মজা করে কেউ বলছেন, লুচি-ছোলার ডালের সঙ্গে চানা-বাটোরার বিয়ে। কেউ বলছেন, চিংড়ি মালাইকারির সঙ্গে বাটার চিকেনের।
বরের বন্ধু, প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা বলছেন, এটা ‘কালচার’ আর ‘এন্টারটেনমেন্ট’-এর বিয়ে।
বাঙালি কনে, পঞ্জাবি বর। কোয়েল মল্লিক আর নিসপাল রানে। সংস্কৃতি ও বিনোদনের নয়া গাঁটছড়া।
নতুন বছরের গোড়ায় এই বিয়েটাই এই মুহূর্তে টলিউডের একমাত্র ব্লকবাস্টার ছবি। এবং আগামী তিন দিন টলিউডের মেগা ইভেন্ট। যার শুভ সূচনাটা হয়ে গেল বৃহস্পতিবার আংটি পরানোর অনুষ্ঠান দিয়েই।
রাজারহাটে সুইসোটেলের পুলসাইডে বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলা কোয়েল আর নিসপাল পরস্পরকে আংটি পরালেন। দুই পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও ছিলেন বর ও কনের ঘনিষ্ঠ, টলিউডের বন্ধুবান্ধবরা। ছিলেন জিৎ, দেবের মতো তারকা। ছিলেন মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, মহেন্দ্র সোনি, অরিজিৎ দত্তরা। বিয়েতে থাকবেন বলে মুম্বই থেকে উড়ে এলেন পরিচালক রবি কিনাগি, সস্ত্রীক ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, সায়ন্তনী ঘোষ, ভরত কল।
বৃহস্পতিবার বিকেলে যখন নিসপালের আলিপুরের ফ্ল্যাটে পৌঁছনো গেল, তখন সেখান থেকে অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন বরের আত্মীয়স্বজনেরা। নিসপালের তখন হাত ভর্তি মেহেন্দি। “কোয়েলের ফোনটাও তুলতে পারছি না মেহেন্দির জন্য,” হাসতে হাসতে বলছিলেন তিনি। মুহুর্মুহু ফোন আসছে আর ব্ল্যাকবেরির ব্যাটারি তখনই শেষ! সোফায় পড়ে আছে টাক্সিডো আর শান্তনু গোয়েঙ্কার বানানো ড্রেস। “এখনও বুঝতে পারছি না কী পরব,” বলে উঠলেন নিসপাল। শেষমেশ শান্তনুর মেরুন কুর্তা আর কালো চুড়িদারই পরলেন। নিজে দক্ষ প্রযোজক! তা বলে নিজের বিয়েতে একটু নার্ভাস হবেন না, তা-ও কী হয়? বলে ফেললেন, “এত বড় প্রোডাকশন আগে সামলাইনি!” |
নতুন জুটি
বিয়ের আগের সন্ধ্যায় আংটি বদল অনুষ্ঠানে নিসপালের সঙ্গে। ছবি: ইন্দ্রনীল রায় |
মেগা শাদিতে মোট চারটে অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলা রিং সেরিমনি। শুক্রবার সকালে গুরুদ্বারে পঞ্জাবি মতে বিয়ে, তার পর মধ্যাহ্নভোজ। বাঙালি মতে বিয়েটা হবে শুক্রবার সন্ধেয় রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাবে। শোনা যাচ্ছে, প্রায় ১১০০ লোক নিমন্ত্রিত সেখানে। আর, শনিবার সন্ধেবেলা তাজ বেঙ্গলে রিসেপশন। এমন বৃহদাকার আয়োজন তো আর বাড়ির লোকেদের দিয়ে হয় না! তাই পুরোদস্তুর মাঠে নেমেছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। রয়েছে আলাদা পি-আর সংস্থাও। রঞ্জিত মল্লিক ক’দিন আগেই বলছিলেন, “সবাই যা ব্যস্ত, সময়েরও অভাব! সাবেকি ঢঙের ঘরোয়া অনুষ্ঠান এখন আর করা সম্ভব হয় না!” কী করেই বা হবে? আগেই তো বলেছি, এটা টলিউডের মেগা ইভেন্ট! পাঁচ বছর প্রেম-পর্বের পর নিসপালের ঘরণী হতে চলেছেন কোয়েল। ‘শুভদৃষ্টি’ বা ‘বর আসবে এক্ষুনি’-র সেট নয়, নায়িকার সত্যিকার বিয়ে!
রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের গুরুদ্বারেও তাই সাজ-সাজ রব। শেষ মুহূর্তের প্যান্ডেল বাঁধার কাজ চলছে। রয়েছে মিডিয়া নো এন্ট্রি-র কড়া সতর্কতা। গুরুদ্বারে কাজ করা কর্তাব্যক্তিরা এক বাক্যে বললেন, এত হাই-প্রোফাইল বিয়ে এ শহরে অনেক দিন দেখেননি তাঁরা। রানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শুক্রবার সকাল সাড়ে ন’টায় বারাত বেরোবে আলিপুর থেকে। পুরো নিয়ম মেনে কৃপাণ নিয়েই বেরোবেন রানে। থাকবেন টালিগঞ্জের নামীদামি সব তারকা। জিৎ আর দেব থাকবেন বারাতের সঙ্গেই। ওঁরা কি নাচবেনও? “নাচবে কি না বলতে পারছি না। তবে থাকবে বারাতে এটুকু জানি,” বলছেন মহেন্দ্র সোনি।
উৎসবের কাউন্টডাউনটা শুরু হয়ে গেল বৃহস্পতিবারের সন্ধে থেকে। সুইসোটেলে নিরাপত্তার কড়াকড়ি দেখার মতো। বর-কনের বাড়ির লোকজনদেরও মোবাইল-ক্যামেরায় ছবি তুলতে বারণ করছিলেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। মিডিয়ার প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ। বহু কষ্টে রক্ষীদের বাধা ঠেলে এক রকম গায়ের জোরে ঢুকে পড়লাম। দেখলাম, দেব-ও ঢোকার সময় কড়াকড়ির গেরোয় পড়লেন!
রাত পৌনে দশটার সাদা মার্সিডিজ চড়ে মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে কোয়েল এসে পৌঁছলেন। লাল জমিতে চওড়া সোনালি ডিজাইনার পাড়, গলায় নেকলেস। দারুণ দেখাচ্ছিল কোয়েলকে! রাত অবধি মহাসমারোহে অনুষ্ঠান চলল। ‘রিং সেরিমনি’ দেখতে দেখতে ‘জিকো’ নামে খ্যাত জিৎ-কোয়েল জুটির নায়ক জিৎ বলছেন, “মনে পড়ে যাচ্ছে, আজ থেকে দু’বছর আগে আমার বিয়ের সময় ঠিক এই রকম হয়েছিল। কোয়েল, রঞ্জিতদা দু’জনেই এমনিতে খুব টেনশনে থাকে। কিন্তু টেনশনের কোনও কারণ নেই। রানে শান্ত ভাবে সব ম্যানেজ করবে। আমার তো কোয়েল আর রানে দু’জনকেই বেশ রিল্যাক্সড লাগছে।”
টালিগঞ্জের নতুন ‘সাত পাকে বাঁধা’ প্রথম দিন থেকেই সুপারহিট। |