আশঙ্কার ডেভিস যুদ্ধে আশার আতসবাজি সেই চিরসবুজ লি
টেনিস কোর্ট, না কি ক্রিকেট মাঠ? খন্না স্টেডিয়াম, না কি ওয়াংখেড়ে? কোথায় যেন একাকার হয়ে যাচ্ছিল দু’টো!
খেলা আলাদা। সারফেস আলাদা। আপাদমস্তক মিল শুধু দু’টো চরিত্রে। জাতীয় দলের প্রতি নিজের অনন্ত দায়বদ্ধতায় সচিন তেন্ডুলকর আর লিয়েন্ডার পেজ যেন মিলেমিশে একাকার! প্র্যাক্টিস শেষ। টিমমেটরা সবাই চলে গিয়েছেন। শুধু তিনিসচিন নকিং করে চলেছেন কোচের ছুড়ে চলা একের পর এক বলে। এক নাগাড়ে। এটা তো ক্রিকেট সার্কিটের অতি চেনা ছবি।
বৃহস্পতিবারের লিয়েন্ডারও অনেকটা সে রকমই। কোরিয়া ম্যাচের আগের দিন নিয়মমাফিক সেন্টার কোর্টে বরাদ্দ দেড় ঘণ্টার প্র্যাক্টিস শেষ ভারতীয় দলের। তরুণ সতীর্থরা সবাই চলে গিয়েছেন। লিয়েন্ডার একা নেটের উল্টো দিকে দুই রিজার্ভ প্লেয়ারের বিরুদ্ধে স্ট্রোক মেরে চলেছেন। ফোরহ্যান্ড, ব্যাকহ্যান্ড, ডাউন দ্য লাইন, চিপ, লব, টপস্পিন, স্লাইস সব। পাঁচ..দশ..পঁচিশ..পঞ্চাশ..একশো..দুশো...। শট চলছে তো চলছেই! ভারতের হয়ে তেইশ বছর ডেভিস কাপ খেলার পরেও। এই সাড়ে ঊনচল্লিশেও। সচিনেরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তেইশ বছর চলছে না? লি-রই সমান বয়স তো!
গুরুদায়িত্ব। ড্রয়ের অনুষ্ঠানে লিয়েন্ডার পেজ। ছবি: পিটিআই
দেশের হয়ে খেলার এই অফুরান দায়বদ্ধতা, আকুতি, নেশা, সাফল্যের খিদে, কাঠিন্য, মানসিক শক্তিটাই চব্বিশ ঘণ্টা পরে শুরু এশিয়া-ওশেনিয়া (গ্রুপ ওয়ান) আঞ্চলিক ডেভিস কাপে লড়তে তাঁর অখ্যাত, আনকোরা তরুণ সতীর্থদের শিরা-উপশিরায় যেন ঢোকাতে চাইছেন ভারতের সফলতম ডেভিসকাপার চিরসবুজ লিয়েন্ডার। “এই হার্ডকোর্টটা স্লো। বাউন্স বেশি। ফলে, লম্বা র্যালি হবে বেশি। আমাদের তিন ইয়ং প্লেয়ারের পাঁচ সেট খেলার অভিজ্ঞতা বলতে গেলে নেই-ই। ডেভিস কাপের মজা হল, খেলাটার সঙ্গে দরকার একটা শক্তিশালী কলজে আর ঠান্ডা মগজ। গেমপ্ল্যান থাকতে হবে চারটে। একটা কাজ না করলে অন্যটায় চলে যেতে হবে। আর তার জন্য বেশি অপেক্ষা চলবে না। আমি তেইশ বছরে একটাও ডেভিস কাপ ম্যাচ ফল কী হবে ভেবে খেলিনি। দেশের হয়ে খেলার একটা প্রচণ্ড চাপ এমনিতেই থাকে। যেটা এটিপি ট্যুরে একা খেলার সময় থাকে না। তাই ডেভিসে নিজের ওপর আর একবিন্দুও বাড়তি চাপের বোঝা চাপানো উচিত নয়। খোলা মনে গোটা ব্যাপারটা উপভোগ করো, নিজের সেরাটা দাও।”
