এল ক্লাসিকো নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে যা উত্তেজনা চার দিকে দেখছিলাম, তা সাম্প্রতিক কোনও ম্যাচকে নিয়ে দেখিনি। বিভিন্ন ওয়েবসাইট, স্পোর্টস চ্যানেলে দেখছিলাম, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বনাম লিওনেল মেসি নিয়ে তুমুল বিতর্ক বাধছে। সত্যি বলতে আমি নিজেও বুধবার রাতে টিভি খুলেছিলাম রোনাল্ডো বনাম মেসি দেখতে। রিয়াল বনাম বার্সা দেখতে নয়।
ভাবতেও পারিনি ফুটবলবিশ্বের এমন চূড়ান্ত চাপ ওদের এ ভাবে শেষ করে দেবে!
এক এক সময় মনে হচ্ছিল, টিভি বন্ধ করে দিই। কী হবে দেখে? দু’টো টিমের অতি সতর্কতায় ফুটবলটাই শেষ হয়ে গেল। মানে বলতে চাইছি, যে ফুটবল আপনার চোখকে আরাম দেবে। সেটাই তো পেলাম না। উল্টে বার্সেলোনার মতো টিমকে একের পর এক মিস পাস করতে দেখলাম! যারা কিনা একসঙ্গে তিরিশ-পঁয়ত্রিশটা পাস খেলে এত দিন বিপক্ষকে ঝাঁঝরা করে দিয়ে এসেছে। দেখতে হল, সামনে ওপেন নেট পেয়েও রোনাল্ডো কী ভাবে একের পর এক মিস করছে! একটা হেড বাইরে গেল। একবার স্রেফ পা ছোঁয়াতে পারল না। |
আসলে আমাদের এখানে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে যা চাপ থাকে, তাকে যদি একশো দিয়ে গুণ করেন, রিয়াল বনাম বার্সার চাপের একটা আঁচ পাবেন। আর এই ম্যাচটা নিয়ে পুরো বিশ্ব তেতে গিয়েছিল। রিয়ালকে গত বার লা লিগা দিয়েও রোনাল্ডো এ বার ব্যালন ডি’অর পায়নি। মেসি পেয়েছে। সবাই ভেবেছিল, বছরের প্রথম এল ক্লাসিকোতে রোনাল্ডো শোধটা নেবে। আর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে ঝলসাতে দেখলে মেসিও চুপচাপ হজম করবে না। কিন্তু বিশ্বজোড়া প্রত্যাশার চাপ ছাড়াও মেসি-রোনাল্ডোকে আটকে দিল দুই কোচের ট্যাকটিক্স।
কী রকম?
রোনাল্ডো আর মেসি-র ড্রিবলিংয়ের মধ্যে তফাত আছে। রোনাল্ডো আউটসাইড ডজ করতে করতে ইনাসইড ডজে ঢুকবে। মেসি আবার ‘আ্যগ্রেসিভ ড্রিবলিংয়ে’ বিশ্বাসী। প্রথম জনকে যে গতিতে ড্রিবল করে বেরোবে, সেটা ধরে রেখে পরের জনকেও ছিটকে দেবে। কিন্তু বুধবার মেসি যত বার বল নিয়ে বেরোতে গিয়েছে, তত বার ‘ট্র্যাঙ্গুলার ব্লকিং’-এ পড়েছে। অর্থাৎ, আর্জেন্তিনা মহাতারকা বল পেলেই ছুটে এসেছে তিন জন। রোনাল্ডো আবার আটকে গেল ইওর্দি রৌরার সাপোর্টিং ডিফেন্স ট্যাকটিক্সে। মানে, এক জন না পারলে আর এক জন। সে-ও না পারলে আরও এক। দুই মহাতারকাই গত কাল দু’টো করে সুযোগ নষ্ট করেছে। মিস পাস করেছে। এবং কেউই প্রত্যাশার ধারেকাছে পৌঁছয়নি।
