আগাম কোনও খবর ছিল না। আচমকা বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জেরবার হয়ে গেল কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)। এই বিভ্রাটে অচল হয়ে যায় সব রেডার। অন্ধকার হয়ে যায় এটিসি-র মনিটর। অফিসারেরা ওই মনিটরের সামনে বসেই বিমানের গতিবিধির উপরে নজর রাখেন। তা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ায় পাক্কা পৌনে দু’ঘণ্টা ধরে পাইলটদের সঙ্গে শুধু কথা বলে আকাশে বিমানের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে হল তাঁদের।
এই বিভ্রাটে যে-কোনও সময়েই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত বলে মনে করছে বিমানমহল। তবে উড়ান-সূচি এলোমেলো হয়ে যাওয়া ছাড়া এ দিন বড় কিছু ঘটেনি। যে-সময়ের মধ্যে ২০টি বিমান ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল, বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের ফলে সেই সময়ে ছেড়েছে মাত্র পাঁচটি বিমান। আর যে-সময়ের মধ্যে ১৫টি বিমানের নামার কথা ছিল, তখন নামতে পেরেছে মাত্র সাতটি। বেগতিক দেখে তিনটি বিমান কলকাতার আকাশে এসেও মুখ ঘুরিয়ে চলে যায় অন্য শহরে। খবর পেয়ে অন্য শহর থেকে কলকাতার বিমানও দেরি করে ছাড়তে শুরু করে। কলকাতামুখী বিমানের যাত্রীরা আটকে পড়েন বিভিন্ন শহরে।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে আচমকা, কোনও সঙ্কেত ছাড়াই অন্ধকার নেমে আসে মনিটরে। বন্ধ হয়ে যায় সব রেডার। ওই সব রেডারের সাহায্যেই প্রতিটি বিমানের গতিবিধি ফুটে ওঠে মনিটরের পর্দায়। সাধারণত বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও অন্তত আধ ঘণ্টার ‘ব্যাক-আপ সাপোর্ট’ বা বিকল্প ব্যবস্থা থাকে বিমানবন্দরে। এ দিন কোনও কারণে সেই ব্যবস্থাও কাজ করেনি। এক অফিসার বলেন, “মনিটরে বিমানের গতিবিধি দেখা গেলে দু’টি বিমানের মধ্যে সামনা-সামনি ন’কিলোমিটার ব্যবধান রাখা হয়। উপর-নীচে ব্যবধান রাখা হয় এক কিলোমিটার। কিন্তু গতিবিধি দেখতে না-পেলে সেই ব্যবধান বজায় রাখা অসম্ভব। এ দিন মান্ধাতার আমলে ফিরে গিয়ে শুধু পাইলটদের সঙ্গে কথা বলেই বিমানের অবস্থান ঠিক করতে হয়েছে।”
যখন বিদ্যুৎ-বিভ্রাট ঘটে, নামার জন্য তখন কলকাতার আকাশে হাজির প্রায় ১০টি বিমান। অন্তত ১০টি বিমান উড়তে প্রস্তুত। মাথার উপর দিয়ে উড়েও যাচ্ছিল অনেক বিমান। কী ভাবে সামাল দেওয়া হল?
দ্রুত বিপর্যয় মোকাবিলায় নেমে পড়েন এটিসি অফিসারেরা। দু’টি বিমানের মাঝখানের দূরত্ব বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বাড়িয়ে দেওয়া হয় দু’টি বিমানের উপর-নীচের ব্যবধানও। এর ফলে বহু বিমানের নামতে দেরি হয়। চক্কর কাটতে শুরু করে তারা। এর মধ্যেই মুম্বই থেকে কলকাতায় আসা জেটের বিমান মুখ ঘুরিয়ে চলে যায় ঢাকায়। ভুবনেশ্বর থেকে এসে সেখানেই ফিরে যায় অ্যালায়েন্স এয়ারের উড়ান। পটনা থেকে এসে ইন্ডিগোর বিমান চলে যায় ভুবনেশ্বরে। ভারতীয় বায়ুসেনার একটি বিমান কলকাতার এটিসি-কে জানায়, তাদের বিমানে মরদেহ আছে। তাই তারা অন্যান্য বিমানের চেয়ে আগে নামতে চায়। মনিটরে দেখতে না-পেলেও শহরে নামতে থাকা অন্যান্য বিমানকে আরও অপেক্ষা করতে বলে বায়ুসেনার বিমানকে আগে নামায় এটিসি। পৌনে দু’ঘণ্টা পরে, রাত ৮টা ৪০ মিনিট নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বিদ্যুৎ-বিভ্রাট কেন?
সিইএসসি সূত্রের খবর, তাদের তরফে বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনও সমস্যা হয়নি। একই কথা জানায় রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। তা হলে কি বিমানবন্দরের নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় গোলমাল দেখা দিয়েছিল? বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের রিজিওনাল এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর মনোহরলাল লাকড়া রাতে বলেন, “একটি বিশেষ জায়গায় সমস্যা হয়েছিল।” বিভ্রাট নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। |