‘বিশ্বরূপম’-বিতর্কে মৌনতা ভাঙলেন জয়ললিতা। কমলহাসনের রাগও দৃশ্যত অনেকটাই পড়ে গেল।
কমলহাসনের ছবির মুক্তি স্থগিত করতে চেয়ে রাজ্য সরকারের পদক্ষেপকে সমর্থন করেও এ দিন রফাসূত্রের পথ খোলা রাখলেন জয়া। বললেন, সংখ্যালঘু নেতৃত্ব এবং কমলহাসন যদি সমঝোতায় আসতে পারেন, তা হলে ছবি দেখাতে কোনও আপত্তি নেই। এমনকী রাজ্য সরকার সেই সমঝোতায় সাহায্য করতেও আগ্রহী বলে দাবি করলেন তিনি। জয়ার কথায় অনেকটাই আশ্বস্ত বোধ করছেন কমল। মুম্বইয়ে এ দিন তিনি বলেন, “আমি মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি ওঁর কাছে কৃতজ্ঞ। উনি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন, আর সুপ্রিম কোর্টে যাব কেন?”
তামিলনাড়ুতে ‘বিশ্বরূপমে’র মুক্তি নিয়ে মঙ্গলবার ছাড়পত্র দিয়েও রাজ্য সরকারের আবেদনের ভিত্তিতে বুধবার ফের দু’সপ্তাহের স্থগিতাদেশ জারি করে মাদ্রাজ হাইকোর্ট। ছবি না দেখাতে চাওয়ার পিছনে সরকারি এই তৎপরতায় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পাচ্ছিলেন অনেকেই।
গত কালই ডিএমকে প্রধান করুণানিধি দাবি করেছিলেন, কমলহাসনের উপর ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতেই এই পদক্ষেপ করেছেন জয়ললিতা। তিনি দাবি করেন, এআইএডিএমকে’র মদতপুষ্ট টিভি চ্যানেল ‘জয়া টিভি’ প্রথমে ‘বিশ্বরূপমে’র স্বত্ত্ব কিনতে চেয়েছিল। ছবিটির প্রযোজক সেই প্রস্তাবে সায় না দেওয়ায় জয়ললিতার কুনজরে পড়েন কমল। এমনকী কেন্দ্রীয় অথর্মন্ত্রী পি চিদম্বরমের প্রশংসা করেও কমল জয়ার কোপে পড়েছেন বলে দাবি করেন করুণা।
অবশেষে আজ সকালে মুখ খুললেন জয়া। বললেন, “কমলহাসনের প্রতি আমার কোনও ব্যক্তিগত রোষ নেই। ‘বিশ্বরূপমে’র মুক্তি নিয়ে স্থগিতাদেশ জারি করার ক্ষেত্রেও আমার কোনও ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই।” তিনি আরও দাবি করেন, জয়াটিভি এআইএডিএমকে’র সমর্থক মাত্র। ওই টিভি চ্যানেলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁর কোনও ব্যক্তিগত যোগাযোগ নেই। তা হলে ছবিটা আটকানো হল কেন? “বিশ্বরূপমের মুক্তিতে সায় দিতে হলে আমাকে রাজ্যের ৫২৪টি সিনেমা হলে কড়া পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হত। রাজ্য জুড়ে মোতায়েন করতে হত প্রায় ৩২ হাজার পুলিশ। যা এক প্রকার অসম্ভব। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমার যা করণীয় আমি তাই করেছি।” তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে একাধিক প্রতিবেশী রাজ্যে ছবিটিকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা সমস্যা তৈরি হওয়ার কথা জানান তিনি। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরেও ওই ছবিটি দেখানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি কিন্তু বলেছেন, কোনও ছবির মুক্তির বিষয়ে রাজ্য সরকারের উচিত কেন্দ্রীয় সেন্সর বোডের্র সিদ্ধান্ত মেনে চলা। এ ব্যাপারে সিনেমাটোগ্রাফ আইন পরিমার্জনের প্রয়োজনের কথাও বলেন তিনি। তার উত্তরে জয়া বলেন, “মণীশ তিওয়ারির পরামর্শ মানতে আমি বাধ্য নই। আমার মনে হয় তামিলনাড়ু সিনেমা রেগুলেশন আইনের কথা ভুলে গিয়েছেন মণীশ।” কিছু দিন আগে তামিলনাড়ুতে ‘ডিএএম৯৯৯’ ছবিটি দেখানোর উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। সে কথা উল্লেখ করে জয়া মনে করিয়ে দেন, “ওই মামলায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। জারি থেকেছিল রাজ্য সরকারের স্থগিতাদেশ।” ‘বিশ্বরূপমে’র ক্ষেত্রে কী চায় রাজ্য সরকার? জয়ার প্রস্তাব, কমলহাসন সংখ্যালঘু নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসুন। তাঁদের ছবিটি দেখান। আপত্তিকর অংশ বাদ দিন। তা হলেই সমস্যা থাকবে না। এই সব ক’টা কাজই গত কাল অবশ্য করেছিলেন কমল। রাজ্য সরকার তত ক্ষণে হাইকোর্টে চলে গিয়েছিল। কিছুটা আক্ষেপের সুরে জয়া বলেন, প্রথমেই যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ছবিটি দেখানোর ব্যবস্থা করতেন কমল, তা হলে হয়তো এড়ানো যেত এই পরিস্থিতি। বিধায়ক এম এইচ জাওয়াহিরুল্লা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য সমর্থন করে বলেছেন, ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হলে তিনি আরও ২৩টি সংগঠনকে নিয়ে বৈঠকে যেতে রাজি।
অনেকখানি নরম হয়ে গিয়েছেন কমলও। বলেছেন, “কাল রাগের মাথায় দেশ ছাড়ার কথা বলেছিলাম। তার মানেই সেটা করব, এমন নয়। তবে আবারও যদি এমন হয়, তখন সত্যিই চলে যাওয়ার কথা ভাবতে হবে।” তবে এখনও তিনি দাবি করছেন, তাঁর ছবি কোনও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়। কিছু খারাপ মানুষের বিরুদ্ধে। “জঙ্গিদের তো আর ভাল লোক বলে দেখাতে পারি না!” কমলের পাশে দাঁড়িয়েছে বলিউড। সলমন খান, অক্ষয় কুমার থেকে কর্ণ জোহর, সকলে টুইট করছেন।
তবে বেশ কিছুটা আর্থিক ক্ষতি হয়েই গেল, যেটা কতটা পূরণ করা যাবে, সেটা স্পষ্ট নয়। কমল দাবি করছেন, মুক্তি পেতে দেরির কারণে ৩০-৬০ কোটি ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। মণি রত্নমের ‘কডল’ ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে কাল। এর জেরেও ঘা খেতে পারে ‘বিশ্বরূপম’-এর আয়। ফিল্মি ব্যবসা বিশেষজ্ঞ কোমল নাহাতার মতে, “কমলের মূল ব্যবসা দক্ষিণে। সেখানেই এ বার মার খেলেন তিনি। তার উপরে মণির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় গোটা দেশ থেকে বড়জোর ১৫০ কোটি আয় হতে পারে কমলের।” |