হিডকো-র জমি ‘দখল’ করে তৃণমূলের অফিস নিউ টাউনে
বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা একটি জমি। চারপাশে উড়ছে তৃণমূলের প্রতীক আঁকা বেশ কয়েকটা পতাকা। ঘেরা জমিতে ফুলগাছ। এক পাশে শহিদ বেদী। তার পাশে ফাঁকা জায়গায় ঘাসের উপরে বসেই দলের কাজকর্ম চালান এলাকার তৃণমূল-কর্মীরা। তাঁরা জানেন, জমিটা হিডকোর। তবু তাঁরা ওই জায়গার ‘দখল’ ছাড়তে নারাজ। অথচ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন ‘দখলদারি’র বিপক্ষে।
নিউ টাউনের তারুলিয়া এলাকায় চওড়া রাস্তার দু’দিকে বিভিন্ন প্লটে গড়ে উঠেছে আবাসন। তার মধ্যে রাস্তার ধারে খালের পাশে ত্রিকোণ জায়গায় দু’নম্বর মহিষবাথান অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস ও তৃণমূল যুব-র কার্যালয়। বাঁশের বেড়ায় ঘেরা ওই কার্যালয়ের ভিতরে তাপসী মালিকের শহিদ বেদী।
যেখানে-সেখানে জায়গা দখল করে দলীয় কার্যালয় করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিউ টাউনে তৃণমূলের ওই দলীয় কার্যালয়ের কর্মীরা অবশ্য জানালেন, সেই নির্দেশের বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই হিডকো-র জমিতে চলছে এই কার্যালয়। এখান থেকেই মহিষবাথানের ভোটের কাজকর্মও করা হয়েছে। ওই অফিসে এসেছেন তৃণমূলের ‘বড়’ নেতারাও। বললেই ওই জায়গা ছাড়তে তাঁরা কোনও মতেই রাজি নন।
হিডকোর সেই জমিতে তৃণমূলের পার্টি অফিস।—নিজস্ব চিত্র
সম্প্রতি হিডকো হঠাৎ এই কার্যালয় ভাঙতে আসায় দলীয় কর্মীরা ওই সংস্থার আধিকারিকদের দিকে রীতিমতো তেড়ে গিয়েছেন বলেও অভিযোগ। এসেছে পুলিশও। তবু অনড় কর্মীরা। তাঁরা কিছুতেই দখল ছাড়বেন না। এই অফিসের সঙ্গে যাঁর নামে জড়িয়ে, সেই তৃণমূল নেতা রাজীব দাস বলেন, “কেন আমরা জায়গা ছাড়ব? আমরা জায়গাটা ঘিরে গাছ লাগিয়ে সৌর্ন্দযায়ন করেছি। আগে এখানে একটা ঘর ছিল। ঘরটা বছরখানেক আগে পুড়ে গিয়েছে। তার পর থেকে আমরা ফাঁকা জায়গায় বসে কার্যালয় চালাচ্ছি। ওদের সাহস থাকে তো তাপসী মালিকের শহিদ বেদি ভেঙে দেখাক!”
যদিও রাজীববাবু ভালই জানেন জায়গাটা হিডকোর। তিনি জানান, ওই অফিসটা ২০০৭ সালে সিপিএমের আমলে তৈরি হয়েছিল। তখন কি হিডকোর অনুমতি ছিল? রাজীববাবু বলেন, “সেই সময়ে হিডকো অনুমতি দেয়নি ঠিকই, কিন্তু বাধাও তো দেয়নি। মৌন থাকা তো সম্মতিরই লক্ষণ।”
সেই ‘মৌনতার’ সুযোগ নিয়েই ধীরে ধীরে প্রভাব প্রতিপত্তি বেড়েছে এই পার্টি অফিসের। রাজীববাবু বলেন, “বেশ কয়েক হাজার টাকা খরচ করে নিজের হাতে ফুলগাছের বাগান তৈরি করেছি। সেই বাগান হিডকো নষ্ট করতে এলে প্রতিবাদ তো করবই।”
তবে রাজীববাবুরা প্রতিবাদ করলেও এ বার হিডকো কিন্তু ওই জায়গার বিষয়ে ‘মৌন’ থাকতে রাজি নয়। সম্প্রতি দু’বার ওই জায়গা নিজেদের অধিকারে আনতে বুলডোজার পাঠিয়েছিল তারা। এ দিকে, শহিদ বেদির পাশে যে অফিস পুড়ে গিয়েছিল, সেই অফিস ফের গড়তে সিমেন্টের স্তম্ভ পুঁতেছিলেন তৃণমূলকর্মীরা। দিন কয়েক আগে এক রাতে সেই স্তম্ভ বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয় হিডকো। তাতে অবশ্য দমে যাননি রাজীববাবুরা। তাঁরা জানান, শহিদ বেদীর পাশে ঘাসের উপরে বসেই তারা কার্যালয় চালাবেন।
ফের হিডকোর তরফ থেকে আধিকারিকেরা আসেন ওই জায়গাটা ভেঙে দিতে। এ বার দলীয় কর্মীরা তেড়ে যান বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, তৃণমূলের কয়েক জন কর্মীর হাতে প্রহৃত হন হিডকোর এক আধিকারিক। ঘটনাস্থলে আসে নিউ টাউন থানার পুলিশও। হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, “বিষয়টা সম্প্রতি আমাদের নজরে এসেছে। আমাদের আধিকারিক ওখানে গিয়ে জানিয়ে এসেছেন, এই ধরনের কোনও দলীয় কার্যালয় হিডকোর জায়গায় রাখা যাবে না। ভবিষ্যতে আমরা ফের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।”
যদিও দমে যাওয়ার পাত্র নন তৃণমূলের কর্মীরা। রাজীববাবু বলেন, “নিউ টাউনে এ ভাবে হিডকোর জায়গা দখল করে আরও অনেক কিছুই চলছে। সেগুলোও তা হলে ভেঙে ফেলা হোক। আমরা সাংসদ কাকলী ঘোষদস্তিদারকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছি।” কাকলীদেবী অবশ্য বলেছেন, “আমি এই বিষয়টা এখনও ভাল করে জানি না। তবে আইন আইনের পথে চলবে। আইনের ঊর্ধ্বে কোনও কিছুই নয়।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.