আর্সেনিক-দূষণ মোকাবিলা ও নাগরিকদের পরিশুদ্ধ পানীয় জল দিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়ে কলকাতা ও হাওড়া পুরসভার আধিকারিকদের আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার এই নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে পৃথক ভাবে কলকাতা ও হাওড়ার ২৫টি এলাকার জলের নমুনা পরীক্ষা করে আর্সেনিক নিয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
কলকাতার এক বিস্তীর্ণ অংশের মানুষের কাছে পুরসভার সরবরাহ করা পরিশোধিত পানীয় জল পৌঁছয় না। তাঁরা মাটির নীচ থেকে তোলা জল খান। শহরের দক্ষিণাংশে অনেক জায়গাতেই সেই জলে আর্সেনিক মিলেছে। কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের পানীয় জলে আর্সেনিক-দূষণ নিয়ে ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হাইকোর্টে একটি মামলা করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তার প্রেক্ষিতে গত ৫ জুলাই শুনানির দিন হাইকোর্ট কলকাতা ও হাওড়া পুরসভাকে একটি হলফনামা দাখিল করতে বলে। |
এ দিন কলকাতা পুরসভার আইনজীবী অলোক ঘোষ সেই হলফনামা পেশ করেন। তাতে পুরসভার অন্তর্গত কিছু এলাকায় পানীয় জলে আর্সেনিক আছে বলে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। তবে আইনজীবী দেবু মুখোপাধ্যায় হাওড়া পুরসভার হলফনামা পেশ করলেও কোনও রিপোর্ট দিতে পারেননি। সুভাষবাবু জানান, বর্তমানে প্রায় দু’কোটি ৬৪ লক্ষ মানুষ আর্সেনিক-দূষণের বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে, যা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৬ শতাংশ। এত নাগরিক বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকায় বিষয়টি নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে আদালতও।
কী বলেছে হাইকোর্ট? বুধবার বিচারপতিরা বলেন, যে আধিকারিকেরা জলের নমুনা সংগ্রহ করে আর্সেনিক-দূষণ পরীক্ষা করেন, তাঁদের যাবতীয় রিপোর্ট ও নথি নিয়ে হাজির হতে হবে। তাঁদের কাছ থেকে আদালত জানতে চাইবে
১) কী ভাবে জলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়?
২) কত দিন পর পর নমুনা সংগ্রহ করা হয়?
৩) কোথা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়?
৪) নমুনা কোথায় পরীক্ষা করা হয়?
৫) কী ভাবে পরীক্ষা করা হয়?
৬) পরীক্ষায় আর্সেনিকের মিললে তা নিরসনে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়?
একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে হাওড়া পুরসভাকেও। এ ছাড়াও, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে কলকাতা ও হাওড়ার ২৫টি করে এলাকা থেকে পানীয় জলের নমুনা সংগ্রহ করে আগামী সোমবার আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। সে দিনই কলকাতা পুরসভার পদস্থ আধিকারিকেরা আদালতে হাজির হবেন।
এ দিন হলফনামা পেশ করে কলকাতা পুরসভা জানিয়েছে, আর্সেনিক-দূষণ নিয়ন্ত্রণে তারা একটি টাস্ক ফোর্স গড়েছে। একটি কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারও তৈরি করা হয়েছে। তবে সেখানে উন্নত মানের যন্ত্রপাতি ও লোকবল বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুরসভা। |