মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে অনেক বার পাহাড়ে এসেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। কোনও বারই নিরাপত্তার বিধি নিষেধ মানেননি তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি থেকে পাইলট এগিয়ে চলে গেলেও হঠাৎই গাড়ি থামিয়ে তিনি নেমে পড়েছেন। ঢুকে পড়েছেন কোনও চায়ের দোকানে। ফলে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সময়ে কী ভাবে দু’ধারের গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হতো সেই আলোচনা শোনা গিয়েছে পাহাড়ে। এবার কার্যত বাম আমলের মতোই নিরাপত্তার লৌহজাল বিছিয়ে দেওয়া হল কালিম্পং সফরে। বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের ধারে কাছেই ঘেষতে দেওয়া হল না। অনান্য বার পাহাড়ে এলে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে গাড়ির সংখ্যা গড়পরতা ছিল ২০-২৫ টি। এবার তা বেড়ে হয় ৩৫টি গাড়ি ছিল।
বেলা ১১ টা নাগাদ যখন মুখ্যমন্ত্রী আলগাড়া বাংলোর সামনের জলাধারের পাশে প্রাতর্ভ্রমণ শুরু করেছেন, তখনই পাহাড়ি পাকদন্ডি পথে একে একে নিরাপত্তা গাড়ির সংখ্যাও বাড়তে শুরু করে। বাড়ানো হয় কনভয়ে থাকা প্রশিক্ষিত কমান্ডো সংখ্যাও। প্রশাসন সূত্রের খবর মহাকরণের নির্দেশেই মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী রওনা হওয়ার আগে ডেকে আনা হয় জেলা পুলিশের বাড়তি দুটি পাইলট। গরুবাথান পেরিয়ে সমতলে এসে পড়ার পরে কনভয়ের বহর কমে যায়।
কেন নিরাপত্তা বাড়ানো হল মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে? |
রিশপের রথে মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার ছবিটি তুলেছেন সন্দীপ পাল। |
প্রশাসন সূত্রে এবিষয়ে সরাসরি কিছু বলতে চাওয়া হয় নি। তবে গত মঙ্গলবার দার্জিলিঙের চৌরাস্তায় মোর্চা-রাজ্য সরকারের সম্পর্কের ‘ছন্দপতনের’ অব্যবহিত পরেই দাজির্লিং জুড়ে মোর্চার পোস্টার ব্যানার পড়তে শুরু করে। মঙ্গলবার রাতারাতি দার্জিলিং এবং কালিম্পঙের কিছু এলাকায় দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং সহ ডুয়ার্স তরাই বাংলার অংশ নয় বলে পোস্টার লাগিয়ে মোর্চার বিভিন্ন গণ সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী আলগাড়ার বাংলোয় থাকাকালীনই পাশের আলগাড়া বাজারও গোর্খাল্যান্ড চেয়ে পোস্টারে ছয়লাপ হয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রী যে সরকারি অতিথি নিবাসে ছিলেন, তার অদূরের রাস্তায় ইঁট দিয়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবির কথা লেখা হয় নানা জায়গায়। সে কারণেই নানা আশঙ্কা ছিল পুলিশ-প্রশাসনের।
শুধু তাই নয়, গরুবাথান সহ কয়েকটি পাহাড়ি জনপদে রাস্তার দুধারে ভিড় দেখেও এদিন মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের গতি কমেনি। তবে রিশপ, রিকিসামের মত অপেক্ষাকৃত জনবিরল কিছু এলাকায় মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি থেক নেমে পর্যটন পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেছেন। লাভা, লেলেগাঁওয়ের একাধিক গুম্ফা ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সামগ্রিক উন্নয়নের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। পর্যটন প্রসারে তাঁর চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনার কথা সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং এখন ঘিঞ্জি হয়ে গিয়েছে। তাই লামাহাটার মতো জায়গায় পর্যটন কেন্দ্র গড়েছি। এবার লাভা, রিশপে হবে। লাভার বৌদ্ধ গুম্ফা তো বিশ্বের নজর কাড়তে পারে। আমি এমন আবিষ্কার করি। আরও করব।” কিন্তু, অন্য বিষয়ে প্রশ্নের চেষ্টা করলে মুখ্যমন্ত্রীর জবাব, “না, আর কিছু আমি এখন বলব না।”
এদিন শিলিগুড়ি আসার পথে প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে কনভয়ের পথে চোখে পড়েছে ব্যতিক্রমী ছবি। গত সোমবার দার্জিলিঙের সভার আগে রিচমন্ড হিল থেকে চৌরাস্তার জনবহুল প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ হেঁটেই আসেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশে সেই পথে কোনও বাড়তি নিরাপত্তা ছিল না। সাধারণ পথচারীরাও মুখ্যমন্ত্রীর সামনে চলে আসতে পারছিলেন। যদিও বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি যে রাস্তা ধরে এগিয়েছে, তার সামনে এবং পেছনে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের সঙ্গে থাকা একাংশ প্রশাসনের আধিকারিক এবং সংবাদমাধ্যমের গাড়িগুলিকেও আটকে দেওয়া হয়। কনভয়ের সঙ্গে নুন্যতম ৩ কিলোমিটার দূরত্ব বজায় রাখা হয়। পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই এমন করা হয়েছে। নিরাপত্তার বিশেষ দায়িত্বে থাকা এসএসইউয়ের এক কর্মীর কথায়, “কলকাতায় মাঝেমধ্যে এমন হয়। তবে এখানে বাড়তি ব্যবস্থার নির্দেশ ছিল। কেন আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়।” সমতলের গরুবাথান, ডামডিমের মত মোর্চা অধ্যুষিত এলাকাতেও জেলা পুলিশের তরফে বাড়তি আয়োজন রাখা হয়।
সংবাদমাধ্যমের গাড়িগুলিকেও কেন কনভয়ের ধারে কাছে ঘেষতে দেওয়া হচ্ছে না এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আমি কিছু জানি না। এডিজি (নিরাপত্তা) জানেন।” সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে ফুলবাড়িতে এনএইচপিসি বাংলোয় পৌঁছন। বাংলোতে মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য ভিভিআইপিরা থাকলে যেখানে সংবামাধ্যম জমায়েত হয়, এ দিন সেখানে থেকেও সংবাদমাধ্যকে সরিয়ে দেওয়া হয়। |