যেটা মিডিয়াকে লিয়েন্ডার বললেন আজ, সেটাই নাকি পাখি পড়ানোর মতো গত দু’দিন ধরে বুঝিয়ে চলেছেন রঞ্জিত-বিজয়ন্ত-পুরবদের। রাদেক স্টেপানেকের শিরদাঁড়ায় অস্ত্রোপচার হওয়ায় সামনের দেড় থেকে দু’মাস পেশাদার সার্কিটে তাঁর নিয়মিত ডাবলস পার্টনারকে পাবেন না লিয়েন্ডার। চার জন ভাল মানের ডাবলস প্লেয়ারের প্রস্তাব পেয়েছেন। অস্ট্রিয়ার য়ুরগেন মেলজার আপতকালীন পার্টনার হতে পারেন। কিন্তু এই মুহূর্তে সে সব মাথায় না রেখে কোরিয়ানদের জাতিগত ফিটনেস, অদম্য লড়াই আর এই দলটার ছেলেদের প্রচুর শট খেলতে পারার চ্যালেঞ্জ সামলাতে টিম ইন্ডিয়াকে টোটকা দিয়ে চলেছেন। কোর্টে, লকাররুমে, খাওয়ার টেবিলে, হোটেলে, সুইমিং পুলে, জিমে সর্বত্র।
ফল ২-২ থাকলে রবিবার দ্বিতীয় সিঙ্গলসের গুরুত্ব কোথায় দাঁড়াবে, তা বোঝাতে গিয়ে লিয়েন্ডার দ্বিতীয় সিঙ্গলস প্লেয়ার বিজয়ন্তকে বলছিলেন, “এই দিল্লিতেই একানব্বইয়ে কোরিয়ার সঙ্গে আমরা ২-১ এগিয়ে শেষ দিন নামলেও রমেশ (কৃষ্ণন) হুট করে হেরে বসায় শেষ সিঙ্গলসটা আমার ‘মাস্ট উইন’ ম্যাচ দাঁড়াল। তা সত্ত্বেও ফলের কথা না ভেবে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। স্ট্রেট সেটে জেতায় ভারত ৩-২ টাই পেয়েছিল। কে বলতে পারে, বিজয়ন্তও সে রকম কিছু করবে না?” পুরো টিম আন্তরিক ভাবে হাততালি দিয়ে উঠল যখন এর পরে লিয়েন্ডার ধীরে কিন্তু স্পষ্ট উচ্চারণে বললেন, “তবে আমার তরুণ সতীর্থরা পাঁচ সেটে জিতুক বা তিন সেটে হারুক, আমি বড়দার মতো সব সময় ওদের পাশেই আছি।”
বেলা এগারোটা নাগাদ ডিএলটিএ-র ব্যাঙ্কোয়েটে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের করা ড্রয়ে এই টাইয়ে ভারতের এক নম্বর সিঙ্গলস প্লেয়ার রঞ্জিত কোরিয়ার দ্বিতীয় সিঙ্গলস প্লেয়ারের (আদতে ইনি দলের তিন নম্বর প্লেয়ার। ডাবলস টিমের শক্তি বাড়াতে এবং লিয়েন্ডার-পূরব জুটিকে আটকাতে কোরিয়ার মাস্টারপ্ল্যান নিজেদের দ্বিতীয় সেরা প্লেয়ারকে ওই ম্যাচের জন্য তুলে রাখা) সামনে পড়ায় নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেন শিবপ্রকাশ মিশ্র থেকে শুরু করে জয়দীপ মুখোপাধ্যয়রা একমত, “ভাল ড্র। আমাদের এক নম্বর সিঙ্গলস প্লেয়ার ভারতকে ১-০ এগিয়ে দিলে পরের ম্যাচে দু’নম্বর প্লেয়ার অনেক খোলা মনে খেলতে পারবে।”
এটা অবশ্য টিম ইন্ডিয়া-র বহিরঙ্গ। অন্দরমহলের কথোপকথনের দু’টো ঝলক

এক) জয়দীপ: কী, ক্যাপ্টেন? ২-২ হলে শেষ সিঙ্গলসে লিয়েন্ডার নামবে না কি?
এসপি মিশ্র: খেপেছ! তিন সেটের পরে তুলে নিয়ে হাসপাতাল যেতে হবে। আগের ফিটনেস আর নেই।

দুই) আখতার: হ্যাঁ রে, টাই-টা জিতবি তো? কোরিয়ানগুলোও তো আমাদের তিনটে নতুন ছেলের মতোই।
জিশান: কী বলছ বাবা? আমাদের তিনটে ছেলে দশ-পনেরো হাজার ডলারের ফিউচার্স খেলে বেড়ায়। আর ওরা পঞ্চাশ হাজারের চ্যালেঞ্জার খেলা প্লেয়ার। স্ট্যান্ডার্ডের তফাতটাই তো চিন্তা সামনের তিন দিন!”

কিছু বোঝা গেল? ডেভিসে নতুন ভারতের অন্তর্নিহিত অবস্থার?




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.