সম্পর্কের সুসময়ে যে সেতু ছিল দু’পক্ষের ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ, সেই সেতুই এখন ভাঙনেরও নিদর্শন হয়ে রইল।
ছোট রঙ্গিত নদীর উপরে বিজনবাড়ির এই ঝুলন্ত সেতুটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার দার্জিলিংয়ের ম্যাল থেকে উদ্বোধন করেন। বুধবার তার আবার উদ্বোধন করলেন গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) প্রধান বিমল গুরুঙ্গ। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সভাপতি গুরুঙ্গ বুঝিয়ে দিলেন, জিটিএ-এর হাতে যে সব দফতর রয়েছে, তার উপর রাজ্যের ‘খবরদারি’ তাঁরা মানবেন না। তিনি বলেন, “দেড় বছর আগে সেতুটি ছিঁড়ে ৩৩ জন প্রাণ হারান। তা নতুন করে নির্মাণের কাজের তদারকি আমরা করেছি। অথচ ম্যাল চৌরাস্তা থেকে তার উদ্বোধন করেছে রাজ্য সরকার। এটা বিজনবাড়িতে এসে করা উচিত। এতে মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। তা ছাড়া, জিটিএ-এর দফতরের উপরে কারও খবরদারি মানা সম্ভব নয়।”
অথচ মঙ্গলবার ম্যাল থেকে মমতা যখন ‘রিমোটে’ এই সেতুর উদ্বোধন করেন, গুরুঙ্গ সভাতেই উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি কোনও মন্তব্য তো করেননিই, উঠেও দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু তার পরের ২৪ ঘণ্টায় মোর্চা-মমতা সম্পর্কের দ্রুত অবনতির পরে সেই সেতুই ফের উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত নেন গুরুঙ্গ। উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি তিনি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশের মঞ্চ হিসেবেও ব্যবহার করলেন। |
ম্যালের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার পরে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে হট্টগোল শুরুর পর থেকেই মোর্চা-মমতা সম্পর্কের পরিবর্তন হতে শুরু করে। দেড় বছর আগে জিটিএ তৈরি করার পরে এই প্রথম পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল। সেই সম্পর্কের ভাঙনের পরিপ্রেক্ষিতেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে সেতুটিও। ম্যালের সভাস্থলেই জিটিএ পদাধিকারীদের কয়েকজন প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন বিজনবাড়িতে না-গিয়ে এখানে সেতুর উদ্বোধন হল। তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা পাল্টা প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেতুটি ভাঙার পরে নানা মহল থেকে তদন্তের দাবি তোলা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার মোর্চা নেতাদের দিকে চেয়ে কোনও পদক্ষেপ করেনি, সেই ‘কৃতজ্ঞতা’র কথা মোর্চা ভুলছে কী করে?
তবে গোর্খাল্যান্ডের দাবির প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ মোর্চা নেতারা যখন গুরুঙ্গকে নিয়ে আলোচনায় বসেন, তখন এই সেতুর প্রসঙ্গটি ফের ওঠে। তখনই সিদ্ধান্ত হয় গুরুঙ্গ ফের সেতুর উদ্বোধন করবেন।
২০১১ সালের ২২ অক্টোবর ওই সেতুর অদূরে বিজনবাড়ি কলেজের শিলান্যাস করেছিলেন গুরুঙ্গ। ১৯৪২ সালে তৈরি সেই সেতুতে তখন এক সঙ্গে দেড় শতাধিক মোর্চা সমর্থক ওঠায় তা ছিঁড়ে যায়। পরদিনই দার্জিলিঙে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী। অভিযোগ ওঠে, পুলিশ-প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই মোর্চা ওই এলাকায় অনুষ্ঠান করেছিল। জরাজীর্ণ সেতুটিতে এক সঙ্গে বেশি মানুষ ওঠা নিষিদ্ধ জেনেও মোর্চা নেতারা সতর্ক হননি কেন, সেই প্রশ্নও ওঠে। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেন। অথচ সেতু দুর্ঘটনার পরে পুলিশ কারও বিরুদ্ধে কোনও মামলা করেনি। এই ব্যাপারে দার্জিলিং জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। |