবে বাড়িতেছে, বিচারকদের সম্পর্কে যে-ধরনের আপত্তিকর মন্তব্য ছুড়িয়া দেওয়া হইতেছে, বিরোধী দল সম্পর্কে যে ভাষা ব্যবহার করা হইতেছে, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের দিকে যে ভাবে চোখ বুজিয়া থাকা হইতেছে, অপছন্দের মত পোষণ বা প্রকাশ করিলেই যে ভাবে তাহা দমন করার অপচেষ্টা হইতেছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই মুখ্যমন্ত্রীর সুস্পষ্ট দায় রহিয়াছে সরকার ও দলকে সংযত ও সহিষ্ণু করিয়া জনকল্যাণে নিয়োজিত করার। কেবল গরম-গরম বুলি, আস্ফালন, হুমকি ও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করিয়া রাজ্যবাসীর বিরাগভাজন এবং অবশিষ্ট দেশবাসীর কাছে হাস্যাস্পদ হওয়ার দরকার কী? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো কেবল তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকদের মুখ্যমন্ত্রী নন, সমগ্র রাজ্যবাসীর মুখ্যমন্ত্রী, বিমল গুরুঙ্গের, অম্বিকা মহাপাত্রের, শিলাদিত্য চৌধুরীর, রেজ্জাক মোল্লার, এমনকী পার্ক স্ট্রিট ও কাটোয়ার ধর্ষিতাদেরও মুখ্যমন্ত্রী। কথাটি তাঁহাকে সর্বদাই মনে রাখিতে হইবে। নহিলে আর তিনি তাঁহার পূর্বসূরি অপেক্ষা স্বতন্ত্র কীসে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.