রাস্তার ধারে নিকাশি নালার উপরে অবৈধ ভাবে স্থায়ী দোকান নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলেরই এক স্থানীয় নেত্রী এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে। শিলিগুড়ি পুরসভার ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে ওল্ড মাটিগাড়া রোডের ওই ঘটনা। এলাকার ভারতী হিন্দি হাইস্কুলের কাছে নিউ কলোনি ১ নম্বর রাস্তা লাগোয়া অংশে হাইড্রেনের জায়গায় ওই নির্মাণ কাজ হচ্ছে। ঘটনাক্রমে সেটি পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের প্রাক্তন মেয়র নুরুল ইসলামের ওয়ার্ড। তৃণমূল-সিপিএম যোগসাজশেই ওই অবেধ নির্মাণ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, অভিযুক্ত তৃণমূল নেত্রী মৌমিতা মজুমদার গত পুর নির্বাচনে নুরুলবাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তাই নুরুলবাবুর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ওই বেআইনি কাজ করেও তিনি পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। এমনকী, তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, নুরুলবাবু এলাকার কাউন্সিলর হিসেবে আপত্তি না-করায় পুরসভার কংগ্রেসের বিল্ডিং বিভাগের মেয়র পারিষদ সঞ্জয় পাঠক কিংবা পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদ তথা তৃণমূল নেতা কৃষ্ণ পালও কিছু করছেন না।
পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “এমন হওয়ার কথা নয়। নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি দেখতে পুর কর্মীদের পাঠান বিল্ডিং বিভাগের মেয়র পারিষদ সঞ্জয় পাঠক। সঞ্জয়বাবু বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নর্দমার অংশে স্থায়ী নির্মাণ ঠিক নয়।” |
অবৈধ নির্মাণ। —নিজস্ব চিত্র। |
কংক্রিটের ছাদ ঢালাই করে বিল্ডিং তৈরি করলেও পুরসভার কোনও রকম অনুমতি তারা নেননি। মৌমিতাদেবীর দাবি, “লাগোয়া দোকান পাকা করার ক্ষেত্রে কোনও নকশা নেই। তবে মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পালের সঙ্গে কথা বলেছি। তা ছাড়া বিরোধী দলনেতা তথা এলাকার কাউন্সিলর নুরুল ইসলামও বিষয়টি জানেন। নুরুলবাবু বাধা দেননি।” মৌমিতাদেবীর স্বামী রাজুবাবুর দাবি, নর্দমার অংশটি দোকানের পিছনের দিকে। তা ছাড়া এ ভাবে নির্মাণ এর আগেও হয়েছে। এই রাস্তার ধার বরাবর দোতলা নির্মাণ রয়েছে রেলের এবং পূর্ত দফতরের জায়গায়। তখন কোনও অভিযোগ ওঠেনি। এখন রাজনৈতিক স্বার্থে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ওই অভিযোগ তোলা হচ্ছে বলে তাঁর দাবি।
নুরুলবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, ওই নির্মাণ কাজের ব্যাপারে তিনি কোনও রকম অনুমতি দেননি। তিনি বলেন, “অনুমতি দেওয়ার এক্তিয়ার আমার নেই। এটুকু বলতে পারি নিয়ম মেনেই এ সব কাজ করা উচিত।” পুরসভার পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদ কৃষ্ণবাবু বলেন, “আমি এ ধরনের কোনও অনুমতি দিইনি। নর্দমার অংশে কংক্রিটের পাকা দোকান নির্মাণ করা উচিত নয়।” পুরসভা এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি লাগোয়া মৌমিতাদেবীদের একাধিক দোকান ঘর ছিল। তার মধ্যে ৩ টি তাঁরা বিক্রি করেছেন। একটিতে তাদের মিষ্টির দোকান এখনও রয়েছে। যে ৩টি দোকান বিক্রি করেছেন সেগুলি এবং লাগোয়া মৌমিতাদেবীদের আরও দু’টি দোকান একযোগে ছাদ দিয়ে পাকা করা হচ্ছে। যে তিনটি দোকান মৌমিতাদেবী এবং তাঁর স্বামী রাজুবাবুর কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা কিনেছেন তাঁরা জানান, পাকা নির্মাণের খরচ-সহ যাবতীয় বিষয় রাজুবাবু দেখছেন। দোকানের ছাদের জায়গা রাজুবাবু ব্যবহার করবেন এটাই শর্ত। দোকানের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পাশে অন্য দোকানে তাদের কারবার করতে দেওয়া হয়েছে।
বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, এর আগেও ওই রাস্তায় ডায়মন্ড স্পোর্টিং ক্লাবের কাছে রাজু ঘোষ নামে একজন এ ভাবে নির্মাণ কাজ করছিলেন। পুরসভার তরফে সে সময় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজুবাবু জানিয়েছেন, পুরসভার তরফে নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বলায় আর কাজ করেননি। তবে তিনি নিজে নির্মাণ কাজটি করেননি। তাঁরই একজন পরিচিত যুবককে ওই জায়গায় দোকান করতে দিয়েছিলেন। |