কেউ হাতের মোচড়ে বল পাঠাতেন সীমানার বাইরে, নিখুঁত।
কেউ গাঢ় গলায় এক ধমকে কুপোকাৎ করতেন ভিলেনকে। কেউ বা বয়সের থাবা এড়িয়ে পাক্কা পলিটিশিয়ান, রাজ্যপাট সামলেছেন দশটি বছর।
ওঁরা সব্বাই আসছেন। আর দিন কয়েকের মধ্যেই রেজিনগরের আশপাশের মাঠ-ময়দান দুপুর গড়িয়ে বিকেলের পথ ধরলেই গমগম করে উঠবেন ওঁরা। অচিরেই। অকাল ভোটযুদ্ধের আসরে ‘হেভিওয়েট’ উপনির্বাচনের সপ্তাহ তিনেক আগে তাই পলাশির প্রান্তর ঘেঁষা ভাগীরথীর দু’পাড়ের আমজনতার গুঞ্জন, ‘এ দিগড়ের আজব ভোটে এ বার হবে আজব প্রচার!’
যেখানে থাকছেন, দেশের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক আজহারউদ্দিন থেকে অভিনেতা রাজ বব্বর, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে বিমান বসু। এমনকী শতাব্দী-তাপস-চিরঞ্জীৎ-দেবশ্রীর মতো টলিউডের মেজো-সেজো তারা-রা। ২৩ ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনে রাজ্যে শাসন ক্ষমতার কোনও হেরফের হবে না। তবুও ওই প্রচার ঘিরে তিন প্রতিপক্ষের মধ্যে টানটান স্নায়ুযুদ্ধ কেন।
বেলডাঙা ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির ৩০টি এবং বেলডাঙা ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির ৮টি, ৩৮টি আসন নিয়ে রেজিনগর বিধানসভা। দল বদলের ফলে ওই ৩৮টি আসনের মধ্যে কংগ্রেসের দখলে রয়েছে ১৬টি, বামফ্রন্টের দখলে ১৫টি এবং অবশিষ্ট ৭টি রয়েছে তৃণমূলের দখলে। এ হেন রাজনৈতিক বিন্যাসের ওই বিধানসভায় এ বার ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ২ হাজার ২৩৫। |
গত নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী হুমায়ুন কবীর ৮৭৮৭টি ভোটে আরএসপি-র সিরাজুল ইসলাম মণ্ডলকে পরাজিত করেন। পট পাল্টাতে শুরু করে গত নীঁম্বের থেকে। তৃণমূলের সমর্থন তুলে নেওয়া, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার রদবদলে রাজ্য থেকে তিন মন্ত্রী। আর ঘোর মমতা-বিরোধী মুর্শিদাবাদের জেলা সভাপতি অধীর চোধুরীকে রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়ায় পাল্টা চাল দিতে মরিয়ে তৃণমূলের ‘হুমায়ুন-দখল’।
গত ১৯ নভেন্বর বিধায়কপদে ইস্তফা দিয়ে হুমায়ুন এখন তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী। ফলশ্রুতি এই উপনির্বাচন। ওই নির্বাচনে হুমায়ুন কবীর ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের সহকারি সভাধিপতি বামফ্রন্ট শরিক আরএসপি-র সিরাজুল ইসলাম মণ্ডল ও কংগ্রেসের বেলডাঙা ১ নম্বর ব্লকের সভাপতি রবিউল আলম চৌধুরী।
আসন্ন উপনির্বাচনের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে প্রাণীসম্পদ দফতরের প্রতিমন্ত্রী হুমায়ুনের রাজনৈতিক ভবিতব্যের পাশাপাশি আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে এ জেলায় তৃণমূলের ভবিষ্যতও। তাই হুমায়ুন বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে রেজিনগরে ঘাঁটি গাড়ছেন। প্রচারে আসবেন, ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, গিয়াসুদ্দিন মোল্লা, মদন মিত্র এবং তিন সাংসদ, সুলতান আহমেদ, নুরুল হাজি ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যে প্রচার করে গিয়েছেন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়।” দলীয় সূত্রে খবর, দু’টি রোডশোর একটিতে থাকবেন দুই সাংসদ তথা অভিনেতা-অভিনেত্রী তাপস পাল ও শতাব্দী রায়। আর একটিতে থাকবেন দুই বিধায়ক তথা অভিনেতা-অভিনেত্রী চিরঞ্জীৎ চক্রবর্তী-দেবশ্রী রায়।
গত বিধানসভা ভোটে ওই কেন্দ্রে বামপ্রার্থী সিরাজুল ইসলাম নামমাত্র ভোটে হেরে ছিলেন। সদ্য সমাপ্ত জঙ্গিপুর লোকসভা ভোটে রাষ্ট্রপতির পুত্র অভিজিত মুখোপাধ্যায়ের কাছে মাত্র আড়াই হাজার ভোটে হেরেছেন বামপ্রার্থী মুজাফ্ফার হোসেন। জঙ্গিপুরের ভোটপ্রচারে সিপিএম রাজ্যস্তরের কোনও নেতাকে মাঠে না নামানোর খেসারত দিতে হয়েছে বলে নির্বাচন পরবর্তী দলীয় পর্যালোচনায় মেনে নেওয়া হয়েছে। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগে ওই ভুল শুধরাতে চায় বামফ্রন্ট। জেলা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “বিমান বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্র, গৌতম দেব, ক্ষিতি গোস্বামী ও মহম্মদ সেলিম-সহ অনেক নেতানেত্রীই রেজিনগরের ভোটপ্রচারে আসছেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
আর কংগ্রেস?
অকাল ভোট নানা কারণে কংগ্রেসের কাছেও ইজ্জত ও অস্তিত্বের লড়াই। রাজ্যে কংগ্রেসের শাক্তিশালী দূর্গ হিসাবেই মুর্শিদাবাদ পরিচিত। সেই দূর্গের দলীয় বিধায়ক পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলত্যাগ করে ‘এক নম্বর শত্রু’ তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় রেলের প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর জেলা কংগ্রেসকে পঞ্চায়েত ভোটের আগেই অগ্নিপরীক্ষায় নামতে হচ্ছে। বস্তুত অধীরকে মন্ত্রী করার পাল্টা চাল দিতেই মরিয়া তৃণমূল হুমায়ুনকে ছিনিয়ে আনে কংগ্রেস থেকে।
বাকিটা? সবাই বলছেন, দেখুন না কী হয়! |