বেআইনি হোটেলে চলছে অসামাজিক কাজকর্ম
দ্য সদ্যই ঘটেছে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে হোটেলে ধর্ষণের ঘটনা। যা নিয়ে শোরগোল পড়েছে গোটা মহকুমায়। কিন্তু ডায়মন্ড হারবারে বসবাসকারীদের বক্তব্য, পর্যটনের লক্ষ্যে তৈরি হওয়া ওই সব হোটেলের মধ্যে বেশরিভাগই হোটেলে দীর্ঘদিন ধরেই নানা অসামাজিক কাজকর্ম চলে আসছে। মাঝেমধ্যে পুলিশ হানা দিলেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এ ক্ষেত্রেও তাঁরা পুলিশ-প্রশাসনকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের দাবি, পুলিশ-প্রশাসন সব জানা সত্ত্বেও এই সব অপরাধমূলক কাজ চলছে অবাধে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “বিভিন্ন হোটেলে আসামাজিক কাজকর্ম চলছে বলে অভিযোগ আসছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডায়মন্ড হারবার শহর হুগলি নদী লাগোয়া পর্যটনকেন্দ্র হওয়ায় এখানে বেশ কিছু হোটেল রয়েছে। নিয়মানুযায়ী, ওই সব হোটেলে থাকার জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের বৈধ ভোটার কার্ড দেখাতে হয়। কিন্তু হোটেল ব্যবসায়ীদের একাংশই এই নিয়ম মানছেন না বলে অভিযোগ। পাশাপাশি দেহ ব্যবসা চালানোরও অভিযোগ উঠেছে বেশ কিছু হোটেল মালিকের বিরুদ্ধে।
শুধু মাত্র হোটেলই নয়, হোটেল ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ডায়মন্ড হারবার স্টেশন চত্বরে বা গঙ্গার ধারে সকাল থেকে রাত অবধি দেহ ব্যবসায়ীদের আনাগোনা চলে। ওই দেহব্যবসায়ীদের সঙ্গে স্থানীয় কিছু ভ্যানচালক এবং হোটেল ব্যবসায়ীর যোগাযোগ থাকে। কোনও ছেলে-মেয়ে ডায়মন্ড হারবার স্টেশনে ট্রেন থেকে নামলে বা কলকাতা থেকে বাসে এসে নামলেই তাঁদের ছেঁকে ধরে ওই সব ভ্যানচালকেরা। কারণ, ওই প্রেমিক-প্রেমিকাদের কোনও একটি হোটেলে নিয়ে গেলেই চুক্তিমতো মিলে যবে ভাল কমিশন। ফলে দেখা যায়, স্টেশন মোড় থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরের হোটেলেও ওই সব প্রেমিক-প্রেমিকদের বিনা ভাড়ায় নিয়ে যাচ্ছে তারা। আর দেহব্যবসা সুযোগ নিয়ে শহরে ঢুকে পড়ছে দুষ্কৃতীরাও। ক্রমশ বাড়ছে অসামাজিক কাজকর্ম।
সারা বছর তো বটেই, বিশেষ বিশেষ ছুটির দিনেও ডায়মন্ড হারবার স্টেশন চত্বরে বা গঙ্গার ধারে দেহব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, ওই সব এলাকায় দিনের বেলাতেও কোনও সাধারণ মহিলা দাঁড়িয়ে থাকলে তাঁকে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। কারও অপেক্ষায় স্টেশন চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকলেই ‘খরিদ্দার’-এর খপ্পরে পড়তে হচ্ছে। স্টেশন মোড়ে স্থানীয় কয়েকটি স্কুলের গাড়ি দাঁড়ায় ছাত্রছাত্রীদের নামানোর জন্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মায়েরাই আনতে যান ছেলেমেয়েদের। দেব ব্যবসায়ীদের উত্‌পাতে তাঁরাও যারপরনাই তিতিবিরক্ত, শঙ্কিতও বটে। সব মিলিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগাতেই এ সব চলছে। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা ডায়মন্ড হারবার শহর যানজট নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভাপতি উমানাথ মান্না বলেন, “দিনের বেশির বাগ সময় কাজের সূত্রে স্টেশন মোড়ে থাকতে হয়। হোটেল ব্যবসাকে কেন্দ্র করে যে ভাবে দেহব্যবসায়ীদের উত্‌পাত বেড়েছে এখানে, তাতে আমরা আতঙ্কিত। সন্ধ্যার পর তো বটেই দিনের বেলাতেও বাড়ির মহিলাদের সাবধানে চলাফেরা করতে বলছি। এক শ্রেণির অসাধু হোটেল ব্যবসায়ীর সঙ্গে পুলিশের আঁতাতেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে অবিলম্বে প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ করা উচিত।”
ডায়মন্ড হারবার হোটেল অ্যান্ড নার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক গৌতম হালদারের বক্তব্য, এখানে মোট ১৮টি হোটেলের সরকারি অনুমোদন রয়েছে। ওই সব হোটেলে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের প্রবেশের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কোনওরকম অসামাজিক কাজে হোটেল ব্যবহার না করার নিয়মও রয়েছে। কোনও হোটেল কর্তৃপক্ষ নিয়ম না মানলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে অভিযুক্ত হোটেলের পাশে আমরা দাঁড়াব না।” তবে একই সঙ্গে তিনি জানান, যে হোটেলে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তার মালিক তাঁদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য নন।
যদিও পুলিশের বক্তব্য, রাজ্যের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্রে এ ধরনের অসামাজিক কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণে তাঁরা যথেষ্ট তত্‌পর। হোটেলগুলিতে দেহব্যবসা বন্ধ করতে গত এক বছরে ৭-৮ অভিযান চালানো হয়েছে। অবৈধ কাজের সঙ্গে যুক্ত দু’টি হোটেল সিল করে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া স্টেশন চত্বরে এবং গঙ্গার ধারে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। ছাত্রীধর্ষণের ঘটনায় পুলিশের বক্তব্যযে যুবকের সঙ্গে ঘটনাটি ঘটেছে, সে ওই মেয়েটির প্রেমিক। পরিবারের লোকেরা সব জেনেও এখন মুখ খুলছেন না। শীঘ্রই ওই যুবককে গ্রেফতার করা হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.