পুরসভার আলো দফতরের গাফিলতিতেই ত্রিফলা আলো লাগানোর ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। আলো বিভাগের যাঁদের গাফিলতিতে এই অনিয়ম হয়েছে, তাঁদের মধ্যে তিন অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদেরও পাওনার এক-চতুর্থাংশ আটকে দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে মেয়র জানান, ওই অনিয়মের সঙ্গে কোনও মেয়র-পারিষদই যুক্ত নন।
মেয়র নিজেকে এবং সংশ্লিষ্ট মেয়র-পারিষদকে পুরো ত্রিফলা-বৃত্তান্তের বাইরে রেখে যে-ভাবে আলো বিভাগের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিলেন, তাতে ওই বিভাগের বহু অফিসার ক্ষুব্ধ। তাঁদের কেউ কেউ এ ব্যাপারে আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন।
আলো বিভাগের তিন অফিসারের উপরে যে খাঁড়া নামছে, আগেই তার ইঙ্গিত মিলেছিল। এ দিন কলকাতা পুরসভায় মেয়র-পরিষদের বৈঠকে ওই তিন জনের শাস্তির সিদ্ধান্তে সিলমোহর দেওয়া হয়। বৈঠকের পরে মেয়র বলেন, “বর্তমান ডিজি (আলো) মনোব্রত চৌধুরীকে তাঁর পদ থেকে সরানো হল। একই অভিযোগে প্রাক্তন ডিজি (আলো) গৌতম পট্টনায়কের অবসরকালীন সব ভাতা আটকে দেওয়া হচ্ছে। আর আলো বিভাগের চার নম্বর জোনের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বাসব পাত্রকে শো-কজ করা হচ্ছে।” ত্রিফলায় বরাত পাওয়া ঠিকাদারদের বিলের ২৫ শতাংশ আপাতত আটকে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মেয়র জানান। ওই টাকা ঠিকাদারেরা কবে পাবেন, তা বলেননি তিনি।
মেয়র-পরিষদের বৈঠকে অফিসারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে মৃদু আপত্তি তোলেন একাধিক সদস্য। কথা ওঠে ঠিকাদারদের বিলের ২৫ শতাংশ আটকানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও। তবে সেই আপত্তি ধোপে টেকেনি। বৈঠকের পরে মেয়র বলেন, “ডিজি মনোব্রতবাবুকে এ দিন থেকেই সরানো হল। ওই পদে কে আসবেন, দু’-এক দিনের মধ্যেই তা জানানো হবে। আর অডিট সংস্থাকে নথি না-দেওয়ার অভিযোগে চার নম্বর জোনের অফিসার বাসব পাত্রকে শো-কজ করা হচ্ছে। তাঁকে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।”
শাস্তির সিদ্ধান্ত জানাজানি হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন আলো দফতরের আধিকারিকদের বড় একটি অংশ। তাঁদের বক্তব্য, ত্রিফলা আলো লাগানোর ব্যাপারে সব কাজ করা হয়েছিল মেয়রকে জানিয়েই। সংশ্লিষ্ট নথিতে মেয়র এবং আলো বিভাগের মেয়র-পারিষদের সইও আছে। অথচ পুর-কর্তৃপক্ষ সেই নথির কথা পুরো চেপে যাচ্ছেন। গোটা ঘটনায় চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছেন আধিকারিকেরা। প্রয়োজনে মেয়র শোভনবাবু এবং মেয়র-পারিষদ (আলো) মানজার ইকবালের সই করা নথি নিয়ে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে আলো বিভাগের আধিকারিকদের কেউ কেউ হুমকিও দিয়ে রেখেছেন। |