মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে জলপাইগুড়ি তরুণী সীমা দাসকে খুনের অভিযোগে তাঁর প্রেমিককে গ্রেফতার করল পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে শহরের জয়ন্তীপাড়া থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম সুভাষ বর্মন। ২২ বছরের ওই যুবক দিনমজুরের কাজ করে। তার বাড়ি ওই এলাকাতেই। দীর্ঘদিন ধরে সীমার সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয় সুভাষের। সীমা তা মেনে নেবে না বলে জানিয়ে দেয়। তার জেরেই সীমাকে গলা টিপে সুভাষ খুন করে বলে পুলিশের দাবি। বুধবার জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে তোলা হলে তাকে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “ঘটনার সময় দু’জনের মোবাইল একই জায়গায় অবস্থান করছিল। সুভাষকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সে অপরাধ স্বীকার করেছে। তদন্তের জন্যে ধৃতকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ জানুয়ারি সকালে জলপাইগুড়ি শহরে করলা নদীর পাড় থেকে এক কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পরে পুলিশ জানতে পারে তার নাম সীমা দাস। সে শহরের মহামায়াপাড়ার বাসিন্দা ছিল। ২৫ জানুয়ারি সীমার মা নমিতা দেবী জলপাইগুড়ির কোতোয়ালি থানায় মেয়েকে খুন করা হয়েছে সন্দেহ করে অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার তদন্তে নেমে জলপাইগুড়ি থানার আইসি অচিন্ত্য গুপ্ত সহ পুলিশ অফিসাররা মোবাইলের সাহায্য নেন। ওই দিন মোবাইল ফোনে সীমার যাদের কথা হয়েছিল তার একটি তালিকা তৈরি করা হয়। সেখান থেকেই সুভাষের মোবাইল ফোনের হদিশ পাওয়া যায়। তদন্তকারী অফিসাররা জানতে পারেন, সেদিন সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সীমার মোবাইল এবং সুভাষের মোবাইল ফোন করলা নদীর বাঁধে ছিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে পুলিশ জানতে পারে, রাত ৯টা সাড়ে ৯টার মধ্যে সীমাকে খুন করা হয়েছিল। তাতেই সুভাষই খুন করেছে বলে সন্দেহ করে পুলিশ। এর পরেই সুভাষকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, সুভাষের সঙ্গে সীমার পরিচয় অনেক দিনের। সুভাষের এক বন্ধুর বোনের বান্ধবী ছিল সীমা। সে সূত্র ধরেই সুভাষের সঙ্গে আলাপ হয় সীমার। ইতিমধ্যে সুভাষ কাজ নিয়ে কেরালায় চলে যায়। মাস দেড়েক আগে সে এলাকায় ফিরে আসে। তারপর থেকে আবার দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। ঘটনার দিন সুভাষ মোবাইল ফোনে সীমাকে ডেকে পাঠায়। তাদের পাণ্ডাপাড়া, নয়াবস্তি এলাকায় ঘুরতে দেখা গিয়েছে বলেও পুলিশ জানায়। তার পর তারা করলা নদীর বাঁধে যায়। সেখানে সীমা সুভাষকে বিয়ে করার জন্যে চাপ দেয়। সুভাষ রাজি হয়নি। তার অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়েছে বলে সীমাকে জানায় সুভাষ। তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে বচসা শুরু হয়। চিৎকার করে তাদের সম্পর্কের কথা সবাইকে জানিয়ে দেবে বলে সুভাষকে হুমকি দেয় সীমা। সেই সময় সীমার গলা টিপে সুভাষ তাকে খুন করে পুলিশ জানতে পেরেছে। |