অস্ত্রোপচারের পরে তাঁরা এখন ‘অন্ধকারে।’
নিছকই হাঁচি-কাশিপেট ব্যাথার উপসর্গ নিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার আওতায় চিকিৎসা করাতে বহরমপুরের কাছেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলেন স্থানীয় নসিপুর গ্রামের জনা কয়েক গ্রামবাসী। অভিযোগ, সামান্য চিকিৎসার পরিবর্তে প্রায় জোর করেই তাঁদের চোখে ‘ছানি-কাটা’ হয়। তাকপর থেকেই দৃষ্টি হারিয়েছেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁরা। তবে নসিপুর গ্রামের ওই ছ-দন বাসত্বিকই দৃষ্টি হারিয়েছেন কিনা সে ব্যাপারে পরিস্কার নন চিকিৎসকেরা। আপাতত তাঁদের ঠিকানা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। তবে সেকানকার চিকিৎসকেরা জানান, এখনও স্পষ্ট নয়, ওই গ্রামবাসীরা দৃষ্টি হারিয়েছেন কিনা। হাসপাতালের সুপার কাজলকৃষ্ণ বণিক বলেন, “ওঁদের ৪৮ ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তাদের চোখের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হবে। তার পরেই বলা সম্ভব কী হয়েছে।”
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির অবশ্য জানান, পেটে ব্যথা, বুকে কফ ইস্তক বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করাতে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার আওতায় ওই ৬ জন গিয়েছিলেন একটি বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে। তিনি বলেন, “সেখানে জোর করে চোখের ছানি কাটা হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অপারেশনের আগে ও পরে ওই রোগীদের কি ধরণের চিকিৎসা হয়েছে তার সমস্ত নথিপত্র থানায় জমি দেওয়ার জন্য ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” |
বুধবার সকালে, পেটে ব্যথা-শ্বাসকষ্ট-কাশি কিংবা নিছকই জ্বর জ্বর ভাব নিয়ে মুর্শিদাবাদ পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নসিপুর এলাকার ছয় গ্রামবাসী বহরমপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। নসিপুরের ওই গ্রাবাসীরা জানান, স্বচ্ছায় নয়। তাঁদের প্রায় ‘জোর করেই’ ওখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে চোখ পরীক্ষা না করেই তাঁদের ছানি কাটা হয়।
বহরমপুরের ওই নার্সিংহোম গত ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি দু’দিনে ছ-জনের ডান চোখে অস্ত্রোপচার করে। ২৮ জানুয়ারি চোখের ব্যান্ডেজ খোলার পর থেকেই তাঁরা ডান চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। মুর্শিদাবাদ পুর-এলাকার যে ৬ জনের চোখের ছানা কাটা হয়েছে, তাঁরা হলেন শচীরানি চৌধুরী, পার্বতী মণ্ডল, ফুলিয়া মণ্ডল, ফুলকুমারি মণ্ডল, দুলালি চৌধুরী ও হরেন চৌধুরী।
ওই বেসরকারি হাসপাতালের পক্ষে আর এম রঞ্জিৎ বলেন, “কোনও দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে ওঁরা এখানে এসেছিলেন কিনা জানিনা। তবে ওঁদের ছানি অস্ত্রোপচার ঠিকঠাকই হয়েছে। ওঁরা অযথা আতঙ্কে ভুগছেন।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অজয় চক্রবর্তী অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, “প্রয়োজনে মেডিক্যাল বোর্ড ও তদন্ত কমিটি গড়া হবে। বেসরকারি ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও গাফিলতি থাকলে প্রয়োজনে লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে।”
পেশায় সব্জি বিক্রেতা পার্বতী বলেন, “২৫ জানুয়ারি গাড়ি চড়ে ৪ জন আমাদের এলাকায় আসেন। রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার আওতায় যাঁরা রয়েছে, তাঁদের বিনামূল্যে চিকিৎসা করানো হবে বলে জানানো হয়। তখন এলাকার অনেকেই ভিড় করে কারও পেট ব্যথা, কারও কাশি, শ্বাসকষ্টে ভুগছে শুনে তাঁরা তখন ‘হাসপাতালে সব ধরণের চিকিৎসক রয়েছে, হাসপাতালে গেলেই সমস্ত চিকিৎসা হবে’ বলে জানিয়েছিলেন। সেই মত নাম-ঠিকানাও লিখে নেন। পরের দিনই গাড়ি করে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।”
মানিক চৌধুরী বলেন, “ভীষণ কাশি হচ্ছে বলে আমিও হাসপাতালে যাই। হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বেশ কিছু কাগজপত্রে টিপ সই দিয়ে নেয়। এর পরে চোখে ড্রপ দিয়ে বলে চোখের ছানি কাটা হবে। কিন্তু আমি চোখে ভাল দেখতে পাই। কোনও সমস্যা নেই। তা সত্ত্বেও জোর করে চোখের ছানি কাটা হবে বলে ৮-১০ জন ঘাড় ধরে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানোর চেষ্টা করে। তখন আমি হাসপাতালের লোকজনের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে দিই। এর পরে আমি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসি।”
স্থানীয় যুবক বাবুলাল চৌধুরী, বিকাশ মণ্ডলদের কথায়, “এদিন ফের চার জনের একটি দল গাড়ি করে এলাকায় আসে রোগী ধরার জন্য। তখনই পাড়ার মহিলারা তাদের ঘিরে ধরে। বেগতিক দেখে ওরা পালিয়ে যায়। গাড়ি-সহ চালককে আটকে রেখে মুর্শিদাবাদ থানায় জানানো হলে পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়।” |