বিরোধী শূন্য বোর্ড মিটিং ৭ মিনিটেই শেষ হল। তার মধ্যে ১ মিনিট সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন যাঁরা তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নীরবতা পালন। আর তৃণমূলের কাউন্সিলর তথা ৩ নম্বর বরো কমিটির চেয়ারম্যান নিখিল সাহানির একটি প্রশ্ন। বৃহস্পতিবার এই ছিল শিলিগুড়ি পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ের বিস্তারিত। দলত্যাগী চেয়ারম্যান নান্টু পালের পদত্যাগ দাবি করে গত অক্টোবর মাস থেকে মাসিকসভায় থাকছেন না বিরোধী বাম কাউন্সিলররা। তাতে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের ক্ষমতায় থাকা শিলিগুড়ি পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে উন্নয়ন প্রশ্নে আলাপ-আলোচনা কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে।
কংগ্রেসের কাউন্সিলররাও অক্টোবর মাসের বোর্ড মিটিংয়ে প্রতিবাদ জানানোয় তা ভেস্তে যায়। পরে মুলতুবি বৈঠক ডাকা হলে কংগ্রেসের মেয়র পারিষদরা ছাড়া অন্য কাউন্সিলররা ছিলেন না। শহরে উন্নয়নের কাজ ব্যহত হবে বলে দলের তরফে কংগ্রেস কাউন্সিলরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল পরবর্তী বোর্ড মিটিংগুলিতে উপস্থিত হতে। দলের সব কাউন্সিলররা অবশ্য তা মেনে নিতে পারেননি। তাঁদের দাবি, কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন চেয়ারম্যান নান্টু পাল। অথচ তিনি অনৈতিক ভাবে পদ আঁকড়ে বসে রয়েছেন। তার পদত্যাগের দাবিও একটি বোর্ড মিটিংয়ে কংগ্রেস কাউন্সিলররাই তুলেছিল। তাই তাঁরা এ ভাবে মাসিক সভায় যোগ দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। এ দিনও কংগ্রেসের ৩ জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন না। মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত জানিয়েছেন, উন্নয়নের স্বার্থেই তাঁরা বোর্ড মিটিংয়ে রয়েছেন। তবে দলত্যাগী চেয়ারম্যানের বিষয়ে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, “বোর্ড মিটিংয়ে বিরোধীরা না থাকলে কাজের কিছু সমস্যা অবশ্যই হয়।”
এ দিন সভাকক্ষে বোর্ড মিটিংয়ের সময় বাম কাউন্সিলররা প্ল্যাকার্ড হাতে মেয়রের ঘরের সামনে কিছুক্ষণ অবস্থান করে ক্ষোভ দেখান। করিডরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম এ দিন ছিলেন না। সিপিএম কাউন্সিলর দিলীপ সিংহ, শরদিন্দু চক্রবর্তীরা জানান, দলত্যাগী চেয়ারম্যান অনৈতিকভাবে পদে রয়েছেন। তিনি পদে থাকাকালীন বাম কাউন্সিলররা বোর্ড মিটিংয়ে যাবেন না এ কথা আগেই জানিয়েছেন তাঁরা। চেয়ারম্যানকে অনাস্থা জানানো হলেও তিনি বৈঠক না-ডাকায় বামেরাও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। দিলীপবাবু বলেন, “চেয়ারম্যান অনৈতিকভাবে পদে থাকার বিষয়টি ইচ্ছে করেই মেটানো হচ্ছে না। বিরোধী শূন্য অবস্থায় বিভিন্ন পরিকল্পনা সহজেই কর্তৃপক্ষ পাস করাতে পারবেন এটাই বর্তমান পুরবোর্ডের উদ্দেশ্য। আশা করি আদালতের তরফে শীঘ্রই নির্দেশিকা পৌঁছবে।”
চেয়ারম্যান নান্টু পাল জানিয়েছেন, তিনি নিরপেক্ষতা বজায় রেখেই বোর্ড পরিচালনা করছেন। বিষয়টি আদালতের অধীন। আদালত যে নির্দেশ দেবে তিনি মেনে নেবেন। বেলা ১ টা নাগাদ বোর্ড মিটিং শুরুর কথা থাকলেও তা হতে আরও ২০ মিনিট গড়িয়ে যায়। এর পর বরো চেয়ারম্যান নিখলবাবু প্রশ্ন-উত্তর পর্বে জানতে চান, কর্মীদের হাজিরা এবং অফিসে কখন কারা যাতায়াত করছেন তা নজরদারি করতে ‘ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা’ বসানো-সহ যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঠিক হয়েছিল সেই কাজ করতে দেরি হচ্ছে কেন। তা ছাড়া বরো অফিসগুলিতেই বা সেই ব্যবস্থা কবে কার্যকর হবে। জবাবে মেয়র জানিয়ে দেন, ইতিমধ্যেই ওই কাজের বরাত দিতে টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। মাত্র ২জন অংশ নেওয়ায় তা বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে ফের টেন্ডার প্রক্রিয়া শীঘ্রই হবে। এর পর বোর্ড মিটিংয়ে ‘মোশন’ এবং ‘কল ইন অ্যাটেনশন’ পর্বের কোনও আলোচনাই হয়নি। এ মাসে মেয়র পারিষদের বৈঠকের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত পাস করানোর জন্য এরপর চেয়ারম্যান পেশ করলে উপস্থিত কংগ্রেস এবং তৃণমূলের ২২ জন কাউন্সিলরা তা পাস করান। |