গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আরএসপি-সিপিএম সংঘর্ষে অশান্ত হয়ে উঠেছিল বাসন্তী। যার জেরে সেচমন্ত্রী আরএসপি-র সুভাষ নস্করের বাড়িতে হামলা, বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। সুভাষবাবুর এক আত্মীয়া আগুনে পুড়ে মারা যান। তারপরেও বেশ কিছু সময় ধরে আরএসপি এবং সিপিএম সমর্থকদের লড়াইয়ে উত্তপ্ত ছিল বাসন্তী। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপাতে শরিকি বিবাদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ডাক দিলেন সিপিএম এবং আরএসপির রাজ্য নেতারা।
বুধবার দুপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের স্পোর্টস কমপ্লেক্স মাঠে জেলা বামফ্রন্ট আয়োজিত জনসভায় বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “সামনের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামফ্রন্টকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে হবে।” বামকর্মীদের প্রতি তাঁর নির্দেশ, “তৃণমূল নানা কুৎসিত মন্তব্য করছে। কিন্তু আপনারা কোনও কুৎসিত উত্তর দেবেন না। মানুষ ওদের বিচার করবেন।” সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় ও আরএসপি নেতাদের নেতৃত্বে কয়েক হাজার আরএসপি সমর্থক মিছিল করে এ দিনের জনসভায় যোগ দেন। বামফ্রন্টের দাবি, মিছিলে ছিলেন প্রায় ১৫ হাজার আরএসপি কর্মী। সিপিএম এবং আরএসপির দলীয় পতাকা পাশাপাশি উড়তে দেখে বোঝার উপায় ছিল না, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় পারস্পরিক দ্বন্দ্বে দীর্ণ ছিল দুই দল। |
উল্লেখ্য, বামফ্রন্টের জন্মলগ্ন থেকেই আরএসপি-সিপিএম সংঘর্ষে বার বার উত্তেজনা ছড়িয়েছে বাসন্তী ও গোসাবা এলাকায়। ২০০৮ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন বাসন্তী এলাকায় আরএসপি ও সিপিএমের মধ্যে সংঘর্ষে ৩ জন আরএসপি ও এক জন সিপিএম কর্মী মারা যান। নির্বাচনের পরদিন চড়াবিদ্যা পঞ্চায়েত এলাকায় তৎকালীন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্করের বাড়িতে হামলা ও বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। সুভাষবাবুর এক আত্মীয়া আগুনে পুড়ে মারা যান। তারপরেও বেশ কিছু সময় আরএসপি ও সিপিএম সমর্থকদের লড়াই চলেছে এই এলাকায়। এ বার হয়তো সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে চলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এখানে সিপিএম এবং আরএসপির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল। এখন সব মিটে গিয়েছে। এই জনসভা থেকে আমরা শপথ নিচ্ছি যে, তৃণমূলের সন্ত্রাস থেকে বাঁচতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করব।” সভার সভাপতি আরএসপি বিধায়ক ও প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে বলেন “আয়লায় বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নজর নেই। হাজার হাজার কোটি টাকা পড়ে আছে। বাঁধ নির্মাণে এখনও একটুও এগোতে পারেনি রাজ্য সরকার।”
এ দিনের সভায় বাম কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, “মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এসে দেখে যান আমরা পুলিশকে দিয়ে লোক আনাইনি। আজকের ভিড় স্বতঃস্ফূর্ত বামপন্থীদের। মঞ্চের এ মাথা থেকে ও মাথা দৌড়ে দৌড়ে মিথ্যা কথা বললেই সব সত্যি হয় না।” সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন খ্যদ্যমন্ত্রী ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন দে। সভায় হাজির না থাকলেও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ‘জোয়ান’ ছেলেদের তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করার ডাক দেন অসুস্থ রেজ্জাক মোল্লা।
সভার শেষে সুভাষ নস্করকে ২০০৮ সালের আরএসপি-সিপিএম সংঘর্ষের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “বুকে অনেক ব্যাথা, বেদনা শোক রয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের সন্ত্রাস রুখতে, মা বোনেদের ইজ্জত বাঁচাতে আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করছি। রাজ্যবাসীকে এই ভয়ঙ্কর পরিবর্তন থেকে পরিত্রাণ করাটাই আমাদের লক্ষ্য।”
এখন দেখার, এই ঐক্য থেকে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামফ্রন্ট কতটা ফায়দা তুলতে পারে? |