মূল উদ্দেশ্য থেকে সরিয়ে ডুয়ার্স উৎসবকে ‘জলসায়’ পরিণত করার অভিযোগ তুলে উৎসব বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। গত বছর, প্রকাশ্যে বয়কটের কথা ঘোষণা না করলেও তৃণমূলের একটি বড় অংশ নিজেদের উৎসব থেকে সরিয়ে রেখেছিলেন। এ বার দলগত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে উৎসব বয়কটের ঘোষণা করা হয়েছে। আজ শুক্রবার উৎসবের উদ্বোধনে অনুষ্ঠানে শাসক দলের নেতা-প্রতিনিধিকে আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে দেখা যাবে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
কেন তৃণমূলের এমন সিদ্ধান্ত? উৎসবের আমন্ত্রণ পত্রে অতিথি হিসেবে নাম রয়েছে ফালাকাটার বিধায়ক তথা তৃণমূল কংগ্রেসের আলিপুরদুয়ার সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অনিল অধিকারীর। এদিন তিনি বলেন, “উৎসব নিয়ে আমার সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি। সাধারণ বাসিন্দাদের সামিল না করে আলিপুরদুয়ারের মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি এই অনুষ্ঠানকে শহরের বার্ষিক জলসায় পরিণত করেছেন। আমি ওই অনুষ্ঠানে যাব না।” তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা মৃদুল গোস্বামী বলেন, “দলগত ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই ডুয়ার্স উৎসব বয়কট করা হয়েছে। উৎসবের উদ্দেশ্য ছিল, এলাকার পর্যটন, স্থানীয় জনজাতি এবং লোকসংস্কৃতির বিকাশ ও চা শিল্পকে তুলে ধরা। তার বদলে মেলা বসানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পুলিশের নাকের ডগায় আইন অমান্য করে জলসা চলে। উৎসব কমিটির কোষাধ্যক্ষ পদে সরকারি আধিকারিকে চেয়েছিলাম। গত বছর প্রায় ১৭ লক্ষ টাকার প্রতারণার মত ঘটনাও ঘটেছে।”
যদিও নবম ডুয়ার্স উৎসব কমিটির সাধারণ সম্পাদক তথা আলিপুরদুয়ার পুরসভার চেয়ারম্যান দীপ্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “উৎসব নিজের গতিতেই চলবে। ডুয়ার্স উৎসবে রাজনীতি করার জায়গাই নয়। সবাইকে উৎসব কমিটির বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। সেখানে অনেকেই আসেননি। তবে মুষ্টিমেয় ব্যক্তির জন্য উৎসবে কোনও প্রভাব পড়বে না। আমরা চাই সবাই উৎসবে আসুন।” ১০ ফেব্রয়ারি পর্যন্ত উৎসব চলবে। উৎসব প্রাঙ্গন থেকে পর্যটকদের ঘোরার ব্যবস্থা রয়েছে বলে কমিটি জানিয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, ডুয়ার্সের জনজাতির মানুষদের নিয়ে লোক সংস্কৃতি কমিটি গঠন, বিভিন্ন চা বাগনের ষ্টল, পর্যটনের প্রচারের উদ্যোগ না করে উৎসব প্রাঙ্গনে একটি নামমাত্র একটি লোক সংস্কৃতি মঞ্চ করা হয় এবং বহিরাগত শিল্পীদের অনুষ্ঠান হয় মূল মঞ্চে।
তৃণমূলের নেতা জহর মজুমদারের অভিযোগ, তাঁকে না জানিয়েই উৎসবের আমন্ত্রণে তাঁর নাম ছাপানো হয়েছে। উৎসবের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তুলেছেন তিনি। কালচিনি ব্লকের আরএসপি নেতা রামকুমার লামা বলেন, “মূল উৎসব আলিপুরদুয়ারে হলেও উৎসবের দিনগুলি ডুয়ার্সের অনান্য এলাকায় অনুষ্ঠান করলে উৎসবটি ডুয়ার্সের সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যেত।” উৎসবের সাধারণ সম্পাদক দীপ্ত বাবু বলেন, “গত বছর বহিরাগত এক ব্যবস্থাপক টাকা নিয়ে চুক্তিভঙ্গ করে পালিয়ে যায়। সে ঘটনায় থানাতেও অভিযোগ করা হয়েছে। আর বাকি যা অভিযোগ তা নেহাতই অপপ্রচারও। এবারও সাধারণ বাসিন্দারা উৎসবে আসবেন।” |