কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টির শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলনের জেরে দু’দিন ধরে একটি তেল সরবরাহকারী সংস্থার পরিষেবা পুরোপুরি ব্যহত হল। মঙ্গলবার থেকে শিলিগুড়ির রাঙাপানিতে ওই তেল সরবরাহকারী সংস্থা নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেডের গেট অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, প্রকল্পের কাজের সময় জমি অধিগ্রহণ করে বাসিন্দাদের কাজের আশ্বাস দেওয়া হয়। তা পালন করা হয়নি। পরিস্থিতির জেরে, কারখানার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দেখভালের জন্য একই কর্মীকে ৪৮ ঘন্টার বেশি সময় ধরে কাজ করতে হয়েছে। কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, কারখানায় কেরোসিন, পেট্রোল, ডিজেল মজুত রয়েছে। তাতে নিরাপত্তার ঘাটতি হলে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শেষপর্যন্ত বুধবার রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।ফাঁসিদেওয়ার বিডিও বীরুপাক্ষ মৈত্র জানান, এদিন বিডিও অফিসে ত্রিপাক্ষিক আলোচনা হয়। তার পরেই অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। বিডিও বলেন, “একটি আট সদস্যের কমিটি তৈরি করা হয়েছে। যাতে ভূমিহারা পরিবারের সদস্যরা কাজ পান তা দেখা হবে। তেল সরবরাহকারী সংস্থা দীর্ঘসময় বন্ধ রাখা ঠিক নয়।” কেপিপি’র নেতা অতুল রায় দাবি করেন, বেশ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন মিলে ওই আন্দোলন করা হচ্ছে। |
নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেডের সামনে
বিক্ষোভ। বুধবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক। |
তিনি বলেন, “যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছ তাঁরা কাজ পাচ্ছেন না। অথচ বাইরের থেকে বেশ কিছু নিয়োগ করা হয়েছে। আমরা বার কয়েক বিষয়টি নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এবারে একটি কমিটি গঠন করে কাজের আশ্বাস দেওয়া হয়।” ত্রিপাক্ষিক আলোচনায় ছিলেন ফাঁসিদেওয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রণবেশ মণ্ডল।
প্রশাসন সূত্রের খবর, নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেডের শিলিগুড়ি টার্মিনাল থেকে উত্তরবঙ্গের ছয় জেলা এবং দক্ষিণের কয়েকটি জেলাতেও পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন সরবরাহ করা হয়। ট্যাঙ্কারের সঙ্গে ট্রেনেও এখান থেকে তেল সরবরাহ করা হয়। ২০০৩ সালে ওই প্রকল্পে ১০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রায় ২৮০ জন কৃষক প্রকল্পের জন্য জমি দেন। ১ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা বিঘে হিসেবে সংস্থার তরফে কৃষকদের হাতে টাকা তুলে দেওয়া হয়। কৃষকদের একাংশের দাবি, ওই সময় প্রশাসন ও সংস্থার তরফে জমি হারা প্রত্যেকটি পরিবারের এক জন করে সদস্যকে টার্মিনালে কাজের আশ্বাস দেওয়া হয়। সংস্থা চালু হওয়ার দুই বছরের মধ্যে প্রথমদিকে অস্থায়ী ভাবে কৃষকদের কাজ দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে ৮২টি পরিবারের কাউকে কোনও কাজে নিয়োগ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ কেপিপি’র সহযোগিতায় নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড ডেইলি বেসিস অ্যান্ড মান্থলি ওয়ার্কাস ইউনিয়ন তৈরি করে আন্দোলনে নামেন। সংগঠনের সভাপতি সুরেন রায়, সদস্য খগেশ্বর সিংহ, জয়দেব বর্মন’রা অভিযোগ করেন, তেল ওঠানো-নামানোর কাজ, নিরাপত্তা রক্ষী সহ বিভিন্ন কাজে ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগ হচ্ছে ওই সংস্থায়। সেখানে জমি হারাদের না নিয়ে খড়িবাড়ি, বাতাসী থেকে লোক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। খগেশ্বরবাবু বলেন, “জমি অধিগ্রহণের সময় কিছু টাকা দেওয়া হয়। চাকরি’র আশ্বাস দেওয়া হয়। চাকরি পাইনি। খুব কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে। তাই আন্দোলন শুরু করেছি।” সংস্থার আধিকারিকরা এদিন গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সিনিয়র ম্যানেজার সুব্রত দাস বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। |