দু’টো টিম অতি-সতর্কতায় ভুগেছে আগেই বলেছি, তবু যদি কাউকে এগিয়ে রাখতে হয় রিয়ালকেই রাখব। পেপে, কোয়েন্ত্রাও, রামোস, কাসিয়াস, দি’মারিয়াকাউকে পায়নি মোরিনহো। তার পরেও বার্সার ‘তিকিতাকা’ ফুটবল যে ভাবে আটকে দিল, অভাবনীয়। জাভি-ইনিয়েস্তারা কখনওই পাঁচ-ছ’টার বেশি পাস খেলতে পারেনি নিজেদের মধ্যে। যা ওদের ফুটবলের পরিপন্থী। মোরিনহোর একটা অদ্ভুত ছক আছে। ও বিপক্ষের অর্ধে ট্যাকল নয়, বল তাড়া করতে বলে। আর নিজের হাফে ট্যাকল করে লোক বাড়িয়ে। জাভিরা যত বার বল নিয়ে রিয়ালের অর্ধে ঢুকেছে, দেখেছে বিপক্ষের প্রচুর ফুটবলার। রোনাল্ডোও নেমে এসে দু’তিন বার ট্যাকল করল। রিয়াল-বার্সা দু’টো টিমই ভাল ডিফেন্স করেছে। এসিয়েন, পিকে বেশ ভাল। তবে বিশেষ করে বলব বার্সেলোনার আলভেজ আর রিয়ালের ভারানের কথা। সাইড ব্যাকের কাজ কী, সেটা আলভেজকে দেখে বিশ্ব শিখতে পারে। আর ভারান তো গোলও করে গেল। তবে দু’টো গোলই হয়েছে রক্ষণের মুহূর্তের ভুলে। রিয়াল-ডিফেন্সের মিসপাস থেকে ফাব্রেগাসের গোল। ভারানের গোলের সময় আবার পুওল, পিকে কেউই জায়গায় ছিল না।
স্কোরলাইনটাও তাই ঠিকই আছে। ড্রয়ের ম্যাচ ছিল, ড্র হয়েছে। বরং যাঁরা ভাবছেন, অ্যাওয়ে ম্যাচে গোল করে রাখায় বার্সা সুবিধা নিয়ে ন্যু কাম্পে নামবে তাঁদের সাবধান করে রাখছি। এই টিম নিয়ে রিয়াল যা খেলেছে, তাতে ও সব হোম অ্যাডভান্টেজের হিসেব না করাই ভাল। করলে ডুবতে হবে না, কে বলতে পারে!
|
কোলাজে ক্লাসিকো |
রাত যখন ভারানের
পেপে, রামোস কেউ ছিলেন
না রিয়াল ডিফেন্সে। চাপ ছিল
ভারানের উপর। গোললাইন
সেভ-সহ বার্সার তিনটি গোল
আটকালেন। মেসিকে কড়া
ট্যাকলে সামলালেন আর ৮০
মিনিটে গোলটাও করলেন। |
|
দেওয়ালের নাম লোপেজ
একে কাসিয়াসের জায়গায়
খেলা, তার উপর রিয়ালের
হয়ে প্রথম ম্যাচই এল ক্লাসিকো।
কিন্তু ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে
একবার পেড্রোকে বাইরে শট
মারতে বাধ্য করেন। আলবার
ক্লোজ রেঞ্জ শটও বাঁচালেন। |
|
ফটো ফিনিশে এগিয়ে মেসি
রোনাল্ডো, মেসি দু’জনের কেউই
সফল নন। তবু একটু এগিয়ে মেসি।
একটা ফ্রি কিক, দু’টো সহজ সুযোগ
নষ্ট আর বেঞ্জিমাকে একটা পাস ছাড়া
রোনাল্ডো কিছু করেননি। মেসি
অনেকটা সময় রিয়াল ডিফেন্সে
চাপ বাড়িয়েছেন। মাদ্রিদের চার ব্যাক
তাঁকে ফাউল করেছেন। ফাব্রেগাসের
গোলটাও মেসির পাস থেকে। |
|
এলএম টেনের অচেনা মেজাজ
খেলা শেষে কার পার্কিংয়ে গিয়ে
আলভারো আরবিওলাকে ‘স্টুপিড’ বলে
ব্যঙ্গ মেসির। যা শুনে আলভারোর স্ত্রী
বলে ওঠেন, “লোকটা এ রকম করছে
কেন।” তখন মেসি উত্তেজিত হয়ে
পড়লে
তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যান নিরাপত্তারক্ষীরা।
এর আগে মেসি নাকি টানেল দিয়ে যাওয়ার
সময় রিয়ালের সহকারী কোচ কারাঙ্কাকে
বলেন, “কী দেখছেন। শাট আপ। আপনি
তো
মোরিনহোর হাতের পুতুল।” |
|
|