কে আগে-কে পরে, দ্বন্দ্বে বন্ধ তাঁত প্রশিক্ষণ শিবির
তাঁত শিল্পীদের একাংশের বাধায় বন্ধ হয়ে গেল উন্নত প্রয়ুক্তির মাধ্যমে তাঁতের শাড়ি তৈরির প্রশিক্ষণ শিবির। শিল্পীদের একাংশকে বাদ দেওয়া এবং কারা আগে প্রশিক্ষণ পাবেন তা নিয়ে তাঁত শিল্পীদের মধ্যে বিরোধের জেরে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন পাত্রসায়রের ওই শিবির আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের আবার বিরোধিতা করছেন অন্য তাঁত শিল্পীরাও। অবিলম্বে এই প্রশিক্ষণ শিবির শুরু করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
পাত্রসায়র থানার বীরসিংহ গ্রামে ওই প্রশিক্ষণ শিবিরটি শুরু হওয়ার কথা ছিল সোমবার থেকে। কিন্তু তার আগেই এই প্রশিক্ষণ শিবির বন্ধ করে দিতে হল। পাত্রসায়রের বিডিও অপূর্বকুমার বিশ্বাস বলেন, “উন্নতমানের আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে কী ভাবে হস্ত তাঁত শিল্পের প্রসার ঘটানো যায়, তা তাঁতশিল্পীদের শেখানোর উদ্দেশ্যেই এই প্রশিক্ষণ শিবিরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এলাকার তাঁত শিল্পীদের একাংশ ওই শিবিরে ডাক পাননি বলে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। যাঁরা ডাক পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কারা আগে প্রশিক্ষণ পাবেন তা নিয়েও গোলমাল চলছিল। তাই আপাতত ওই প্রশিক্ষণ শিবির স্থগিত করা হয়েছে।”
জেলা হস্ত তাঁত উন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রেশম ও তসর শিল্পের উন্নতিকল্পে একটি প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। এ জন্য অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর এক কোটি ১৭ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছে। এই বরাদ্দ অর্থে পাত্রসায়রের বীরসিংহ গ্রামে তাঁত শিল্পীদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটি শিবিরের আয়োজন করা হয়। দু’বছর ধরে চলবে এই শিবির। প্রথম পর্যায়ে ওই এলাকার ২৪০ জন তাঁত শিল্পীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। প্রশিক্ষণ শিবিরে হাতে কলমে কাজ শেখানো হবে। সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণ চলাকালীন প্রতিদিন ৮০ টাকা করে ভাতা পাবেন তাঁতশিল্পীরা। আর এতেই বিপত্তি দেখা দেয়।
বীরসিংহ পঞ্চায়েতে প্রায় ৫০০টি তন্তুবায় পরিবারের বসবাস। স্থানীয় তাঁতশিল্পীদের একাংশের অভিযোগ, বীরসিংহ রেশম শিল্পী সমবায় সমিতির সদস্যদের এই প্রশিক্ষণ শিবিরে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে ডাকা হয়েছে। যাঁরা ওই সমিতির সদস্য নন, তাঁদের বঞ্চিত করা হয়েছে। বীরসিংহ গ্রামের বাসিন্দা তাঁত শিল্পী ত্রিভঙ্গমুরারি হালদার, দেবদুলাল সু, নবীন পালদের অভিযোগ, “আমরা পুরুষানুক্রমে তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। পুরনো তাঁতেই তসর, রেশমের কাজ করছি। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে আমাদের উপকার হবে। সরকারি ভাবে গ্রামে প্রশিক্ষণ শিবির করা হচ্ছে, অথচ আমরা সেই প্রশিক্ষণ শিবিরে ডাক পায়নি কেন?” তাঁদের দাবি, সবাইকে ওই প্রশিক্ষণ শিবিরে ডাকা হয়নি। তাই তাঁরা জেলা হস্ত তাঁত আধিকারিক এবং বিডিও-র কাছে ওই প্রশিক্ষণ শিবির আপাতত স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছিলেন। সকলকে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হোক-- এমন দাবি করছেন এলাকার অনেকে তন্তুবায়।
বীরসিংহ সমবায় সমিতির ম্যানেজার উত্তম হেঁসের দাবি, “আমাদের সমবায় সমিতির সদস্য ছাড়াও অনেকেই এই প্রশিক্ষণ শিবিরে ডাক পেয়েছেন। এলাকার সকলেই যাতে প্রশিক্ষণের সুযোগ পান তা আমরাও চাইছি। তবে পর্যায়ক্রমে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানি। কিন্তু এ ভাবে প্রশিক্ষণ শিবির বন্ধ করে দেওয়াটা অনুচিত কাজ হয়েছে।” জেলা হস্ত তাঁত উন্নয়ন আধিকারিক দীপাল নাথ বলেন, “ওই এলাকার তাঁত শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য দু’টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। একটির অনুমোদন মিলেছে। অন্যটির অনুমোদন এখনও মেলেনি। তাই প্রথম পর্যায়ে ২৪০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রতি মাসে ২০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।” তিনি জানান, সকলেই প্রথম পর্যায়ে প্রশিক্ষণ নিতে ইচ্ছুক। আর এ নিয়েই গণ্ডগোল হয়েছে। সমস্যা দেখা দেওয়ায় আপাতত ওই প্রশিক্ষণ শিবির স্থগিত রেখে তাঁতশিল্পীদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে। পাত্রসায়রের বিডিও জানিয়েছেন, তিন সদস্যের কমিটি করে তাঁত শিল্পীদের বুঝিয়ে শীঘ্রই শিবির শুরু করার চেষ্টা চলছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.