ঘটনার এক বছর ১৪ দিন পর পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ-কাণ্ডের চার্জ গঠন হতে চলেছে। বৃহস্পতিবার বিচারভবনের তৃতীয় ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক মধুছন্দা বসু ১৯ ফেব্রুয়ারি এই মামলার চার্জ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। মূল অভিযুক্ত কাদের খান-সহ দু’জনকে অবশ্য এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
দিল্লিতে গত ১৬ ডিসেম্বর বাসে গণধর্ষণের ঘটনায় ইতিমধ্যেই চার্জ গঠনের প্রক্রিয়ার শুনানি শুরু হয়েছে। পার্ক স্ট্রিটে ধর্ষণের অভিযোগের চার্জ গঠনে দেরি হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছিল বিভিন্ন মহলে। ইতিমধ্যে পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের দুই অভিযুক্ত সুমিত বজাজ ও নাসের খানের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
এই বিলম্বের কারণ কী? আইনজ্ঞ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও মামলায় তদন্তকারীদের সংগৃহীত তথ্যের প্রতিলিপি অভিযুক্তপক্ষকেও দেওয়া হয়। সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই চার্জ গঠন করা হয়। এটা আইনি প্রক্রিয়ার অংশ। পার্ক স্ট্রিটের ঘটনায় পুলিশি চার্জশিটে উল্লেখিত পানশালার সিসিটিভি ফুটেজের প্রতিলিপি পাননি অভিযুক্তপক্ষের কেউ-ই। প্রতিলিপি চেয়ে আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁরা। এ দিন আদালতের শুনানিতে সিসিটিভি ফুটেজের প্রতিলিপি নেওয়ার দাবি থেকে সরে আসেন অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা। তাঁরা জানিয়ে দেন, বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত বছর ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে পার্ক স্ট্রিটের একটি পানশালা থেকে বেরনোর পর কয়েক জন যুবক এক মহিলাকে গাড়িতে তুলে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। চার্জশিট দাখিলের সময় তদন্তকারীরা জানান, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে অভিযুক্তরা অভিযোগকারিণীর সঙ্গে পানশালা থেকে বেরিয়ে একই গাড়িতে উঠছেন। পুলিশ পরে গাড়িটি উদ্ধার করে। পরে সিএফএসএল পুলিশের পাঠানো ওই ফুটেজ দেখে জানায়, ওই ফুটেজে কোনও কিছু নেই। আইনজ্ঞ মহলের একাংশের বক্তব্য, এই মামলার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সিসিটিভি ফুটেজ ‘নষ্ট’ হওয়ায় মামলাটি অনেকটাই লঘু হয়ে যেতে পারে।
২২ জানুয়ারি শুনানি চলাকালীন অভিযোগকারিণীর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা একই কথা বলেছিলেন। কী ভাবে ওই ফুটেজ নষ্ট হল তা দেখতে এ দিন ফের বিচার বিভাগীয় তদন্তের আবেদন জানান তিনি। তাঁর বক্তব্য, কাদের যোগসাজসে এই ঘটনা ঘটল তা খুঁজে দেখা হোক। বিচারক জানিয়েছেন, এই বিষয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর রায় জানাবেন।
অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী কৃষ্ণকান্ত তিওয়ারির বক্তব্য, “সিসিটিভি ফুটেজে কী রয়েছে তা জানতেই সেটির প্রতিলিপি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২৯ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দেন, পার্ক স্ট্রিটের পানশালা থেকে বাজেয়াপ্ত হার্ড-ডিস্কে ঘটনার রাতের কোনও ফুটেজ নেই। তা-ই তা পুনরুদ্ধারও করা যাবে না।” কৃষ্ণকান্তবাবু বলেন, “বছরখানেক আগে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে অভিযুক্তরা হেফাজতে রয়েছেন। তাঁদের জন্যই বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতে চাইছি। আদালতের সময়ও আমরা নষ্ট করতে চাই না। তা-ই সিসিটিভি ফুটেজের প্রতিলিপির দাবি থেকে সরে আসা হয়েছে।”
সরকারপক্ষের আইনজীবী সর্বাণী রায় জানান, অভিযুক্তদের আইনজীবীরা বারবার ফুটেজের প্রতিলিপি নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই কারণেই হার্ড-ডিস্কটি সিএফএসএল-এ পাঠিয়ে তথ্য পুনরুদ্ধার করে প্রতিলিপি তৈরির আর্জি জানানো হয়। |